নাগরিক রিপোর্ট : বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি) নির্বাচনে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ’র মেয়র প্রার্থী দলটির নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম। দলের সবচেয়ে প্রভাবশালী এই নেতা প্রার্থী হওয়ায় বিসিসি নির্বাচন প্রতিদ্বন্দ্বিতামুলক হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। ফয়জুল করীম চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীমের মেজ ভাই।
বৃহস্পতিবার বিকেল ৪টায় চরমোনাই মাদ্রাসা মিলনায়তনে প্রার্থী মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিমের হাতে প্রতীক ‘হাতপাখা’ তুলে দেন দলের আমীর পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম। এসময় দলটির কয়েকশত নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। তারা ‘হাতপাখা-হাতপাখা শ্লোগান দিয়ে এলাকা মুখরিত করে তোলেন। প্রার্থী ঘোষনা উপলক্ষে বরিশাল নগর থেকে ইসলামী আন্দোলনের নেতাকর্মীরা মোটরসাইকেল মহড়া দিয়ে কীর্তণখোলা নদীর পূর্ব তীরের ইউনিয়ন চরমোনাইতে আসেন।
প্রার্থী ঘোষনা দেয়ার পর প্রতিক্রিয়ায় মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ ফয়জুল করীম বলেন, ‘সিটি নির্বাচন নিয়ে সরকার যদি অন্যরকম কোন চিন্তা করে থাকেন, তাহলে এখান থেকেই মসনদ থেকে সরকার উৎখাতের লড়াই শুরু হবে’। তিনি বলেন, আমি বরিশালের মেয়র হতে আসিনি, বরিশালবাসীর খাদেম (সেবক) হতে চাই। মানুষের শান্তি, সম্মান ও অধিকার রক্ষায় প্রয়োজনে নিজেকে কোরবানী করব।
আগামী ১২ জুন সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষনা দেয়ার পরই ইসলামী আন্দোলন থেকে জানানো হয়, এবার পীর পরিবার থেকে মেয়র প্রার্থী হবেন। আলোচনায় ছিলেন দুজন- সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম ও তার ছোট ভাই জেলা সভাপতি চরমোনাই ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সৈয়দ এছাহাক মোহাম্মদ আবুল খায়ের। এরমধ্যে কে প্রার্থী হবেন এনিয়ে দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং পারিবারিক পর্যায়ে দফায় দফায় বৈঠক হয়। যে কারনে অন্যান্য সিটিতে মেয়র প্রার্থী অনেক আগে ঘোষনা দেয়া হলেও নিজেদের শহরে সবশেষ প্রার্থী ঘোষনা দিলেন পীর পরিবার। ঈদের ছুটির আগে দুই ভাইয়ের ভোটার নম্বর চরমোনাই ইউনিয়ন থেকে নগরের ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের লালার দিঘিরপাড় এলাকাতে স্থানান্তর করা হয়।
দলটির বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে, দলের সর্বোচ্চ পর্যায়ের নেতা মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে প্রার্থীর করার ক্ষেত্রে বিজয়ী হওয়ার বিষয়টি বেশী গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে তাদের যুক্তি হলো- আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহ অরাজনৈতিক ব্যক্তি ও নির্বাচনী মাঠে নবীন, স্থানীয় আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী পরিবার হাসানাত আবদুল্লাহ এমপির ছেলে বর্তমান মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ মনোনয়ন না পাওয়ায় হাসানাত-সাদিক অনুসারীরা নির্বাচনী মাঠে প্রভাব দেখাবেন না, এছাড়া বিএনপি নির্বাচনে না এলে আওয়ামী বিরোধী ও ইসলামী মনোভাবা ভোটাররা চরমোনাইর প্রার্থীকে ভোট দেবেন। মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এর আগে ৩টি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল- ৫ (মহানগর-সদর) আসনে প্রার্থী হওয়ায় তিনি ভোটারদের কাছে পরিচিত মুখ। যুক্তিবাদি ও অনর্লশী বক্তা হিসাবে তার আলাদা ইমেজ রয়েছে।
প্রার্থী ঘোষণা দেয়ার আগে দলের আমীর চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করীম বলেন, বরিশাল আমাদের নিজেদের শহর। এখানে আগের মেয়ররা কি করেছেন বরিশালবাসী তা অবগত। আমাদের কাছে বরিশালবাসীর প্রত্যাশা অনেক বেশী। সব শ্রেণী-পেশার মানুষের মনের অনুভতি ও মতামত জেরে মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীমকে মেয়র প্রার্থী করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
উল্লেখ্য, মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম এর আগে ২০০১, ২০০৮ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল- ৫ (মহানগর-সদর) আসনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ছিলেন। তিনি ২০০৮ সালের নির্বাচনে ৩০ হাজার পেয়ে চমক দেখিয়েছিলেন। গত একবছরে সারাদেশে ১১টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জয় এবং বেশীরভাগ ইউনিয়ন ও রংপুর সিটিতে নৌকার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বি থাকায় ইসলামী আন্দোলনের দাবী- সারাদেশে তাদের ভোট ব্যাংক বেড়েছে।
বিসিসি নির্বাচনে চরমোনাই পীরের দল প্রথম অংশগ্রহন করে ২০১৮ সালে। তখন প্রার্থী ছিলেন দলের উপদেষ্টা ও নগরের আমানতগঞ্জ মাদ্রাসার মুহাতারিম মাওলানা ওবাইদুল হক মাহবুব। তিনি চরমোনাই পীরের বেয়াই। ভোটের দিন কেন্দ্র দখলের অভিযাগে অন্যান্য প্রার্থীদের সঙ্গে মাহবুবও সকাল ১০টায় নির্বাচন বর্জন করেছিলেন।