তেলবাহী জাহাজে বিস্ফোরন: সুগন্ধ্যা নদীর পরিবেশ ক্ষতির আশংকা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বিস্ফোরনের ২৪ ঘন্টায়ও তেলবাহি জাহাজ সাগর নন্দীনি-২ সরিয়ে না ফেলায় সেটি সুগন্ধ্যা নদীতে ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করেছে। জাহাজটিতে এখনও বিপুল পরিমান প্রেট্রোল ও ডিজেল রয়েছে। পরিবেশ অধিদপ্তর জানিয়েছে, নদীর পানিতে পেট্রোল ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মারাত্নক হতে পারে। ঝালকাঠীর সুগন্ধ্যা নদীর ওই পয়েন্টে এ নিয়ে ৩ বার নৌযানে আগুনে বিস্ফোরন ঘটে। এর মধ্যে দুই বারই সাগর নন্দিনী গ্রুপের জাহাজ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে। জানা গেছে, সাগর নন্দিনী জাহাজটির মালিক প্রভাবশালী হওয়ায় ফিটনেস না থাকলেও সেটি বিনা বাধায় চলছে। শনিবার থেকে ৩ বার বিস্ফোরিত সাগর নন্দীনি-২ এ সাবমার্সিবল পাম্প বসিয়ে তেল অপসারনের কারনে সেটিতে আগুন ধরে বিষ্ফোরন ঘটে বলে সংশ্লিস্টরা মনে করছেন। জাহাজটির ফিটনেস আছে কিনা তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে বলে জানিয়েছে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা জ্বালানী মন্ত্রনালয়ের তদন্ত টিম।

ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে সাগর নন্দিনী-২ জ্বালানী তেল বহনকারী জাহাজে দ্বিতীয় বিস্ফোরনের ঘটনায় রাতভর আগুন জ্বলছিল। রাতে বরিশাল নৌ ফায়ার সার্ভিসের অগ্নীযোদ্ধা জাহাজ এসে মঙ্গলবার ভোরে আগুন নিয়ন্ত্রনে আনে। দিনভর উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল ঘুরে ফিরে চলে গেল বিকেলে খবর আসে জাহাজটি তেল সহ ধীরে ধীরে ডুবতে শুরু করেছে।

যেকারনে ভয়াবহ বিস্ফোরন:
বিস্ফোরিত জাহাজটির ভিতরে জালানির সাথে পানি প্রবেশ করে মিশে যাচ্ছে। এতে একদিকে পরিবেশ দূষিত হচ্ছে অপর দিকে জাহাজটি পানির নিচে ডুবে যাচ্ছে। জাহাজের মালিক প্রভাবশালী এক নেতার আত্মীয় হওয়ায় ডিপো কর্তৃপক্ষের কোন নির্দেশনা মানে না বলে অভিযোগ রয়েছে। ঝালকাঠিতে এই কোম্পানীর জাহাজে জ্বালানী নিয়ে আসার পর তাদের ইচ্ছা মত তেল অপসারন করে। তাই ২০২১ সালে সাগর নন্দিনী-৩ সুগন্ধা নদীর একই স্থানে অনুরুপ দূর্ঘটনার তদন্ত রিপোর্ট আলোর মুখ দেখেনি। একাধিক সুত্রে জানা গেছে, সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি থেকে অপর জাহাজে জ্বালানী অপসারণে সাবমারসিবল পাম্প ব্যাবহার করায় স্পার্কিংয়ের মাধ্যমে এ বিস্ফোরনের ঘটনা ঘটতে পারে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেনেজ) লে. কর্নেল তাজুল ইসলাম চৌধুরী ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে মঙ্গলবার বলেন, তেলবাহী জাহাজ সাগর নন্দিনী-২ এ ৪ লাখ লিটার জ্বালানী তেল ছিল। এ অবস্থায় অপর একটি জাহাজে সেই তেল অপসারনকালে সোমবার রাতে আবারও বিস্ফোরন ঘটে। এতে জাহাজটির উপরের অংশ উড়ে গেছে। উদ্ধার করা হয়েছে ৪জনের লাশ। জাহাজটিতে ফের বিস্ফোরনের কারন হিসেবে তিনি স্টাফদের অসাবধানতাকে দায়ী করেছেন। সেখানে তারা রান্না ঘরে সিলিন্ডার পেয়েছেন। জাহাজে অগ্নিনির্বাপনের সঠিক ব্যবস্থাও ছিল না। তিনি বলেন, আমাদের ১২টি ইউনিট কাজ করে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় আগুন নিয়ন্ত্রনে আনা হয়েছে। তেল অপসারনকারী অপর জাহাজ সাগর নন্দিনী-৪ কে নিরাপদে সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এর মধ্যে ৪জন মারা যাওয়া সহ ১১ জন আহত হয়েছে। তিনি বলেন, জাহাজগুলোর ফায়ার ফাইটিং সিস্টেম খুবই দুর্বল। তিনি আশংকা করেন গ্যাস সৃস্টি হলে জাহাজে আবারও বিস্ফোরন ঘটতে পারে। এ ঘটনায় ফায়ার সার্র্ভিস বিভাগ তদন্ত কমিটি গঠন করেছে।

হুমকীতে সুগন্ধ্যার পরিবেশ:
সোমবার রাতে তৃতীয় দফায় জাহাজটিতে বিস্ফোরন ঘটলে কিছু তেল ছড়িয়ে পরে নদীর পানিতে আগুন ধরে যায় বলে জানান স্থানীয় কলেজ ছাত্র রাথিন হাওলাদার ও শান্ত দে। তারা মঙ্গলবার দুপুরে ঘটনাস্থল সংলঙ্গন মিনি পার্কে দাড়িয়ে বিষ্ফোরনের ভয়াবহ চিত্র বর্ননা করে বলেন, এই স্পটেই বার বার কেন জাহাজে বিস্ফোরন ঘটছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। তারা অভিযান-১০ এর ভয়াবহ ঘটনার কথাও বলেন। সাগর নন্দিনী-২ বিস্ফোরন ঘটে ঝালকাঠী সদর উপজেলার পোনাবালিয়া ইউনিয়নের রাজাপুর গ্রাম সংলগ্ন সুগন্ধ্যা নদীতে। ওই গ্রামের রাজ মিস্ত্রী ইয়াছিন খান বলেন, তেল নদীতে ছড়িয়ে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক এ এইচ এম রাশেদ বলেন, জাহাজটি ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। জাহাজটি তলিয়ে তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মারাত্নক অবস্থা ধারন করতে পারে। জাহাজে থাকা প্রেট্রোল কিংবা ডিজেল নদীর পানি দুষন ঘটাতে পারে। এতে জীব বৈচীত্র হুমকির মুখে পড়বে। তারা এর নমুনা পরীক্ষ নিরীক্ষা ক্ষতির মুল চিত্র বলতে পারবেন।

বিস্ফোরনের পর প্রশাসনের উদ্যোগ:
এদিকে মঙ্গলবার ঘটনাস্থল পরিদর্শনে আসা জ্বালানী ও খনিজ সচিব ড. মো: খায়রুজ্জামান বলেন, এই মূহুর্তে জাহাজটিতে থাকা ব্যাবহারে অযোগ্য জালানি কিভাবে সরিয়ে নেয়া এবং অপর জাহাজে স্থানান্তর করা জালানী কিভাবে পূনরায় ডিপোতে স্থানান্তর করা যায় তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ঘটনায় প্রথমে জেলা প্রশাসন ও পদ্মা ওয়েল কোম্পানী পৃথক দুটি, পরে দ্বিতীয় দফা বিস্ফোরনের ঘটনায় ফায়ার সার্ভিস এবং আমাদের মন্ত্রনালয়ের মাধ্যমে আরো ২টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। ১৫ কার্য দিবসের মধ্যে এ কমিটি তার প্রতিবেদন দিবে। ভোলায় সাগর নন্দিনী-২ জাহাজটি নদীতে ডুবে যাওয়ার পর এটির ফিটনেস ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান জ্বালানী সচিব।

এব্যপারে বরিশাল নৌ পুলিশের পুলিশ সুপার মো. কফিল উদ্দিন বলেন, দুর্ঘটনায় ৯ জন পুলিশ আহত হয়ে ঝালকাঠি বরিশালে চিকিৎসাধীন আছে। তার মধ্যে ২জনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাদের ঢাকায় স্থানান্তর করা হয়েছে। তারা এ ঘটনায় জাহাজ মালিকদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নিবেন।
প্রসঙ্গত, গত শনিবার দুপুরে ঝালকাঠির সুগন্ধা নদীতে পদ্মা অয়েল কোম্পানির জ্বালানি তেলবাহী ট্যংকার সাগর নন্দিনী-২ বিস্ফোরিত হয়ে আগুন ধরে যায়। এতে ৪ জন নিহত এবং ৫ জন আহত হয়। পরে সোমবার বিকেলে এবং রাতে ২ দফায় বিষ্ফোরন ঘটলে ৯জন পুলিশ আহত হন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *