বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়: আন্দোলন দমাতে হলে ঢুকে হামলা!

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) শিক্ষার্থীরা গত ৩১ জুলাই তাদের নানাবিধ সমস্যার ১৭ দফা দাবী জানিয়ে উপাচার্যকে আল্টিমেটাম দেন। ছাত্র-ছাত্রীদের এই দাবীর সঙ্গে জড়িত ছিল ছাত্রলীগের একাংশও। ১৭ দফা দাবী তোলার মাত্র ৫ দিনের মাথায় দুটি হলে রাতের আধারে হামলা চালিয়েছে হেলমেটধারীরা। ছাত্রলীগের দুই পক্ষের ওই সংঘর্ষের জেরে ছাত্রবাস এখন পাহাড়া দিচ্ছে পুলিশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক সুত্র দাবী করেছে, শনিবার রাতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ঈন্ধনে দুটি হলে অতর্কিত হামলায় জড়িত হেলমেট বাহিনী ছাত্রবাসেই অবস্থান করছে। সম্প্রতি শিক্ষার্থীদের উত্থাপিত ১৭ দফা দাবীর আন্দোলন দমানো আর আধিপত্ত দখলই এই হামলার অন্যতম কারন।

গত শনিবার মধ্যরাতে বিদায়ী সিটি মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর অনুসারীরা প্রতিপক্ষ পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপির অনুসারী ছাত্রলীগ কর্মীদের উপর হামলার পর দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হয়েছে ১২জন। বর্তমানে সাদিক আবদুল্লাহ অনুসারীদের নেতৃত্ব দেন মুবাশ্বির রিদম ও তানজিম মঞ্জু এবং প্রতিমন্ত্রী অনুসারীদের নেতৃত্বে রক্তিম হাসান ও মুয়ীদুর রহমান বাকি।

একইভাবে চলতি বছরের ২ এপ্রিল শের বাংলা হলে হলে গভীর রাতে ছাত্রলীগের তিন কর্মীকে মারধরের জেরে ছাত্রলীগের দুই কর্মীকে প্রথমে হলের একটি কক্ষে দুই ঘণ্টা আটকে রেখে এবং হলের সামনের মাঠে নিয়ে নির্যাতন করা হয়। গত ২৪ জানুয়ারী হেলমেট বাহিনী ছাত্রলীগ কর্মী মহিউদ্দিন শিফাতের উপর হামলা চালায়।

২০২২ সালের ২৩ আগস্ট রাতে শের বাংলা হলে সিট দখলকে কেন্দ্র করে দুই শিক্ষার্থীকে ছাত্রলীগ কর্মীরা মারধর করেন। ১৪ আগস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগ কর্মী রাব্বী খানকে তুলে নিয়ে নির্যাতনের অভিযোগ উঠে।
শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি হামলার শিকার বঙ্গবন্ধু হলের রসায়ন বিভাগের ছাত্র সাইমুন ইসলাম বলেন, আমরা কিছুদিন আগে শিক্ষার্থীদের পক্ষে ১৭ দফা দাবী জানিয়েছি। উপাচার্য এই দাবী বাস্তবায়ন নিয়ে চাপের মুখে পরেন। তাই আমাদের সরিয়ে দেয়ার জন্যই প্রশাসন এই হামলায় ইন্ধন দিয়েছে।

হামলার শিকার মুয়ীদুর রহমান বাকি সাংবাদিকদের বলেন, গত ৩১ জুলাই তারা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ১৭ দফা দাবী জানাই। যেকারনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ক্ষিপ্ত হয়ে আমাদের প্রতিপক্ষকে দিয়ে এ হামলা করিয়েছে। তিনি বলেন, ১৭ দফা দাবীর জেরে সাধারন শিক্ষার্থীদের উপর চাপ দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এর দায় প্রশাসন এড়াতে পারে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ কর্মী অমিত হাসান রক্তিম বলেন, শনিবার রাতে বহিরাগতদের হামলার শিকার হয়েছে তার সমর্থকরা। তারা হেলমেট বাহিনীর হামালার জন্য প্রস্তুতি ছিলেন না। অমিত বলেন, আমরা এ ঘটনার বিচার চাই। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে অনেকগুলো ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে, অথচ তা আলোর মুখ দেখেনি। সাধারন শিক্ষার্থীরা মনে করে ১৭ দফা দাবীতোলার মাত্র ২ দিনের মাথায় এই হামলা একই সুত্রে গাথা- এ প্রসঙ্গে রক্তিম বলেন, সাধারন শিক্ষার্থী এবং আমাদের মনে করার মধ্যে কোন পার্থক্য নেই।

জানতে চাইলে শেরে বাংলা হলের প্রভোস্ট আবু জাফর মিয়া বলেন, হামলার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। হলে পুলিশ মোতায়েন আছে। তারা হলে তল্লাশীও চালিয়েছেন।

এব্যাপারে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: খোরশেদ আলম আজকের পত্রিকাকে বলেন, শনিবার রাতে হেলমেট বাহিনী অজ্ঞতদের হলে হামলার ঘটনায় হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক হারুন অর রশিদকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। রোববার রাতে বহিরাগত আছে কি না তা খতিয়ে দেখতে দুই হলে আবাসিক শিক্ষকরা তল্লাশী চালিয়েছেন। এমনকি রাতে হল দুটিতে ৮ থেকে ১০ জন পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।

এর আগেও হেলমেটধারীদের হামলার শিকার হন সিফাত নামে এক ছাত্রলীগ কর্মী। শৃংখলা কমিটিতে ওই তদন্ত কমিটিতে উঠবে। শেরে বাংলা হলে অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনায়ও তদন্ত কমিটি হয়েছিল। তিনি মনে করেন, তদন্ত কমিটিগুলো কাজ করে যাচ্ছে। তবে হলে সংঘাতের কারন কেবল ক্যাম্পাস কেন্দ্রীক নয়, এখানে দুটি পক্ষ আছে। গত ৩১ জুলাই দাবী আদায়ের জেরে এই হামলা হয়েছে কি না – এ প্রসঙ্গে প্রক্টর বলেন, ১৭ দফার সঙ্গে এই হামলার কোন সম্পর্ক নেই। ১৭ দফা দাবী তোলায় ৩ ছাত্রকে চাপ প্রয়োগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেটা তো আইনশৃংখলাবাহিনী দিতেই পারে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *