নাগরিক রিপোর্ট ॥ অস্থির হয়ে উঠেছে বরিশালে রুপালী ইলিশের বাজার। মাত্র ২ দিনের ব্যবধানে প্রতি মন ইলিশের দাম বেড়েছে ৫ হাজার টাকা। এর কারন হিসেবে জানা গেছে, দূর্গাপূজা উপলক্ষে ভারতে ৫০০ ইলিশ রপ্তানি হওয়ার খবরে ব্যবসায়ীরা যে যার মত করে ইলিশের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। এদিকে ভরা মৌসূমে ইলিশের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন ক্রেতা সাধারন।
বরিশাল পোর্ট রোড ইলিশ মোকাম ঘুরে শনিবার জানা গেছে, ভারতে রফতানির জন্য এলসি সাইজের (৬০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ) ক্রয় করছেন রফতানিকারকরা। এর ফলে গত দুইদিনে এ সাইজের ইলিশের দাম বেড়েছে প্রতিমনে কমপক্ষে ৫ হাজার টাকা। অর্থাৎ কেজিতে দাম বেড়েছে সোয়াশ থেকে দেড়শ টাকা করে। তবে এ দাম বৃদ্ধির খবর নানাভাবে ছড়িয়ে ইলিশ বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হয়েছে। ইলিশ মোকামের বাইরে শনিবার ফুটপাতে দেখা গেল কেজি প্রতি ইলিশের দাম বেড়েছে ২শ টাকা। খুচরা এ বিক্রেতাদের দাবী সব ইলিশ যাচ্ছে ভারতে। একই দিন দুপুরে নগরীর নিউ সার্কূলার রোড এলাকার এক বাসিন্দা ইলিশের এক বিক্রেতার কাছে দাম জানতে চান। এসময় ইলিশ বিক্রেতা তাকে দর জানানোর এক পর্যায়ে বলেন- ‘সরকার ভারতে ইলিশ পাডাইবে, বাজারে ইলিশ নাই। দাম বাড়ছে অনেক বেশী”। এভাবে ইলিশের দাম বাড়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন নগরীর একাধিক সাধারন ক্রেতা।
জানতে চাইলে বরিশাল মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস বলেন, সরকার একটি প্রতিষ্ঠানকে (নাম জানানো হয়নি) ইলিশ রফতানির অনুমতি দিয়েছে। দক্ষিণের মৎস্য আড়তদাররা গত শুক্রবার থেকে দক্ষিণের মোকাম থেকে এলসি সাইজের মাছ সংগ্রহ করে ওই প্রতিষ্ঠানটিতে সরবরাহ করছেন। সাগর-নদী থেকে পর্যাপ্ত ইলিশের সরবরাহ থাকায় বাজারে এর তেমন একটা প্রভাব নেই। খুঁচরা বাজারে ইলিশের দাম বেশী প্রসঙ্গে এ কর্মকর্তা বলেন, এটা অসাধু চক্রের কাজ হতে পারে। পাইকারী বাজারে দাম স্থিতিশীল বলে এ কর্মকর্তার দাবী।
তবে পোর্ট রোড এর ইলিশ মোকামের তথ্যমতে, শনিবার এ মোকামে এলসি সাইজ ইলিশের কেজি বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ৮০০ থেকে সাড়ে ৮০০ টাকা। খুচরা বিক্রেতাদের দাবী দুই দিন আগে এ মাছের দাম কেজিতে দেড় থেকে দুইশ টাকা কম ছিল। তারা কয়েকজন প্রভাবশালী আড়তদারের নাম উচ্চরন করে বলেন, ‘ভারতে পাডানোর জন্য ওনারা সব এলসি মাছ কিনন্যা নেছে’।
ইলিশ রফতানিকারক এসোশিয়েসনের সভাপতি অজিত দাস মনু এ প্রসঙ্গে বলেন, রফতানির অনুমতি পাওয়া প্রতিষ্ঠানটির পক্ষে বরিশালে মাহিম এন্টারপ্রাইজ (প্রতিষ্ঠানটির মালিক জেলা আওয়ামীলীগের শিল্প বিষয়ক সম্পাদক নিরব হোসেন টুটুল) নামক আড়তঘর স্থানীয় এজেন্ট হিসাবে ইলিশ কিনছে। এর প্রভাবে ইলিশের প্রতিমন কমপক্ষে ২ হাজার টাকা দাম বেড়েছে বলে অজিত দাস মনু জানান। তিনি বলেন, রফতানির কারনে চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় সাগরে থাকা ট্রলারগুলোকে বরিশাল মোকামে চলে আসার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। উর্ধ্বগতির এ দাম চলতি মৌসুমে (৯ অক্টোবর পর্যন্ত) কমার সম্ভবনা নেই বলে প্রবীন এই মৎস্য ব্যবসায়ী জানান।
এদিকে একই অবস্থা বিরাজ করছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম বরগুনার পাথরঘাটায়। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা জানান, পাবনা জেলার সেভেন স্টার নামক প্রতিষ্ঠানের স্বত্ত্বাধীকারি হাসমত আলী শুক্রবার থেকে পাথরঘাটায় অবস্থান করে এলসি সাইজের ইলিশ কিনছেন। তিনি ওই ইলিশ ভারতে রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করবেন।
বরগুনা জেলা ট্রলার মালিক সমিতির সভাপতি গোলাম মোস্তফা চৌধুরী বলেন, দুইদিনের ব্যবধানে পাথরঘাটা মোকামে প্রতিমন ইলিশের দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। শনিবার এ মোকামে এলসি সাইজের ইলিশের মন বিক্রি হয়েছে প্রকার ভেদে ৩২ হাজার থেকে ৩৪ হাজার টাকায়। গড়ে প্রতিদিন এ মোকামে ১০ টন ইলিশের আমদানী হচ্ছে। একইভাবে ইলিশের বাজার অস্থির হয়ে উঠছে উপকূলীয় এলাকা কলাপাড়ার মহিপুর বন্দরে।
২০১৯-০৯-২৯