বরিশালে নৌকার প্রতিপক্ষ হাফ ডজন দলীয় নেতা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বরিশালে নৌকার প্রার্থীর বিরুদ্ধে একাধিক দলীয় প্রভাবশালী নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন। মনোনপত্র জমাদানের শেষ দিনে গতকাল বৃহস্পতিবার জেলার ৬টি আসনের মধ্যে ৪টিতেই এমন তথ্য পাওয়া গেছে। এর জেরে বিভিন্ন আসনে আ’লীগের মধ্যে বিশৃংখলা দেখা দিয়েছে। পদধারী নেতারা দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে নানা মন্তব্যও করছেন। এতে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে বরিশালের স্থানীয় আ’লীগের নেতাকর্মীদের ভেতরে।

বিভাগের ২১টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদার আসন হচ্ছে বরিশাল-৫ (মহানগর ও সদর)। এ আসনে দলীয় মনোনয়ন পেয়েছেন বর্তমান এমপি জেলা আ’লীগের সভাপতি কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক শামিম। কিন্তু দলীয় এই সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে গতকাল বৃহস্পতিবার সদর আসনের এমপি পদে মনোনয়ন দাখিল করেছেন সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহ। সাদিক নগর আ’লীগের সাধারন সম্পাদক এবং প্রভাবশালী আ’লীগ নেতা আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহর পুত্র। গত ১২ জন সিটি নির্বাচনে মনোনয়ন চেয়ে ব্যার্থ হয়েছেন সাদিক। জাতীয় নির্বাচনেও তাকে মনোনয়ন না দিয়ে দল তার উপর আস্থাহীনতা স্পস্ট করলো বলে মনে করছেন আ’লীগের একাধিক নেতা।

এদিকে এই মনোনয়ন নিয়ে বরিশাল আওয়ামী লীগে বিশৃংখলা ছড়িয়ে পড়েছে। আ’লীগের পদধারীরা সাদিকের পক্ষে থাকলেও তৃনমুলে জাহিদ ফারুকের অবস্থান বেশ মজবুত। তার উপর সাদিকের চাচা মেয়র আবুল খায়ের আব্দুল্লাহ ওরফে খোকন সেরনিয়াবাত প্রকাশ্যেই এমপি জাহিদ ফারুককে সমর্থন দিয়ে চমক সৃস্টি করেছেন। কিন্তু সাদিক অনুসারীরা এবার আর ছাড় দিতে নারাজ জাহিদ ফারুককে।

বুধবার নগরীতে শান্তি সমাবেশের আড়ালে সাদিকের পক্ষে শোডাউন করে স্থানীয় আ’লীগের একাংশ। এসময় নগর আ’লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এ কে এম জাহাঙ্গীর সমাবেশে বলেন, আমাদের পাকা ফসল কেটে আর একজনে ঘরে তুলবে তা হতে দেয়া হবে না। আমরা কোন বহিরাগতকে সুযোগ দেব না। সিটি নির্বাচনে আমাদের গাধা বানিয়েছে। ওই নির্বাচনের মত আর খালি মাঠে গোল দিতে দিব না। এবার খেলা হবে। প্রশাসন ব্যবহার করে বাক্স ভরবেন, সেই সুযোগ নেই।

তবে এমপি জাহিদ ফারুক এর ঘনিষ্ঠ সহচর মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, সিটি নির্বাচনে যাকে মেয়র নির্বাচিত করা হয়েছে তিনি শেখ হাসিনার প্রার্থী। জাতীয় নির্বাচনেও জাহিদ ফারুক নৌকার প্রার্থী। অথচ এ কে এম জাহাঙ্গির দলের নগর সভাপতি হয়েও যেসব বক্তব্য দিচ্ছেন তা দল বিরোধী। এদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেয়া দরকার। সভাপতি জাহাঙ্গির জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে লাভজনক প্রতিষ্ঠানে থেকে সরকার ও প্রশাসনের বিরুদ্ধেও কথা বলছেন। মঙ্গলবার নগরে সাদিককে নিয়ে শাস্তি সমাবেশের নামে নির্বাচনী প্রচারনা করে আচারন বিধি লংঘন করেছে।

বরিশাল-২(উজিরপুর-বানারীপাড়া) আসন থেকে নৌকার প্রার্থী অ্যাড: তালুকদার মো: ইউনুস গতকাল নেতাকর্মীর বহর নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। অবশ্য এ আসনে বানারিপাড়া উপজেলা আ’লীগের উপদেস্টা সাবেক এমপি মনিরুল ইসলাম মনির এবং আ’লীগ নেতা এ কে ফাইয়াজুল হক রাজু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। এ প্রসঙ্গে প্রার্থী মনিরুল ইসলাম বলেন, এ আসনে আমি যে উন্নয়ন করেছিলমা জনগন তা ভুলতে পারেনি। জনগন আমাকে চায়, তাই প্রার্থী হয়েছি। ভোটেই প্রমান হবে নৌকার প্রার্থীর চেয়ে তিনি কতটা গ্রহনযোগ্য।
বরিশাল-৩(বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনে নৌকার প্রার্থী সরদার খালেদ হোসেন স্বপন নেতাকর্মীর বিশাল বহর নিয়ে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। পাশাপাশি বাবুগঞ্জ উপজেলা আ’লীগের সদস্য আতিকুর রহমানও গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। আতিক বলেন, প্রধানমন্ত্রী জনপ্রিয়তা যাচাই করতে চান তাই প্রার্থী হয়েছেন। তার সঙ্গে বাবুগঞ্জ ও মুলাদীর অধিকাংশ আ’লীগ নেতা আছেন। দলের মধ্যে তাতে কতটা প্রভাব পড়বে এ বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করেননি।

এ আসনে দুইজন হেভিওয়েট নেতা ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খানন মেনন এবং জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি গোলাম কিবরিয়া টিপু মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন।
বরিশাল-৬(বাকেরগঞ্জ) আসনে নৌকার এমপি প্রার্থী মেজর জেনারেল (অব:) হাফিজ মল্লিক মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। তার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করে গতকাল মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি মোহাম্মদ সামসুল আলম চুন্নু। এছাড়া জাতীয় পার্টির বর্তমান এমপি নাসরিন জাহান রত্নাও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন।
আ’লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, হাফিজ মল্লিককে মনোনয়ন দেয়ায় স্থানীয় আ’লীগের মুলধারায় অসন্তোষ রয়েছে। যেকারনে গতকাল চুন্নুর সঙ্গে মনোনয়নপত্র জমাদানকালে আ’লীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নেয়ামত আব্দুল্লাহ পলাশ সহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন। আ’লীগ নেতা চুন্নু বলেন, তিনি ৩ বারের চেয়ারম্যান ছিলেন বাকেরগঞ্জে। ১৩ বছর ধরে উপজেলা আলীগের সভাপতি। অথচ দলীয় মনোনয়নে বঞ্চিত হয়েছেন। গত ১৫ বছর জাপার এমপির কারনে বাকেরগঞ্জে উন্নয়ন হয়নি। আ’লীগের অধিকাংশই তার সঙ্গে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *