প্রধানমন্ত্রী জনসভায় সাদিক-জাহাঙ্গীরের উপস্থিতি নিয়ে আপত্তি

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বরিশালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট একেএম জাহাঙ্গীর এবং সাধারন সম্পাদক ও সদ্য সাবেক মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মঞ্চে ওঠা অনিশ্চয়তার মুখে পড়েছে। এ দুজনের মঞ্চে ওঠার বিরুদ্ধে জোরালো আপত্তি জনিয়েছেন সাদিকের চাচা সিটি মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বরিশাল-৫ (মহানগর-সদর) আসনে নৌকার প্রার্থী পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম এমপি। এমনকি প্রধানমন্ত্রীর সফরকেন্দ্রীক আওয়ামী লীগের বর্ধিত কিম্বা কোন প্রস্তুুতি সভাতে জাহাঙ্গীর-সাদিকের উপস্থিতি চান না তারা। আগামী ২৯ ডিসেম্বর নগরীর বঙ্গবন্ধু উদ্যানে আওয়ামী লীগের বিভাগীয় সমাবেশে বক্তৃতা করবেন প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা।

এ কর্মসূচী বাস্তবায়নে বুধবার দুপুরে নগরের সার্কিট হাউজে অনুষ্ঠিত সভায় সাদিক ও জাহাঙ্গীরকে নিয়ে আপত্তির কথা সাদিকের পিতা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ এমপি কাছে জানানো হয়।

সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল- ৫ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছিলেন। আমেরিকায় নাগরিকত্ব থাকার অভিযোগে নির্বাচন কমিশন (ইসি) গত ১৫ ডিসেম্বর সাদিকের প্রার্থীতা বাতিল করে। গত সোমবার হাইকোর্ট ইসির আদেশ বাতিল ঘোষণা করলে নির্বাচনে ফিরেছিলেন সাদিক। পরদিন মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার জজ আদালত হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত ঘোষণা করলে নির্বাচন থেকে ছিটকে পড়েন তিনি। মঙ্গলবার চেম্বার জজের আদেশের পরই নগরীতে সাদিকের দাপুটে কর্মী-সমর্থকরা চুপসে গেছেন। মহানগরের সভাপতি অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর সাদিকের কট্টর সমর্থক। তিনি সভাপতি হলেও সাধারন সম্পাদক সাদিকের কথার বাইরে যান না।

সার্কিট হাউজ সভাসুত্রে জানা গেছে, সাদিক স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ায় এবং সম্প্রতি দলের বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীর বিতর্কিত বক্তব্য দেওয়ায় ক্ষুদ্ধ সাদিকবিরোধীরা। তাদের ক্ষোভের কথাই মেয়র খায়ের ও প্রতিমন্ত্রী শামীম এমপি সাদিকের পিতাকে জানান।
সভায় উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম জানান, নির্বাচনী প্রচারনায় প্রধানমন্ত্রী ২৯ ডিসেম্বর বরিশালে আসছেন। তিনি জনসভায় দক্ষিণাঞ্চলের উন্নয়ন নিয়ে কথা বলবেন এবং বরিশাল বিভাগের নৌকার প্রার্থীদের পরিচয় করিয়ে দিবেন। ওই সভা সফল করা নিয়ে বুধবার দুপুরে অনাষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে। নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হওয়া এবং প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে সম্প্রতি আপত্তিকর মন্তব্য করায় দুই নেতার জনসভায় উপস্থিত থাকা নিয়ে আপত্তি তোলা হয়েছে। প্রতিউত্তরে জেলা সভাপতি আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি বলেছেন যে, প্রধানমন্ত্রীর জনসভা মঞ্চে নৌকার প্রার্থী থাকতে পারবেন, অন্য কেউ নয়।

প্রতিমন্ত্রীর ঘনিষ্ঠজন যুবলীগ নেতা মাহমুদুল হক খান মামুন বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থী সাদিক এবং মহানগর সভাপতি জাহাঙ্গীরে বিষয়ে জনসভায় উপস্থিত থাকা নিয়ে আপত্তি উঠছে। সাদিক নৌকার বিরুদ্ধে প্রার্থী হয়েছেন এবং জাহাঙ্গির তাকে সমর্থন জানিয়ে দলের বিরুদ্ধে বিতর্কিত মন্তব্য করেছেন।
সভা শেষে আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ এমপি সাংবাদিকদের বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমনে জনসভায় ১০ লাখ লোকের সমাগম হবে। এর মাধ্যমে এ অঞ্চলের উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে।
পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ও নৌকার প্রার্থী জাহিদ ফারুক এমপি বলেন, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে আমরা প্রাথমিক সভা করেছি। আগামী শনিবার বর্ধিত সভায় আরও বিস্তৃতভাবে আলোচনা হবে।

এ ব্যাপারে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো: ইউনুস বলেন, শনিবার বেলা ১১টায় বরিশাল ক্লাবে বিভাগের সকল জেলার সভাপতি-সম্পাদক, মেয়র, উপজেলা চেয়ারম্যানসহ জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে জনসভার বিষয়ে গুরুত্বপূর্ন সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। জনসভায় জাহাঙ্গীর-সাদিকের উপস্থিতি থাকার আপত্তি প্রসঙ্গে ইউনুস বলেন, যা হওয়ার হয়ে গেছে। ভুল হয়েছিল। এসব নিয়ে আর না বাড়িয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সফর সফল করতে হবে।

উল্লেখ্য, সাদিকবিরোধীদের আপত্তির মুখে গত সিটি নির্বাচনেও বরিশালে থাকতে পারেননি সাদিক। মনোনয়ন নিশ্চিত করতে তিনি ৫ এপ্রিল ঢাকায় গিয়েছিলেন। তখন মনোনয়ন দেওয়া হয় সাদিকের চাচা আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে। বরিশালে এলে চাচাকে পরাজিত করতে ষড়যন্ত্র করবেন- এমন আপত্তির মুখে ভোটের দশদিন পর ২২ জুন সাদিক বরিশালে ফিরেছিলেন। তিনি ২০১৪ সাল থেকে একক আধিপত্যের নেতা হিসাবে নগর আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন। গত সিটি নির্বাচনের পরই সাদিকবিরোধীরা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *