বরিশালে নির্বিচারে জাটকা নিধন, সর্বনাশ রুপালী ইলিশের

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট:
বরিশালে দেদাড়ছে নিধন চলছে জাটকা নামক ইলিশের বাচ্চা। তার সঙ্গে ধরা হচ্ছে নানা ধরনের মাছের পোনা। মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত আড়াই মাসে বরিশাল জেলায় প্রায় ২০ মেট্রিক টন জাটকাসহ অন্যান্য মাছের পোনা জব্দ হয়েছে। অবৈধ কারেন্ট জাল উদ্ধার হয়েছে প্রায় ১২ লাখ মেট্রিক টন। তবে মাঠ পর্যায়ের তথ্যমতে, গেল ১ নভেম্বর জাটকা ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরুর পড় থেকে শত শত মেট্রিক টন জাটকা সহ বিভিন্ন মাছের পোনা নির্বিচারে নিধন চলছে। এতে সর্বনাশ ঘটছে মৌসুমে ইলিশ আহরনের। মৎস্য অধিদপ্তর এ তথ্য স্বীকার করে জানিয়েছেন, তাদের স্বল্প জনবলে বিশাল নদ-নদী নিয়ন্ত্রন কঠিন।

জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক নৃপেন্দ্রনাথ বিশ্বাস বলেন, জাটকা রক্ষায় নভেম্বর থেকে তাদের অভিযান চলছে। এর মধ্যে ১১ জানুয়ারী থেকে তারা কম্বিং অপারেশন শুরু করেছেন। ৪ টার্মে এ অভিযান চলবে। কিন্তু তাদের স্বল্প জনবলে মেঘনা সহ বিভিন্ন নদ-নদীতে মানুষকে ঠেকানো মুসকিল। বরিশালের আসপাশে জাটকা ধরছে। কিন্তু কয়টা ধরা যায়? যদিও এবার মৎস্য বিভাগ বিপুল পরিমান জাল উদ্ধার করেছে। মঙ্গলবারও মেহেন্দীগঞ্জে জেলা মৎস্য কর্মকর্তা পর্যবেক্ষনে গেছেন।

নগরের নিউ সার্কুলার রোডে সকাল হতেই ভ্যান ভরে সদর উপজেলার তালতলি থেকে জাটকা নিয়ে আসেন জনৈক মাছ বিক্রেতা। ৩০০ টাকায় এক কেজি ইলিশ কিনলে ১০ পিস এর মত পাওয়া যায়। এর সঙ্গে রয়েছে চাপিলা এবং গুড়া মাছ। ওই বিক্রেতা জানান, তালতলীতে এই জাটকা আর গুড়া মাছের হাট বসে প্রতিদিন ভোরে। খোজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের চৌমাথা বাজার, পোর্ট রোড বাজার, বাংলাবাজার, নতুন বাজার, কাশিপুর বাজার, বটতলা বাজারে প্রকাশ্যে নিষিদ্ধঘোষিত এই জাটকা বিক্রি হচ্ছে।

সাম্প্রতিক সময়ে জাটকার উৎপাদনস্থল মেঘনা ও শাখা নদীগুলোতে আহোরনের মহোৎসব চলছে। নদী তীরে প্রতিদিন শত শত মন জাটকা পাইকারী বিক্রি হয়ে দেশের বিভিন্নস্থানে বাজারজাত হচ্ছে। জেলে সংগঠকরা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, মৎস্য অধিদপ্তর প্রতিবছর রেকর্ড জাটকা উৎপাদন দেখিয়ে ইলিশসম্পদ বৃদ্ধির কৃতিত্ব দেখাচ্ছে। কিন্ত ভরা মৌসুমে নদীতে ইলিশ পাওয়া যায়না। সংকটের কারনে কয়েক বছর যাবত ইলিশের দাম মধ্যবিত্তের নাগালের মধ্যে নেই।

বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ ও হিজলা ঘেষা মেঘনা হলো জাটকার খনি। বিশাল এই মেঘনার স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রভাবশালীরা সকলে ইলিশঘাটের মালিক। তাদের ছত্রছায়ায় শত শত জেলে প্রতিদিন মেঘনায় বেপরোয়া জাটকা নিধন করছে। জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির হিজলা উপজেলার সভাপতি জাকির হোসেন মঙ্গলবার দুপুরে গৌরবদী ইউনিয়নের ফরহাদের মাছঘাট সংলগ্ন গভীর মেঘনায় গিয়েছিলেন। তিনি জানান, তখন শত শত জেলে মেঘনায় জাল ফেলে জাটকা আহোরন করতে দেখেছেন। প্রতিবারে জাল ফেলে কমপক্ষে ১০ পোন (৮০ পিস) জাটকা পাচ্ছে। সেগুলো ইলিশঘাটে বিক্রি হয় প্রতিপন ৮০০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা। এভাবে জাটকা নিধন করায় প্রতিবছর মৌসুমে নদীতে ইলিশ সংকটে পড়তে হয়।

মেঘনা তীরের ধুলখোলা ইউনিয়ন জাতীয় মৎস্যজীবী সমিতির সভাপতি মনির মাতুব্বর বলেন, গত কয়েকবছর ভরা মৌসুমে মেঘনায় ইলিশ পাওয়া যায়না। এখন জাল ফেললেই ইলিশের সঙ্গে প্রচুর জাটকাও নিধন হচ্ছে। মেহেন্দীগঞ্জের উলানিয়ার জেলে তোফালে হোসেন বলেন, জাল ফেললেই এখন জাটকা আর জাটকা। শুনেছেন, অভিযানে নেমেছে প্রশাসন। কিন্তু বিশাল মেঘনায় কোথায় প্রশাসন?

গত সোমবার বাকেরগঞ্জে বিভাগীয় উপ পরিচালকের নেতৃত্বে কম্বিং অপারেশন পরিচালনা করে মৎস্য অধিদপ্তর। সেখানকার পান্ডব, কারখানা, পায়রা, লোহালিয়া নদীতে অভিযান পরিচালনা করা হয়। ওই টিমে থাকা জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, জাটকা তো প্রচুর নদীতে আছে। যেহেতু নদীতে প্রচুর জাটকা আছে, সেহেতু ইলিশও সামনে পাওয়া যাবে। জাটকা রক্ষায় তারা অভিযান চালাচ্ছেন, অবৈধ জাল উদ্ধার করছেন। তিনি মনে করেন গতবারের চেয়ে মনে হচ্ছে একটু বেশি জাটকা এবার।

বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, গত বছরের ১ নভেম্বর থেকে ১৫ জানুয়ারী পর্যন্ত ১৭০টি অভিযানে বরিশাল জেলায় ১৭.৩৫৪ মেট্রিক টন জাটকা এবং ৩.৫২ মেট্রিক টন অন্যান্য মাছের পোনা জব্দ করা হয়। এ সময়ের মধ্যে অবৈধ কারেন্ট জাল উদ্ধার হয়েছে ১১.৯৩ লাখ মেট্রিক টন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *