নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশাল ঢাকা নৌপথে কুয়াশায় নৌযান চলাচল মারাত্নকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। সস্প্রতি কুয়াশায় লঞ্চের সঙ্গে মালবাহী ও বালুবাহী কার্গোর একের পর এক সংঘর্ষে প্রাণও ঝরছে। উদ্ভুত পরিস্থিতিতে বিআইডব্লিউটিএ ঘনকুয়াশায় ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার দুরত্ব রেখে নৌযান চলাচলের নির্দেশ দিলেও তা কেউ মানছে না। এতে ঝুকির মুখে পড়েছে এ রুটের হাজারো যাত্রী।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ এর পরিদর্শক মোঃ সামসুদ্দিন বলেন, শুক্রবার ঢাকা থেকে ৩টি লঞ্চ যথাক্রমে শুভরাজ ৯, সুরভী ৯, বুয়াকাটা ২ বরিশাল বন্দরে পৌছায় সাড়ে ৬টার পর। এ মৌসুমে সকাল ৮টা- ৯টায়ও লঞ্চ ভীরছে। এই বিলম্বের কারন ঘন কুয়াশা। তিনি বলেন, কুয়াশায় ধীরে চলাচলের নিদেশনা আছে। আমরা সতর্ক করছি বার বার। বড় লঞ্চগুলোতে ঘনকুয়াশায় দিক বুঝতে রাডার, ইকোসাউন্ডরে আছে। কিন্তু এগুলো চালাতে দক্ষতা দরকার।
জানা গেছে, গত ৪ জানুয়ারী দিবাগত রাতে মেঘনা নদীতে পন্যবাহী জাহাজের আঘাতে ঢাকা থেকে বরিশালগামী এমভি সুন্দরবন ১৬ লঞ্চ ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এম ভি মার্কেনটাইল -৩ নামক পণ্যবাহী জাহাজটির সজরে আঘাতে সুন্দরবন লঞ্চের ভিআইপি কেবিন, ক্যান্টিন, ডেকের মাঝ সিড়ি দুমড়ে মুচড়ে গেছে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে বেশ কয়েকজন যাত্রী। লঞ্চের ৮০০ যাত্রীর মধ্যে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। এক নারী যাত্রী নিখোজ হয় বলে জানান চাদপুর নৌ পুলিশের অতিরিক্ত উপ মহা পরিদশক মোঃ কামরুজ্জামান ।
একই রাতে ঢাকা থেকে আশা এ্যাডভেঞ্চার-১ লঞ্চের সাথে বরিশাল নগরের পলাশপুরের মোহাম্মদ পুর চরের মাথায় কীতনখোলা নদীতে এমভি চন্দ্রদ্বীপ লোকাল লঞ্চের সংঘর্ষ হয়। এসময় লঞ্চটির সামনে ধুমড়ে মুচড়ে যায়। ওই ঘটনায় গুরুতর আহত ২ নারীকে শেবাচিম হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হয়।
ওই ঘটনার আগের রাতে পটুয়াখালীগামী সুন্দরবন ৯ লঞ্চের সঙ্গে কর্নফুলী জাহাজের মেঘনার মোহনপুরে সংঘর্ষ হয়। এতে যাত্রীদের মধ্যে আতংক দেখা দেয়।
এর আগে গত ১১ ডিসেস্বর দিবাগত মধ্যরাতে দ্বীপ জেলা ভোলা-ঢাকা রুটের মেঘনা নদীর চাদপুরের হাইমচরে মধ্যরাতে দুই যাত্রীবাহী লঞ্চের সংঘর্ষে মোঃ সোহেল (২৮) নামে এক যাত্রী নিহত হয়েছে। এতে আহত হয়েছে কমপক্ষে ৩জন ঘন কুয়াশার কারনে সুরভী-৮ এবং টিপু ১৪ লঞ্চের মধ্যে সংঘষে এ দুঘটনা ঘটেছে। বিআইডব্লিউটিএ এর ভোলা বন্দর কর্মকর্তা শহিদুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
জানতে চাইলে এমভি কুয়াকাটা-২ এর মাস্টার মানিক শরীফ বলেন, গত ৮-১০ দিন ধরে ঘনকুয়াশায় ঢাকা-বরিশাল নৌপথ ঘোলা ঘোলা দেখায়। কিছু দুর পর পর জাহাজ থামাতে হচ্ছে। তিনি বলেন, আমাদের ধৈর্যের অভাব থাকায় লঞ্চের সঙ্গে কাগোর সংঘর্ষ বাধছে। মালবাহী ও বালুবাহী কাগো বেপরোয়া চলাচল করে। লঞ্চে যে রাডার, ইকো সাউন্ডার রয়েছে তা ব্যাবহারে দক্ষতায় ঘাটতিও আছে।
রাডারে গতি ও দুরত্ব বুঝতে হবে। কাছাকাছি দুটি জাহাজ এলে আমাদের গতি কমাতে হবে। দুঘটনা রোধে গত ১২দিন আগে বিআইডব্লিউটিএ এর চেয়ারম্যান তাকে (মানিক) ও এমভি আওলাদ এর মাস্টার সাজ্জাদকে ডেকে পাঠান। সেখানে চেয়ারম্যান কুয়াশায় দুর্ঘটনা রোধে ২৫০ থেকে ৩০০ মিটার দুরত্ব রেখে নৌযান চালানোর নিদেশ দেয়া হয়। কিন্তু ওই নিদেশনা মানতে গেলে লঞ্চ ঘাটে পৌছাকে ৩-৪ ঘন্টা পর।
বরিশাল বিআইডব্লিউটিএ এর বন্দর কর্মকর্তা আঃ রাজ্জাক বলেন, কুয়াশায় লঞ্চ আসতে বিলম্ব হচ্ছে। তারা এ সময়ে লঞ্চ চলাচলে সাবধানতা অবলম্বন করেছেন। এপযন্ত এ রুটে কুয়াশায় একাধিক দুর্ঘটনা ঘটেছে। তিনি বলেন, কুয়াশায় কি করার আছে লঞ্চের মাস্টার ড্রাইভরদের। কারন কুয়াশার কারনে সামনে দেখতে পারেন না তারা। কুয়াশা থেকে রক্ষার যথেস্ট যন্ত্রপাতি এবং দক্ষতাও নেই।
বরিশাল নৌযাত্রী ঐক্য পরিষদের আহবায়ক আঃ রশিদ নিলু বলেন, লঞ্চ মালিকদের চাপে চালকরা মধ্যরাতে নদীতে প্রতিযোগিতায় নামে। যেকারনে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, বিশ্বের অনেক দেশে আধুনিক যন্ত্র ব্যবহার করে কুয়াশার মধ্যে জাহাজ চলাচল করছে। আমাদের দেশে মালিকরা সেই বিষয়ে আগ্রহী নন। তাদের বানিজ্যিক চিন্তায় বরিশাল ঢাকা রুটে যাত্রীরা এই কুয়াশায় ঝুকির মুখে পদ্মা মেঘনা পাড়ি দিচ্ছেন। তিনি নৌযাত্রীদের বিমা করার উপরও জোর দিয়েছেন।