মাত্র ২জন প্রতিমন্ত্রীতে হতাশা দক্ষিণাঞ্চলে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : ২০০৯ সালে সাল থেকে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ শাসনমাল চলছে। তবে বরিশাল বিভাগের জন্য সোনালী সময় ছিল ২০১৪ সালে গঠিত মন্ত্রী পরিষদ। তখনকার পরিষদের বিভাগের ৩জন পূর্ণমন্ত্রী ও একজন মন্ত্রী পদমর্যাদার ছিলেন। তারা দেশের বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ও মন্ত্রী পরিষদে প্রভাবশালী ছিলেন। এর আগে ২০০৯ সালের মন্ত্রী পরিষদে দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব শুরুতে হতাশার হলেও মেয়াদের শেষ পর্যায়ে সম্প্রাসারিত পরিষদে আলোকিত হয়েছিল দক্ষিণাঞ্চল। ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রী পরিষদে ম্লান হতে থাকে বরিশাল। যার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ বৃহস্পতিবার গঠিত মন্ত্রী পরিষদে বরিশাল বিভাগ একজনও পূর্ন মন্ত্রী পেলোনা। যা নিয়ে হতাশা রয়েছে দক্ষিণাঞ্চলবাসীর মধ্যে।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন টানা চতুর্থ সরকারের মেয়াদের ২৫ জন মন্ত্রী ও ১১ জন প্রতিমন্ত্রী বৃহস্পতিবার শপথ গ্রহন করেছেন। ৩৬ সদস্যের মন্ত্রী পরিষদের দক্ষিণাঞ্চলের প্রতিনিধিত্ব করছেন মাত্র দুইজন প্রতিমন্ত্রী। তারা হলেন, বরিশাল- ৫ (মহানগর-সদর) আসনের জাহিদ ফারুক এমপি এবং পটুয়াখালী- ৪ (কলাপাড়া-রাঙ্গাবালী) আসনের মুহিবুর রহমান এমপি। জাহিদ ফারুক বিগত পরিষদে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। মুহিবুর রহমান এই প্রথম মন্ত্রী জায়গা পেলেন। ছয় জেলার বিভাগে মাত্র দুজন প্রতিমন্ত্রীর স্থান হওয়ায় সন্তুুষ্ট নন এখানকার নাগরিক সমাজ।

বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড: মোহাম্মদ আব্দুল বাতেন চৌধুরী বলেন, ‘বিভাগে ২১টি সংসদীয় আসন থাকা সত্বেও আমরা একজন পূর্ণমন্ত্রীও পাইনি। যদিও ২জন প্রতিমন্ত্রী পেয়েছি। একজন মন্ত্রী পেলে দক্ষিণাঞ্চলে প্রধানমন্ত্রীর কাংখিত উন্নয়ন আরও বেগবান হতো। ভবিষ্যতে সম্প্রসারিত মন্ত্রী পরিষদে দুইজন প্রতিমন্ত্রীর মধ্যে অন্তত একজনকে পূর্নমন্ত্রীতে পদোন্নতি এবং প্রতিমন্ত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধি করা হবে আমরা খুব আশাবাদী।’

আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদের সদস্য ও বিএম কলেজ ছাত্র সংসদের সাবেক জিএস বলরাম পোদ্দার বলেন, মন্ত্রী পরিষদের গঠনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিদ্ধান্ত দক্ষিণাঞ্চলবাসীর জন্য মঙ্গলজনক। পরিষদে দক্ষিণাঞ্চলের দুজন প্রতিমন্ত্রী থাকলেও পুর্ন মন্ত্রীপদে ঠাই পাওয়া ঢাকা- ১০ এর আসনের জাহাঙ্গীর কবির নানক এমপি বরিশাল নগরীর সন্তান। সে হিসাবে আমরা মনে করি দক্ষিণাঞ্চলবাসী একজন পূর্ন মন্ত্রীও পেয়েছেন। বলরাম পোদ্দার আশাাবাদী, আগামীতে মন্ত্রী পরিষদ সম্প্রসারিত হলে বরিশাল বিভাগ থেকে কাউকে পূর্ন মন্ত্রী করা হবে।

সদ্য বিলুপ্ত বিগত মন্ত্রী পরিষদে বরিশাল বিভাগের সদস্য ছিলেন দুইজন। তারা হলেন মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী পিরোজপুর- ১ আসনের অ্যাডভোকেট শ.ম রেজাউল করীম এমপি এবং বরিশাল- ৫ আসনের এমপি জাহিদ ফারুক ছিলেন পানিসম্পদ মন্ত্রালয়ের প্রতিমন্ত্রী। নতুন মন্ত্রী পরিষদে ঠাই হয়নি শ.ম রেজাউল করীমের।

পটুয়াখালী জেলায় চারজন এমপির তিনজনই ২০০৯ সালের মন্ত্রী বা পদমর্যাদায় ছিলেন। তখনকার পটুয়াখালী- ১ আসনের এমপি মো. শাহজাহান মিয়া ধর্ম মন্ত্রনালয়ের এবং পটুয়াখালী- ৪ আসনের মাহবুবুর রহমান তালুকদার পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। পটুয়াখালী- ৩ আসনের এমপি আ.স.ম ফিরোজ ছিলেন প্রতিমন্ত্রী পদমর্যাদায় জাতীয় সংসদের হুইপ। তিনি ২০১৪ সালের সংসদে পূর্ন মন্ত্রীর মর্যাদায় চিফ হুইপ হিসাবে জেলার একমাত্র প্রতিনিধি ছিলেন। ২০১৯ সালের পরিষদে পটুয়াখালী জেলার প্রতিনিধিত্ব ছিলনা। এবার পটুয়াখালী- ৪ আসনের মুহিবুর রহমান তালুকদারকে প্রতিমন্ত্রী করা হয়েছে। গত ৩টি পরিষদে প্রতিনিধিত্ব নেই ভোলা ও বরগুনা জেলার। ভোলা- ৪ আসনের এমপি ২০০৯ সালে মন্ত্রী পরিষদে উপমন্ত্রী ছিলেন।

উল্লেখ্য, ওয়ান ইলেভেন পরবর্তী নির্বাচনের পর ২০০৯ সালের শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মন্ত্রী পরিষদে বরিশাল বিভাগের প্রতিনিধিত্ব ছিলনা। তবে ওই সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে ২০১৩ সালের ২০ নভেম্বর বর্ষিয়ান রাজনীতিবিদ ভোলা- ১ আসনের তোফায়েল আহমেদ এমপি, ঝালকাঠী- ২ আসনের আমির হোসেন আমুকে পূর্ন মন্ত্রী করা হয়েছিল। তারা ২০১৪ সালের নির্বাচন পরবর্তী সরকারের পুরো মেয়াদেও বানিজ্য ও শিল্প ও বানিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। আরেক বর্ষিয়ান রাজনীতিদি পিরোজপুর- ২ আসনের জাতীয় পার্টি জেপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন মঞ্জু ছিলেন বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী। তাদের সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী পদমর্যাদায় চিফ হুইপ পটুয়াখালী- ৩ আসনের আ.স.ম ফিরোজ এমপি। তখন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী ওয়ার্কার্স পার্টির রাশেদ খান মেনন ঢাকা- ৮ এর এমপি হলেও বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলার সন্তান হওয়ায় তাকে নিয়েও গর্বিত ছিলো দক্ষিণাঞ্চলবাসী। ফলে বর্ষিয়ান ৪ রাজনীতিবিদ মন্ত্রী এবং একজন চিফ হুইপ হওয়ায় ওই মেয়াদটি দক্ষিণাঞ্চলের জন্য সোনালী সময় ছিলেন মনে করা হয়।

হতাশা পিরোজপুরে : পিরোজপুর-১ আসনের শ.ম রেজাউল করীম ২০১৮’র নির্বাচনে প্রথমবার এমপি হয়েই ওই বছরের মন্ত্রী পরিষদে পূর্নমন্ত্রী হয়েছিলেন। সরকারের পুরো মেয়াদে তিনি দুটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। শুরুতে গৃহায়ন ও পূর্ত মন্ত্রালয় এবং পরে মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ মন্ত্রালয়ের মন্ত্রী ছিলেন। বিগত মন্ত্রী পরিষদে তার ক্লীন ইমেজ থাকায় এবারও তিনি মন্ত্রী হবেন বলে আশাবাদী ছিলেন তার অনুসারীরা। নতুন মন্ত্রী পরিষদে তার নাম না থাকায় হতাশ তার অনুসারীরা। অপরদিকে উচ্ছ্বাসিত পিরোজপুর আওয়ামী লীগে তার প্রতিপক্ষ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি একেএম আউয়াল অনুসারীরা। রেজাউল করীম অনুসারী জেলা আওয়ামী লীগের সহ সভাপতি আক্তারুজ্জামান ফুলু জানান, ‘গত ৫ বছর দায়িত্ব পালনকালে ক্লীন ইমেজ থাকায় আমরা আশাবাদী ছিলাম রেজাউল করীম আবারও মন্ত্রী হবেন। ভবিষ্যতে মন্ত্রী পরিষদ সম্প্রসারিত হলে শ.ম রেজাউল করীম ডাক পাবেন বলে মনে করছেন তার অনুসারীরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *