নাগরিক রিপোর্ট ॥ বর্ষার আগে গত ফেব্রুয়ারীরতে নগরীর ড্রেনগুলো পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন অভিযান শুরু করে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। বেশ কয়েক মাস চলে ঘটা করে ড্রেনের ময়লা অপসারন কার্যক্রম। কিন্তু এই বর্ষায় নগরীর প্রধান সড়কগুলো থেকে শুরু করে বর্ধিত এলাকার সড়কও জলাবদ্ধতায় ডুবে থাকছে। ফলে ঈদের ছুটিতে নগরবাসী জলাবদ্ধতায় চরম দুর্ভোগে পরেন। বিসিসি স্বীকার করেছে, জলাবদ্ধতা দুরীকরনে ব্যাপকভাবে ড্রেন পরিস্কার অভিযান করলেও জলাবদ্ধতা থেকে পরিত্রান পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে। বিসিসি’র দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলেছে, এ বছর নয়, আগামী বছর এ সমস্যার উত্তরন ঘটতে পারে। এ অবস্থায় সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজেই দিনরাত সড়কগুলো পরিদর্শন করে জলাবদ্ধতা দুরীকরনের নিদের্শ দিচ্ছেন।
চলতি বছরের ২ ফেব্রুয়ারী প্রধান সড়ক সদর রোডের ড্রেন পরিস্কার করতে গিয়ে দেখা যায় ৪ ফুট ড্রেনের মধ্যে ৩ ফুট উচু মাটির স্তর জমেছে। একই অবস্থায় পাওয়া নগরীর প্রায় সবগুলো ড্রেনের মাটি অপসরন করতে হয়েছে। তখন বিসিসি কর্তৃপক্ষ আশ্বস্ত করেছিল, ড্রেনে পানির প্রবাহ স্বাভাবিক করতে পারায় আসন্ন বর্ষা মৌসুমে নগরীতে জলাবদ্ধতা হবে না। কিন্ত বাস্তবতা হয়েছে উল্টো। বিগত কয়েক বছরের মতো এবারও বর্ষায় নগরবাসীকে জলাবদ্ধতার দূর্ভোগে পড়তে হয়েছে।
ঈদ উল আযহা থেকে গত ৪/৫দিনের বর্ষায় প্রধান সড়কগুলোর মধ্যে নগরীর মেজর এম এ জলিল সড়ক (নবগ্রাম রোড), করিম কুটির, আমির কুটির, গোরস্থান রোড, ব্রাউন কম্পাউন্ড, প্রেসক্লাব সংলগ্ন আগরপুর রোড, রুপাতলী হাউজিং, জিয়ানগর, খ্রস্টানপাড়া, লুৎফুর রহমান সড়ক, জিয়া সড়ক, ধান গবেষনা সড়ক, পলাশপুর সহ অদিকাংশ সড়ক পানির নিচে তলিয়ে গেছে। জলাবদ্ধতার খবর পেয়ে মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ কয়েকটি সড়ক পরিদর্শনও করেন। নগরীর বর্ধিত এলাকাগুলোতেও প্রয়োজনীয় সংখ্যক ড্রেন না থাকায় বেশীরভাগ এলাকায় স্থায়ী জলাবদ্ধতা হয়েছে বলে স্থানীয় সুত্র জানিয়েছে।
নগরীর মেজর এম এ জলিল (নবগ্রাম রোড) সড়কের বাসিন্দা রেজা শরিফ বলেন, বৃস্টি এলই এই সড়কে জলাবদ্ধতা সৃস্টি হয়। এর কারন নবগ্রাম খাল ধ্বংস করে এর উপর ফুটপাত ও ড্রেন তৈরি করা হয়েছে। যার কারনে এবারের ঈদেও জলাবদ্ধতার স্বীকার হতে হয়েছে। ২৮ নম্বর ওয়ার্ডের চহুৎপুরের বাসিন্দা আবু জহির জানান, তার এলাকায় নতুন নতুন বসতি গড়ে উঠায় পানি প্রবাহের সবগুলো নালা আটকে গেছে। ফলে এ ওয়ার্ডে জলাবদ্ধতা এখন সবচেয়ে বড় সমস্যা। লুৎফুর রহমান সড়কের বাসিন্দা মো: হাফিজ বলেন, তার এলাকায় ব্যাপক আবাসন সৃস্টি হচ্ছে। এখানকার নতুন অলিগলি তাই বর্ষায় জলাবদ্ধতায় পড়ছে।
এবারের বর্ষাতেও জলাবদ্ধতার কথা স্বীকার করেছেন বিসিসির প্যানেল মেয়র গাজী নঈমুল হোসেন লিটু। তিনি বলেন, বর্ষার আগে গত কয়েক মাস ড্রেনের বর্জ ব্যাপকভাবে অপসারন করা হয়েছে। তাতে কিছুটা জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রন করা গেছে। কিন্তু অলিগলি, পাড়া মহল্লার ড্রেনের ময়লা অপসারন করা যায়নি। মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ’র ধারনা ছিল ড্রেনের ময়লা পরিস্কার করলে জলাবদ্ধা নিয়ন্ত্রন করা যাবে। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা। অতিবর্ষনে পানি জমে থাকার বিষয়টি মেয়র নিজে পরিদর্শন করে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন সংশ্লিস্টদের। প্যানেল মেয়র লিটু বলেন, আমাদের ২৩টি খাল সংস্কার করা না গেলে নগরীর জলাবদ্ধতা দুর করা মুসকিল হবে। তাছাড়া ড্রেনের মুল অংশ যা খালে গিয়ে মিশেছে সেগুলো বন্ধ আছে। জোয়ারের পানিও নগরীতে ঢুকে যায়। এ অবস্থায় ড্রেনগুলোর সংস্কারও করতে হবে। কেএসডব্লিউ নামে জার্মানির একটি দাতা সংস্থা এ নিয়ে জরিপ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, আগামী বছর হয়তো এ সমস্যা থাকবে না।
বিসিসি’র দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা: রবিউল ইসলাম বলেন, বর্ষার আগেই মুল সড়কের ড্রেন পরিস্কার করা হয়েছে। এরপরও জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে। কেননা জোয়ারে নিচু এলাকা ডুবে যায়। তিনি বলেন, তারা ৩দিন ধরে আমির কুটির, করিম কুটির, ব্রাউন কম্পাউন্ড এর জলাবদ্ধতা নিয়ন্ত্রনে কাজ করছেন। নগরীর মধ্যভাগের সড়কগলো যার ড্রেন পরিস্কার করা হয়েছে সেগুলোতে জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা ডা: রবিউল বলেন, বেশি বৃস্টি হলেই এমনটা হয়। নবগ্রাম সড়কের (এম এ জলিল সড়ক) এক পাশ পানিতে ভরে যায়। এ সমস্যা সমাধানে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা নিতে হবে।
এব্যাপারে সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, বরিশালের খালগুলোকে নস্ট করে দেয়া হয়েছে। নগরীতে পুকুর, খাল নেই। এখন কেবল ড্রেনের ময়লা পরিস্কার করলে জলাবদ্ধতা দুর হবে না। যে সময়ের কাজ সে সময়ে না করলে এর প্রভাব পড়বেই। মেয়র সাদিককে খালগুলোকে সংস্কার ও ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন ঘটাতে হবে।
২০১৯-০৮-১৮