জিম্মী নগরবাসী: ৩ চাকার যানবাহনে নৈরাজ্য

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ শৃংখলা ফিরে আসছে না বরিশাল নগরীতে তিন চাকার যানবাহনে। এই নগরীতে অবৈধ যান যেমন বীর দর্পে চলতে পাড়ছে, তেমনি যাত্রীদের জিম্মী করে পথেঘাটে বাড়তি ভাড়াও নেয়া যাচ্ছে। এর কারন হিসেবে যানা গেছে, তিন চাকার যানবাহন চলাচল নিয়ে নগরীতে কোন নীতিমালা নেই। মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ এবং সিটি করপোরেশন নিজেদের মত আইন প্রয়োগ করে নগরীতে যানবাহন চলাচল নিয়ন্ত্রন রাখছে। হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বে তাদের ইচ্ছায় তিন চাকার এক ধরনের যান চলাচলে অনুমতি পাচ্ছে। অথচ একই আইনে অপর যানবাহন নিষিদ্ধ হচ্ছে। ফলে একদিকে যেমন জিম্মী হয়ে পড়ছেন সাধারন মানুষ, তেমনি অপরদিকে চালকরা হয়ে পড়ছেন বেকার।
জানা গেছে, গত রবিবার থেকে ব্যাটারীচালিত রিকশা বন্ধে ধরপাকড় চলছে। আটকও করা হয়েছে অর্ধশত। ট্রাফিকবিভাগ জানিয়েছে, এসব ব্যাটারিচালিত রিকশা অবৈধ। অথচ হাইকোর্টের নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলুদ অটোরিকশা নগরীতে চলাচল করছে অনায়াসে। এদিকে রিকশার সংখ্যা হ্রাসের সুযোগে প্যাডেল চালিত রিকশা ও তিন চাকার যানে ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য শুরু হয়েছে। আর এজন্য মধ্যবিত্তদের নগরীর এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্তে যেতে ৫ থেকে ২০ টাকা ভাড়া বেশি দিতে হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার সরেজমিনে দেখা গেছে, হাতেম আলী কলেজ থেকে হাসপাতাল রোড রিকশা ভাড়া চাওয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। আবার সদর রোড থেকে সার্কলার রোডও রিকশায় ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৫০ টাকা। সদর রোড থেকে নথুল্লাবাদ রিকশা ভাড়া ৫০ থেকে ৬০ টাকা নিচ্ছে। হলুদ অটো রিকশায় চৌমাথা থেকে লঞ্চঘাটের ভাড়া যেমন ১০টাকা তেমনি, চৌমাথা থেকে ব্রাউন কম্পাউন্ড এর ভাড়াও ১০টাকা। আবার লঞ্চঘাট থেকে নথুল্লাবাদের ভাড়া যেমন ১০ টাকা, তেমনি হাসপাতাল রোড থেকে নথুল্লাবাদের ভাড়াও ১০টাকা নেয়া হচ্ছে। নগরীর একাধিক যাত্রী অভিযোগ করেছেন, গত কয়েকদিনে রিকশা ভাড়া ৫০টাকায় উঠে গেছে। আর অটো রিকশায় ভাড়া নিয়ে হ্যানস্ত হচ্ছে সাধারন মানুষ।
জানতে চাইলে বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) যানবাহন সুপারেনটেনডেন্ট মো: মাইনুল ইসলাম বলেন, নগরীতে যানবাহন চলাচলে তাদের ভাড়া নির্ধারনে কোন নীতিমালা নেই। নগরীতে কোন যানবাহন চলবে, কোনটি অবৈধ তা ট্রাফিক বিভাগ নির্ধারন করবে। কেন অবৈধ যানবাহন চলছে তা ট্রাফিক বিভাগ বলতে পারে। ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা বন্ধ করার বিষয়ে তিনি কোন মন্তব্য করতে চান না। তবে বিসিসির নিবন্ধিত ২ হাজার ৬১০টি হলুদ অটো রিকশা নগরীতে চলতে পারবে।
বরিশাল রিকশা ভ্যান চালক শ্রমিক ইউনিয়নের নেত্রী ও বাসদের বরিশাল সদস্য সচিব মনিষা চক্রবর্তী বলেন, দীর্ঘদিন ধরে তারা নগর কর্তৃপক্ষকে বলে আসছেন যে সব ধরনের যানবাহন চলাচলে একটি নীতমালা ও রুট ঠিক করে দেয়া হোক। নগরীতে যানবাহনের ভাড়া নির্ধারন করাও নেই। করপোরেশন থেকে এক্ষেত্রে কোন উদ্যোগ নিচ্ছে না। তিনি বলেন, গরীব রিকশা চালকদের নিয়ে একটি স্বার্থান্বেসী মহল স্বরযন্ত্র করছে। সম্প্রতি ট্রাফিক বিভাগের কর্মকর্তাদের সাথে দেখা করে এসব গরীবের প্রতি নমনীয় হওয়ারও আহবান জানিয়েছেন। মনিষা জানান, হলুদ রিকশা চলাচলে হাইকোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। সেগুলো নগরীতে চলতে পারলে কেন ব্যাটারিচালিত রিকশা চলতে পারবে না। এই নৈরাজ্যের কারনে যানবাহনে শৃংখলা আসছে না। জনগনের কাছ থেকে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে। সামনে তারা এ নিয়ে কর্মসুচী দিবেন।
এব্যপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের পরিদর্শক (প্রশান) শামসুল আলম বলেন, নগরীতে ব্যাটারিচালিত রিকশাকে অভিযানের আওতায় আনা হয়েছে। গত কয়েকদিনে ৬০টি ব্যাটারী ও ৩০টি ব্যাটারিচালিত রিকশা আটক করা হয়েছে। তিনি বলেন, হলুদ অটোরিকশা চলাচলে হাইকোর্ট যা বলবে তার বিরুদ্ধে তো কোন কথা বলা যায় না। রাজনৈতিকভাবে এসবের সমাধান দরকার। এ সুযোগে রিকশায় ভাড়া বেশি নিচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা হবে। তারা ( প্যাডেল চালিত রিকশা) কোন সুযোগ নিয়ে জনগনকে জিম্মী করতে পারে না।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *