উচ্ছেদে টালবাহানা: অস্তিত্ব হারাচ্ছে কীর্তণখোলা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ বেপরোয়া দখলে বরিশাল নগরীর কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া কীর্তণখোলা নদীর তীর তার নিজস্ব অস্তিত্ব হারিয়ে ফেলছে বহু আগে। বিভিন্ন সময়ে উচ্ছেদ অভিযান চালানো হলেও ফের দখল হয় নদীর তীর। বিআইডব্লিউটিএ দীর্ঘদিন ধরে বরিশাল নদী বন্দরের দুই তীরে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযানের ঘোষণা দিলেও এ কার্যক্রমে কোন অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে গঠিত টাস্কফোস কয়েকদফায় সভা করলেও বিআইডব্লিউটি’র স্থানীয় কর্মকর্তারা এখন পর্যন্ত অবৈধ দখলদারদের তালিকা করতে পারেনি। ফলে শুরু করা যায়নি উচ্ছেদ অভিযান।
এর আগে ঈদ উল আযাহার পর পর অভিযান শুরু করার কথা বলেছিলেন বিআইডব্লিউটিএ’র দায়িত্বশীলরা। নৌ পরিবহন মন্ত্রী ও এবং নৌ মন্ত্রণালয়ের সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে অভিযান শুরুর কথা বলেছিলেন তারা।
জানতে চাইলে বুধবার বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু সাংবাদিকদের বলেন, জনবল সংকটের কারনে তাদের উচ্ছেদ কার্যক্রমে পিছিয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় জনবল চেয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র কেন্দ্রীয় দপ্তরে চিঠি দেয়া হয়েছে। এ কর্মকর্তা জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে তিনি প্রয়োজনীয় জনবল পেয়ে যাবেন। এরপরে দখলদারদের তালিকা প্রস্তত করে কেন্দ্রীয় দপ্তরে পাঠানোর পর অনুমতি পাওয়া গেলে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হবে। পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে আগামী মাসে (অক্টোবর) অভিযান শুরু করা যেতে পারে।
বিআইডব্লিউটি সুত্রে জানা গেছে, উচ্ছেদের প্রথম ধাপে বরিশাল নদী বন্দরের পূর্ব দিকে পলাশপুর ব্রীজ থেকে দক্ষিণে যমুনা অয়েল ডিপো পর্যন্ত ৩ দশমিক ৫৭ কিলোমিটার অংশে কীর্তণখোলার উভয় অংশে উচ্ছেদ অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। ১৯৬০ সালে মৌজা অনুযায়ী পূর্ন জোয়ারের সময়ে নদীর তীরে জলরেখা থেকে উপরের দিকে দেড়শ ফুটের মালিক বিআইডব্লিউটিএ। এর মধ্যে থাকা সকল স্থাপনা উচ্ছেদ করে স্থায়ী সীমনা পিলার দেয়া হবে। উচ্ছেদ অভিযান সফল করতে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহীদুল ইসলামকে প্রধান করে টাস্কাফোর্স কমিটি গঠিত হয় কয়েক মাস আগে। এ কমিটি সর্বশেষ গত ২৩ জুন সভা করেছে।
বিআইডব্লিউটিএ’র বরিশালের নির্বাহী প্রকৌশলী (দায়িত্বপ্রাপ্ত) মামুন অর রশিদ জানান, উচ্ছেদ অভিযান চালাতে পরিকল্পনা প্রনয়নের মুল দায়িত্ব বরিশাল নদী বন্দর কর্মকর্তার। তিনি সহায়ক কর্মকর্তা হিসেবে সব ধরনের সহযোগীতা দিতে প্রস্তত আছেন। এ কর্মকর্তা বলেন, এবারের উচ্ছেদে শক্তিশালী লং-বং ট্রাক্টর ব্যবহারের পরিকল্পনা রয়েছে।। ঢাকা ও নারায়নগঞ্জের উচ্ছেদ অভিযানে ব্যবহৃত এ যন্ত্র দিয়ে বহুতল ভবন অনায়াসে গুড়িয়ে দেয়া যায়। উচ্ছেদের পর জিপিএস সুবিধাসম্পন্ন স্থায়ী পিলার স্থাপন করা হবে। এসব পিলার কোনভাবেই স্থানান্তর করতে পারবেনা দখলদাররা।
বিআইডব্লিউটিএ সুত্রে জানা গেছে, উচ্চাদালতের নির্দেশে সর্বশেষ ২০১৬ সালে বরিশাল নদী বন্দর এলাকায় উচ্ছেদ অভিযান চালানো হয়। তখনকার জরিপ অনুযায়ী ২২০ দখলদার কীর্তণখোলা তীর দখল করে রেখেছে। ২২০ জন দখলদারের তালিকা প্রসঙ্গে বরিশাল বন্দর কর্মকর্তা আজমল হুদা মিঠু বলেন, এবার নতুন করে তালিকা হচ্ছে। অপর একটি সুত্র জানিয়েছে, উচ্ছেদ অভিযান শুরুর ক্ষেত্রে নানা ধরনের চাপ আসছে। তাই সময় ক্ষেপন করছে বিআইডব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ।
এব্যপারে টাস্কফোর্স কমিটির প্রধান অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে ভূমির সীমানা নির্ধারন কাজ শুরু করার কথা বিআইডব্লিউটিএ’র স্থানীয় কর্মকতারা তাকে জানিছেন। সীমনা চিহিৃত করে দখলদারদের স্বেচ্ছায় সরে যাওয়ার জন্য সময় দেবে বিআইডব্লিউটিএ। এরপরই উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে। তিনি বলেন, দ্রুত কীর্তনখোলার তীর দখল মুক্ত করতে সংশ্লিস্টদের তাগিদ দেয়া হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *