সৈয়দ জুয়েল:
বরিশালের আলোকিত রাজনীতিবিদ মনীষা চক্রবর্তী। গরীবের ডাক্তার নামেই যিনি পরিচিত। ৩৪ তম বিসিএসে স্বাস্থ্য ক্যাডারে সহকারী সার্জন পদে নিয়োগও পেয়েছিলেন বাসদের এই নেত্রী। তবে রাজনীতিতে এসে মানুষের সেবা বেশি করার জন্যই সহকারী সার্জন পদে চাকুরী জীবনে না ঢুকে, জড়িয়েছেন রাজনীতিতে। ভোগের রাজনীতির মাঠে ত্যাগের এই নিদর্শন মনীষা চক্রবর্তী।
বরিশালের মানুষের অধিকারের কথা নিয়ে যে হাতটি সবার আগে ওঠে, সেটি বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দল বাসদের বরিশাল জেলা সদস্য সচিব- মনীষা চক্রবর্তী। মানবতার এই ফেরিওয়ালা এখনো অসহায়, গরীবের চিকিৎসা করেন সম্পূর্ণ ফ্রি-তে। রাজনীতিতে কেন আসা, কেমন বরিশাল দেখতে চান, নগরীর সমস্য সমাধানে কি কি পদক্ষেপ জরুরী, আগামী নির্বাচন নিয়ে ভাবনা সহ নানা বিষয়ে কথা বলেছেন ডেইলি নাগরিকের সঙ্গে। সাক্ষাতকারটি নিয়েছেন আমাদের ডেইলি নাগরিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ জুয়েল।
ডেইলি নাগরিক:
রাজনীতিতে কত সালে? এক্ষেত্রে কোন নির্যাতন সইতে হয়েছে কি না!
নাগরিক:
মনীষা চক্রবর্তী: ২০১০ সালে রাজনীতিতে আসা আমার। আর রাজনীতিতে এসে হামলা, মামলার স্বীকার হয়েছি বহুবার। এখনো মামলা রয়েছে।
নাগরিক:
আপনি কেমন বরিশাল দেখতে চান?
মনীষা: এ শহর পর্যটন নগরীর জন্য যথেষ্ট। শিক্ষায় এগিয়ে আমরা। এই এলাকাটি নদী মাতৃক। এটিকে কাজে লাগালে প্রাচ্যের যে হারিয়ে যাওয়া নগরী, তা ফিরে আসবে বলে বিশ্বাস করি।
নাগরিক:
ভোলার গ্যাস নিয়ে আপনারা আন্দোলন করছেন। এই আন্দোলন নিয়ে বিস্তারিত একটু বলুন।
মনীষা চক্রবর্তী: ভোলার গ্যাস নিয়ে নাগরিক আন্দোলনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেছে। মাসব্যাপী স্বাক্ষর গ্রহন চলবে। প্রয়োজন হলে হরতালেও যাব আমরা। আমাদের সাফ কথা বৃহত্তর বরিশালে আগে পর্যাপ্ত গ্যাস মজুদ রাখতে হবে, তারপর অন্যান্য স্থানে।
নাগরিক:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনে হোল্ডিং ট্যাক্স অনেক বেড়েছে, এটি নিয়ে আপনার দলের ভুমিকা কি ছিলো?
মনীষা: হোল্ডিং ট্যাক্স যেভাবে বাড়িয়েছে, এটি জনগনের জন্য বড় চাপ। এই বাড়তি ট্যাক্সের জন্য একমাত্র একটি দলই বরিশালে আন্দোলন করেছে, সেটি বাসদ।
নাগরিক:
বরিশাল নগরের সড়কে যত্রতত্র ময়লা, নেই পর্যাপ্ত ডাস্টবিন। এমন বেহাল হওয়ার কারন কি?
মনীষা: বর্জ্য ব্যাবস্থাপনার পুরো কাজটি সিটি কর্পোরেশনের। এই অবস্থার জন্য সিটি কর্পোরেশন পুরোটাই দায়ী। আমরা বর্জ্য ব্যাবস্থা নিয়ে আমরা অনেক কর্মসুচী করেছি।
নাগরিক:
আগামী জাতীয় নির্বাচনে কি বাসদ অংশ নিবে?
মনীষা: কোন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন কখনোই সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ হতে পারেনা। দেশে আগের মত নির্বাচন হলে নির্বাচন নিয়ে মানুষের আগ্রহ থাকবেনা, জবাবদিহিতাও থাকবেনা। তাই এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনে অংশ নিবেনা তার দল।
নাগরিক:
আপনি একজন চিকিৎসক। বিসিএসে সহকারী সার্জনের মত পদ পেয়েও, তা ছেড়ে রাজনীতিতে আসলেন কেন?
মনীষা: সমাজের তৃনমুল মানুষের খুব কাছ থেকে কাজ করার জন্য রাজনীতিতে এসেছি। নেতৃত্বে থাকলে অনেক কাজ করা সম্ভব হয়, যেটি শুধু চিকিৎসা পেশায় থেকে সম্ভব হয়না।
নাগরিক:
শোনা যায় এখনো আপনি রোগী দেখেন ফ্রিতে।
মনীষা: এখনো রোগী দেখি। আমার রোগীদের বড় অংশ গরীব, অসহায়, খেটে খাওয়া মানুষ। এসব মানুষরা ফ্রি চিকিৎসা পেয়ে যদি একটু ভালো থাকে, এতেই আমি খুশি।
নাগরিক:
করোনাকালীন আপনি অনেক পরিবারকে সহায়তা করেছেন। রাজপথে, বস্তিতে, ক্ষুধার্ত মানুষের পাশে থেকেছেন। সেই দু:সহ সময়ের কথা যদি কিছু বলেন-
মনীষা: বিশ হাজার পরিবারের মাঝে ছয় মাস আমরা খাদ্য সহায়তা দিয়েছি। অক্সিজেন সেবা দিয়েছি চার হাজারেরও বেশি মানুষের। এম্বুলেন্স সেবাও দিয়েছি আমরা।
নাগরিক:
বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের (বিসিসি) নতুন মেয়রের কাছে প্রত্যাশা কি?
মনীষা: জবাবদিহিতার জায়গা নিশ্চিত করতে হবে। দখল হওয়া খালগুলো দ্রুত উদ্ধার করতে হবে। পয়:নিষ্কাশন ব্যাবস্থা উন্নত করতে হবে। বিভিন্ন সংগঠন নিয়ে একটি কাউন্সিল গঠন করার পরামর্শ থাকবে, যেখানে সিটি কর্পোরেশনের নানা সমস্যা সমাধানে কাজ করবে। নগরের প্রতিটি ওয়ার্ডের তৃনমুলের মানুষের কাছ থেকে সমস্যা জেনে সেই আলোকে সিটি কর্পোরেশনের বাজেট প্রনয়ন করা জরুরী। -(সাক্ষাতকার নিয়েছেন আমাদের ডৈইলি নাগরিকের ব্যবস্থাপনা সম্পাদক সৈয়দ জুয়েল।)