নাগরিক রিপোর্ট ॥ বরিশাল নগরীতে একের পর এক পুকুর ভরাটের পায়তারা চলছে। নানা অপকৌশলে সরকারী কিংবা ব্যক্তিমালিকানাধিন এসব প্রাকৃতিক জলাশয় দখল করছে প্রভাবশালীরা। এর সাথে যেমন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রয়েছে তেমনি প্রশাসনও জড়িত। পুকুর ভরাটে পরিবেশবাদীদের আপত্তি কিংবা আইনী পদক্ষেপও গ্রাহ্য করছে না দখলবাজরা। অপরদিকে পরিবেশ অধিদপ্তর এসব পুকুর কিংবা জলাশয় রক্ষায়ও কোন পদক্ষেপ নেয় না। যার ফলে নগরীর পরিবেশের ভারসাম্য হুমকীর মুখে পড়ছে বলে সংশ্লিস্টরা মনে করেন। নগরীর ঐতিহ্যের এমন ৮টি পুকুর এক সময়ে ভরাট হয়ে সেখানে অট্টালিকা গড়ে ওঠার আশংকা করেছেন সংশ্লিস্টরা।
বরিশালে মহাত্মা অশি^নী কুমার দত্তর বাসভবনের সম্মুখে থাকা সরকারি বরিশাল কলেজ পুকুরটি দখলে দূষণে এখন মজা ডোবায় পরিণত হয়েছে। বরিশাল কলেজ কর্তৃপক্ষের হাতে পুকুরের বেশিরভাগ অংশ ভরাট হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে, নানা কৌশলে পুকুরের বাকি অংশ ভরাটের পায়তারা চলছে। পুকুরটির চারপাশা ইটের খোয়া ও রাবিশ, ময়লা আবর্জনা ফেলে ভরাটের চেস্টা চলছে অনেকদিন ধরে। ২০১০ সালে নাগরিকদের দাবির প্রেক্ষিতে অশি^নী কুমার দত্তের বাসভবনের সামনে থাকা পুকুরটি রক্ষায় উদ্যোগ নেন ততকালীন মেয়র শওকত হোসেন হিরণ। বরিশাল কলেজের পুকুরের ন্যায় নগরীর একাধিক পুকুর এভাবে ভরাটের চেস্টা চলছে।
বরিশাল নদী খাল বাঁচাও আন্দোলন কমিটির সদস্য সচিব কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, গত কয়েক বছরে নগরীর কম পক্ষে ৮টি বৃহৎ পুকুর ভরাটের পায়তারা চলেছে। এর অধিকাংশই ভরাটে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এগুলো হচ্ছে সরকারী বরিশাল কলেজ পুকুর, বরিশাল পুলিশ ক্লাব পুকুর, গোরস্থান রোডের পানির ট্যাংকি সংলগ্ন পুকুর, ঝাউতালা পুকুর, ব্রাউন কম্পাউন্ড পুকুর, কালিবাড়ি রোড ক্লাবের পাশের পুকুর, কোতয়ালী থানার পুকুর, ত্রিশ গোডাউন পুকুর।
জলাশয় রক্ষায় দীর্ঘদিন আন্দোলনকারী কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু আরও বলেন, বরিশাল কলেজের পুকুরের মত নগরীর মল্লিক রোডের পুলিশ ক্লাব পুকুরটি প্রশাসন দখল করেছে। এর একাংশ ভরাট হয়ে গেছে। বাকি অংশ চারদিকে দেয়াল দিয়ে রেখেছে। তিনি বলেন, এটি ছিল ফায়ারসার্ভিসের পানির রিজার্ভ ট্যাংক। তারা এটি রক্ষায় আন্দোলন করেছেন। এই পুকর রক্ষায় উচ্চ আদালতে রিট দায়ের করা হলে আদালত পুকুরটিকে পুর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে আনার নির্দেশ দিয়েছে। থানা সংলগ্ন পুকুরটিতে ময়লা ফেলে মজা পুকুরে পরিনত করার পায়তারা চলছে। গোরস্থান রেডের পুকুরও রক্ষায় শিক্ষার্থীরা মাঠে নেমেছিল। আর ত্রিশ গোডাউন সংলগ্ন বিশাল জলাশয় খাদ্য বিভাগ একাংশ ভরাট করে ফেলেছে। তিনি বলেন, সরকারের নীতিমালা অনুযায়ী জলাশয় ভরাট করা যাবে না। কিন্তু পরিবেশ অধিদপ্তর এ বিষয়ে কোন ভুমিকা নিচ্ছে না। যার দরুন জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের ছত্রছায়ায় এসব পুকুর এক সময় ভরাট হয়ে যাবে। ফলে নগরীর পরিবেশের মারাতœক ক্ষতি হবে।
পরিবেশবাদী সংগঠন বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবীদ সমিতি (বেলা) এর বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন বলেন, প্রধানমন্ত্রী নির্দেশ দিয়েছেন জলাশয় রক্ষার। এভাবে অপকৌশলে পুকুর ভরাট আইনগতভাবে বেআইনী। নগরীর বেশ কয়েকটি পুকুর রক্ষায় মামলা চলমান রয়েছে। এগুলো জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনকে ম্যানেজ করে কৌশলে ভরার চেস্টা করা হচ্ছে। এক সময় হয়তো এগুলো ভরাট করে অট্টালিকা গড়ে উঠবে। তিনি বলেন, এসব জলাশয় রক্ষার দায়িত্ব যাদের তাদের কোন উদ্যোগ নেই। পরিবেশ রক্ষায় এ বিষয়ে প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরকে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহবান জানান তিনি।
এব্যপারে পরিবেশ অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আ: হালিম বলেন, কোন জলাশয় সরকারী জমির উপর হয়ে থাকলে তা কেউ ভরাট করতে পারবে না। ব্যক্তিমালিকানার পুকুর ভরাট করা যাবে। তবে সেটি যদি প্রাকৃতিক জলাধার হয় যেটি সকলে ব্যবহার করে তা ভরাট করা যাবে না। তিনি বলেন, সরকারী বরিশাল কলেজসহ যেসব পুকুর ভরাটের পায়তারা চলছে সেগুলোর ক্ষেত্রে সুস্পস্ট কোন অভিযোগ কেউ দেয়নি। তিনি বলেন, কারো পক্ষ থেকে অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নিবেন।
২০১৯-০৯-১১