কাশ্মীরে গনহারে ধরপাকড়

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ কাশ্মীরে বিক্ষোভকারীদের ওপর ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হামলায় আহত হয়েছে অন্তত ৬ জন। শনিবার ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের প্রধান শহর শ্রীনগরে বিক্ষুব্ধ কাশ্মীরিদের ওপর এ হামলার ঘটনা ঘটে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। দুই পুলিশ কর্মকর্তা ও প্রত্যক্ষদর্শীর বরাত দিয়ে রয়টার্স জানায়, শুক্রবার বিকাল থেকেই বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা।
শ্রীনগরের স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গত কয়েকদিনে তারা ক্রমাগত ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ব্যাপক শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতিত হয়ে আসছেন। পাথর ছোড়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও তাদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। জম্মু ও কাশ্মীরের কর্মকর্তারা এখনো কোনো তথ্য দেয়নি যাতে স্পষ্ট হয় এখন পর্যন্ত পাথর ছোড়া ও এতে আহতের সংখ্যা কত। কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ শ্রীনগরে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে দাবি করেছে, এই অঞ্চলে ‘শান্তিপূর্ণ’ অবস্থা বিরাজ করছে। তবে তারা শ্রীনগরে নিরাপত্তা বাহিনীর সংঘর্ষে জড়ানোর ঘটনার বিষয়ে অবগত কিনা তা স্পষ্ট করা হয়নি।
এদিকে কাশ্মীর কর্তৃপক্ষ দাবি করলেও কার্যত এখনো অবরুদ্ধ গোটা উপত্যকা। শনিবার কর্তৃপক্ষ জানায়, সমগ্র জম্মুতে এবং কাশ্মীরের বেশ কিছু এলাকায় পরিষেবাগুলো চালু হয়েছে। কিন্তু সেখানকার বেশিরভাগ শহুরে এলাকাই এখনো অবরুদ্ধ হয়ে আছে। সেখানে চালু হয়নি ইন্টারনেট কিংবা টেলিফোন সেবা। একইসঙ্গে, এখনো ছেড়ে দেয়া হয়নি কাশ্মীরের আটক অর্ধসহস্র নেতাকর্মীকে। তাদের মধ্যে থেকে অনেককেই অন্য রাজ্যের কারাগারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শনিবার হরি মহারাজা সিং হাসপাতালের দুই কর্মকর্তা জানান, শ্রীনগরের সৌরা ও চাদুরা জেলায় নিরাপত্তা বাহিনীর পেলেটে গুরুতর আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন দুজন। হাসপাতালটি আহতদের তথ্য সংগ্রহ করছে। তাদের মধ্যে একজনের নাম গোলাম রাসুল। তিনি আলিকাদাল এলাকায় একটি দোকান পরিচালনা করতেন। হাসপাতালে তার সন্তান নাসির জানান, তার পিতাকে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা কমপক্ষে ২০টি পেলেটবিদ্ধ করে।
শ্রীনগরের বেমিনা এলাকায় প্রায় এক ডজন প্রত্যক্ষদর্শী জানিয়েছেন যে, সেখানকার পুলিশ ও আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যরা বেশ কয়েকটি বাড়িতে তল্লাশি চালিয়েছে। এ সময় তারা কমপক্ষে ৬ জনকে ধরে নিয়ে যায় ও বাড়িগুলো রড দিয়ে পিটিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করে। এর আগে সকালে নিরাপত্তা বাহিনীর ওপর স্থানীয়দের পাথর নিক্ষেপের তুচ্ছ ঘটনা ঘটে।
এদিকে কাশ্মীরজুড়ে বিরাজ করছে আতঙ্ক। নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাছবিচারহীনভাবে গ্রেপ্তার করতে শুরু করেছে সেখানে। শাহিদা নামের এক গৃহিণী জানান, তিনি ও তার বর রিয়াজ আহমেদ তার বাড়ির নিচতলায় বসে চা খাচ্ছিলেন। এমন সময় নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ১৫ সদস্য তাদের বাড়িতে ঢুকে রিয়াজ আহমেদকে নিয়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে তারা বাড়ির জানালা ভাঙচুর করে। কান্নাজড়িত কণ্ঠে শাহিদা বলেন, আমি আমার ২ মাস বয়সী শিশুকে আগলে রাখলেও তারা রিয়াজকে নির্মমভাবে পেটাতে থাকে। সে ব্যবসা করে, কখনো পাথর ছোড়েনি। ১৮ বছর বয়সী আরেক কিশোর সিমরান শাহনেওয়াজের পায়ে ব্যান্ডেজ দেখা যায়। সে জানায়, একজন পুলিশ কর্মকর্তা রাস্তায় তাকে লোহার দণ্ড দিয়ে নির্দয়ের মতো আঘাত করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *