বিসিসি’র স্বাস্থ্য প্রকল্প: চাকুরীর হারানোর কারন জানেনা ওরা ৩৩জন

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ গত রোববারও (১ সেপ্টেম্বর) সারাদিন তারা কর্মস্থলে ব্যস্ত দিন কাটিয়ে শেষ বিকালে ঘরে ফেরার প্রস্ততি নিচ্ছিলেন। বিকেল ৫টার দিকে প্রকল্প কর্মকর্তা মো. শাহনেওয়াজ কাগজে লেখা একটি নামের তালিকাসহ এসে সকলকে ডাকলেন। তিনি বললেন, ‘আমি যাদের নাম বলব তাদের আগামীকাল থেকে আর অফিসে আসার প্রয়োজন নেই’। এরপর তালিকা দেখে একে একে ৩৩ জনের নাম বললেন তিনি। প্রতিটি নাম ঘোষনার সঙ্গে মধ্যবয়সী ৩৩ জনের জীবনে ঘোর অন্ধকার নেমে এলো। বকেয়া ৮ মাসের বেতন রেখে চাকুরীচ্যুত হয়ে বাড়ি ফিরেছেন তারা। ৭২ ঘন্টা পেরিয়ে গেলেও গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত তারা জানতে পারলেন না- কি কারনে তারা চাকুরীচ্যুত হলেন! গুঞ্জন রয়েছে ওইসব পদে স্বজনপ্রীতি করে নতুন জনবল নিতেই ৩৩জনকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে।
বিভিন্ন মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া গেছে, নগরের এক শীর্ষ জনপ্রতিনিধির পছন্দের ব্যক্তিদের চাকুরী দেয়ার জন্য ১০ বছরের অধিক কর্মরত ৩৩ জনকে চাকুরীচ্যুত করা হয়েছে। যাদের সকলে আয়া, দাড়োয়ানসহ তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণীর কর্মচারী। শীর্ষ ওই জনপ্রতিধির পছন্দের তালিকায় আছেন নগরীর সুশীল সমাজ নামধারী ব্যক্তির ছেলেও। তাদের সন্তুুষ্ট করতেই চাকরীরত ৩৩ জনকে চাকরীচ্যুত করে তাদের পরিবারকে ঠেলে দেয়া হয়েছে অনিশ্চিত জীবনের পথে।
হতভাগ্য এ ৩৩ জন বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) অধীনে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভেরী প্রকল্পের আওতায় নগর স্বাস্থ্য কেন্দ্রের কর্মচারী। রোববার বিকালে তারা যখন চাকুরীচ্যুত হলেন- তাদের কারোরই সরকারি চাকুরীর বয়স নেই। প্রত্যেকের সন্তানেরা স্কুলগামী। নি¤œ আয়ে তারা নগরীতে ভাড়া বাসায় পরিবারসহ থাকেন।
জানা গেছে, বিসিসি ২০০৬ সাল থেকে আরবান প্রাইমারী হেলথ কেয়ার সার্ভিস ডেলিভেরী প্রকল্পের আওতায় নগরীতে ৫টি স্বাস্থ্য কেন্দ্র পরিচালনা করছে। এসব কেন্দ্রে মা ও শিশু এবং গর্ভবতী নারীদের চিকিৎসা দেয়া হয়। বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) ‘মেরী ষ্টোপস’ এবং ‘সৃজনী বাংলাদেশ’ পর্যায়ক্রমে প্রকল্প পরিচালনা করেছে। নিয়মানুযায়ী প্রকল্প পরিচালনায় উন্নয়ন সংস্থার হাতবদল হলেও নিয়োগপ্রাপ্ত জনবল একই থাকতো। ‘সৃজনী বাংলাদেশ’র মেয়াদ শেষে এনজিও ‘সীমান্তিক’ গত ১ আগষ্ট দায়িত্ব নিয়ে কর্মরতদের ক্ষেত্রে একই নিয়ম বহাল রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। অজ্ঞাত কারনে গত ১ সেপ্টেম্বর তারা কর্মরত ৮৫ জনের মধ্যে ৩৩ জনকে মৌখিক নোটিশে চাকুরীচ্যুত করেন।
চাকুরীচ্যুত অ্যাডমিন অ্যাসিট্যান্ট সুশান্ত বালা কান্নাজড়িত হয়ে বললেন, ‘বেতন বকেয়া ৮ মাস। তারপরও চাকুরী করে আসছিলাম যে প্রকল্প থাকলে বেতনও একদিন পাবো। এখন বেতন না দিয়ে চাকুরী থেকে বিদায় করে দিল। বাসা ভাড়া ও মুদি-মনোহারি দোকানের বাকি টাকা পরিশোধ করে বাড়িতে ফিরে যাওয়ার মতো ভাড়ার টাকাও এখন আমার হাতে নেই’। চাকুরীচ্যুত সুপারভাইজার মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার থেকে স্কুল পড়ুয়া দুই সন্তানের কাছ দুরে দুরে থাকি। তারা এটা-ওটা খেতে চায়’।
চাকুরীচ্যুত অপর ৩১ জনের অবস্থাও সুশান্ত বালা ও শহীদুল ইসলামের মতোই। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে নগরীর কাউনিয়া বাশেরহাট এলাকায় প্রকল্পের প্রধান কার্যালয়ে গিয়ে দেখা যায়, চাকুরীচ্যুত কয়েকজন সেখানে ঘোরাঘুরি করছেন। সংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পর তারা প্রথমে কথা বলতে রাজী হননি। তাদের সঙ্গে কথা বলে বোঝা গেলো- চাকুরী ফিরে পাওয়ার জন্য নানানভাবে দেনদরবার করছেন তারা। সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার অপরাধে সুযোগ হারানোর আশংকায় তারা কথা বলতে রাজি নন।
কামরুন নাহার রেশমা নামক একজন জানান, মৌখিক নোটিশে চাকুরীচ্যুত হওয়ার পর তারা কয়েকজন বিসিসির মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য দুইদিন তার বাসায় ও অফিসে ঘুরেও দেখা করার অনুমতি পাননি।
এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল জানতে চাইলে তিনি বলেন, আরবান হেলথ কেয়ারের প্রকল্প পরিচালনায় আগের এনজিও’র মেয়াদ শেষ হয়ে নতুন একটি এনজিও দায়িত্ব নিয়েছে। বিষয়টি নিয়ে তিনি এর চেয়ে বেশী কিছু জানেন না’।
৩৩ জনকে মৌখিক নোটিশে চাকুরীচ্যুত করার কারন জানতে প্রকল্প ব্যবস্থাপক মো. শাহনেওয়াজের কার্যালয়ে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি চাকুরী রক্ষার দোহাই দিয়ে এ বিষয়ে কোন কথা বলতে অপরাগতা জানান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *