হাজার হাজার রিকশা বন্ধ: বরিশালে আন্দোলনমুখী ১০ সহস্রাধিক শ্রমিক

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ বরিশাল নগরীতে তিন চাকার ব্যাটারীচালিত হলুদ অটোরিক্সা ও ব্যাটরিচালিত রিক্সা বন্ধ করে দেয়ায় শ্রমিক অসন্তোষের সৃষ্টি হয়েছে। আন্দোলনমুখী হয়েছেন এ পেশার সঙ্গে জড়িত দশ সহ¯্রাধিক শ্রমিক। তাদের অভিযোগ, একটি চক্র তিন চাকার নতুন যানবহন সড়কে নামিয়ে কোটি কোটি হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে চলমান দুটি যানবহন বন্ধ করে দিয়েছে। এতে কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছেন। অনিশ্চিত জীবনের মুখে পড়েছে তাদের পরিবার। শ্রমিকরা এজন্য সিটি করপোরেশন ও পুলিশ প্রশানকে দায়ী করেছেন। জানা গেছ, নগরীতে প্রায় ১২ হাজার হলুদ অটোরিক্সা ও ব্যাটারীচালিত রিকশা বন্ধে জনদুর্ভোগ চরম আকার ধারন করেছে।
প্রশাসনের এ সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবীতে ব্যাটারিচালিত রিক্সা শ্রমিকরা আজ বুধবার থেকে আমরন অনশন শুরু করবেন। তাদের নেতৃত্ব দিচ্ছেন বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। অপরদিকে মঙ্গলবার অটোরিক্সা শ্রমিকদের নিয়ে শিগগিরিই কঠোর আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।
নগরীতে পুলিশ প্রশাসন গত ১৯ আগষ্ট থেকে ব্যাটারিচালিত রিক্সা চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে। মঙ্গলবার থেকে নগরীর গুরুত্বপূর্ন সড়কে বন্ধ করে দেয়া হয় অটোরিক্সা চলাচল। পর্যায়ক্রমে পুরো নগরীতে এ যানটি বন্ধ করে দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসন।
বাসদের জেলা সদস্য সচিব ও ব্যাটারিচালিত রিক্সা শ্রমিক ইউনিয়নের উপদেষ্টা ডা. মণীষা চক্রবর্তী জানান, ১৯ আগষ্ট এ যানটি বন্ধ করে দেয়ার পর থেকে তারা রাজপথে আন্দোলন করছেন। জনগনেরও এর ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে। প্রশাসন তাতে কর্ণপাত করছেন না। এমনকি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে দেখা করার জন্য একাধিকবার গেলেও তিনি দেখা করেননি। নিরুপায় হয়ে দাবী আদায়ে আজ বুধবার অশ্বিনী কুমার হলের সামনে আমরণ অনশন শুরু করবেন রিক্সা শ্রমিকরা।
অপরদিকে পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী মঙ্গলবার থেকে নগরীর প্রধান সড়ক সদর রোড, ফজলুল হক এভিনিউ, লঞ্চঘাট ও চকবাজার এলাকায় ইজিবাইক চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. খায়রুল আলম জানান, আপাতত উল্লেখিত সড়কগুলোতে বন্ধ করা হলেও পর্যায়ক্রমে পুরো নগরী থেকে এ যানটি উচ্ছেদ করা হবে।
চলতি অর্থবছর (২০১৯-২০) থেকে এ যানবহনটির নবায়ন বন্ধ করেছে সিটি বরিশাল সিটি করপোরেশন (বিসিসি)। এ প্রসঙ্গে বিসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইসরাইল হোসেন বলেন, বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ এ যানবহনটি নবায়ন না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ফলে স্বাভাবিকভাবেই এ যানটি এখন নগরীতে অবৈধ যানবহন। অবৈধ যানবহন বন্ধ করার দায়িত্ব মেট্রোপলিটন পুলিশের।
প্রশাসনের এ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার বিকেলে সাংবাদিক সম্মেলন করেন চরমোনাই পীরের দল ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করীম। কয়েক হাজার অটোরিক্সা শ্রমিকের উপস্থিতিতে তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অটোরিক্সা বন্ধ করা হচ্ছে। রায়ে উল্লেখ আছে, যান্ত্রিক যানবাহন বন্ধ করার। তারমধ্যে পড়ে মহাসড়কে চলাচলকারি স্থানীয়ভাবে তৈরী নছিমন-করিমন-ভটভটি ইত্যাদি।
মুফতি ফয়জুল করীম বলেন, একটি প্রভাবশালী চক্র নতুন আরেকটি যানবহন সড়কে নামিয়ে বিপুল পরিমান টাকা হাতিয়ে নেয়ার উদ্দেশ্যে ইজিবাইক উচ্ছেদের ষড়যন্ত্র করছে। তারা শ্রমিকদের পেটে লাথি দিতে চায়। এরা বেকার হলে নগরীতে চুরি, ডাকাতি বেড়ে যাবে। তাছাড়া এই যান বন্ধ করায় জনদুর্ভোগ বেড়েছে। প্রশাসন এ সিদ্ধান্ত থেকে সরে না আসলে বরিশাল অচল করে দেয়ার কর্মসূচী দেয়া হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান মুফতি ফয়জুল করীম।
বিসিসি সুত্রে জানা গেছে, তাদের নিবন্ধিত ইজিবাইক আছে ২৬১০টি। প্রতিটি ইজিবাইব ৪৩৩০ টাকায় একবছরের জন্য নিবন্ধন নবায়ন হতো। চলতি বছরের জুলাই থেকে এ যানগুলোর নিবন্ধন নবায়ন হয়নি।
বিসিসির নিবন্ধিত ইজিবাইক ২৬১০টি হলেও নিবন্ধিনহীন ইজিবাইক আছে কয়েক হাজার। এর সংখ্যা সঠিক না জানা গেলেও কমপক্ষে ৭ হাজার হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। অপরদিকে ব্যাটারিচালিত রিকশা রয়েছে কমপক্ষে ৫ হাজার। প্রায় ১২ হাজার ইজিবাইক ও ব্যাটারিচালিত যানবহন বন্ধ করা হলে নগরীতে কমপক্ষে ১০ হাজার শ্রমিক বেকার হবেন। এতে নগরীতে অপরাধ বৃদ্ধিরও আশংকা করছেন বিভিন্ন সংগঠন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *