অভিজিৎ দম্পতির নোবেল জয়ে যে কারনে উচ্ছ্বাস নেই বিজেপিতে

Spread the love

ভারতীয় বংশোদ্ভূত অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জীর নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর তাঁকে ঘিরে শুরু হয়েছে রাজনীতির তর্ক।

তিনি বারে বারেই নরেন্দ্র মোদীর নোট বাতিলসহ নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কড়া সমালোচনা করেছেন।

এছাড়াও মি. ব্যানার্জী যেহেতু নির্বাচনের আগে রাহুল গান্ধীকে দারিদ্র বিমোচনের জন্য ‘ন্যায়’ নামের একটি প্রকল্প তৈরি করে দিয়েছিলেন, তাই হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলো তার এই পুরস্কারপ্রাপ্তিতে কিছুটা নিস্পৃহ বলে মনে করছেন অনেকেই।

উদাহরণ হিসাবে বলা হচ্ছে পুরস্কারের ঘোষণার প্রায় চার ঘন্টা পরে কেবল একটি সাদামাটা টুইট করেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, যিনি সামাজিক মাধ্যমে অন্য প্রায় সব ভারতীয় নেতা নেত্রীর থেকেই এগিয়ে থাকেন।

তিনি লেখেন, “অর্থনৈতিক বিজ্ঞানে আলফ্রেড নোবেলের স্মৃতি স্ভেরিয়াস রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার পাওয়ার জন্য অভিজিৎ ব্যানার্জীকে অভিনন্দন। দারিদ্র বিমোচনের ক্ষেত্রে তিনি উল্লেখযোগ্য অবদান রেখেছেন।”

মি. মোদীর অনেক দেরীতে অভিনন্দন জানানো নিয়ে যেসব প্রশ্ন উঠছে, তা নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চেয়েছিলাম বিজেপির- পলিসি রিসার্চ গ্রুপের উপপ্রধান অনির্বান গাঙ্গুলির কাছে।

“প্রধানমন্ত্রী কখন টুইট করবেন সেটাও কি লোক ঠিক করে দেবে? দুঘন্টা পরে না চার ঘন্টা পরে কীভাবে অভিনন্দন জানাবেন, সেটা তো তিনিই ঠিক করবেন! এরকম তো কোনও নিয়ম কোথাও লেখা নেই যে অভিজিৎ ব্যানার্জী পুরস্কার পেয়েছেন বলে আধঘন্টার মধ্যেই অভিনন্দন জানাতে হবে,” বলছিলেন মি. গাঙ্গুলি।

নোট বাতিলসহ নরেন্দ্র মোদীর নানা অর্থনৈতিক পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করে এসেছেন নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অভিজিৎ ব্যানার্জী। সেকারণেই কি তাকে কটাক্ষ করা হচ্ছে সামাজিক মাধ্যমে?

এ প্রসঙ্গে মি. গাঙ্গুলি বলছিলেন, “সমালোচনা তিনি করতেই পারেন, তিনি তার দৃষ্টিভঙ্গি থেকে কথা বলেছেন, কিন্তু তাই বলে বিজেপি বা তার সহযোগী কোনও সংগঠন তাকে কোনওরকম কটাক্ষ করে নি। কোনও ব্যক্তি যদি করে থাকে, সেটার দায়িত্ব সংগঠনের নয়।”

কলকাতার সিনিয়ার সাংবাদিক সুদীপ্ত সেনগুপ্ত আবার মনে করেন সংঘ পরিবারের ঘনিষ্ঠরা যে অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জীর মতো অর্থনীতিবিদের নোবেল জয়কে ঠিকমতো হজম করতে পারবেন না, এটাই স্বাভাবিক।

“যদি সংঘ পরিবারের অর্থনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি দেখেন, সেখানে তারা মনে করে যদি বাজার অর্থনীতির অবাধ বিকাশ ঘটে, তাহলেই সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। আর অভিজিৎ ব্যানার্জীরা যে অর্থনীতির কথা বলেন, তাতে সবসময়ে তারা উল্টোদিকটা দেখেন, মানুষের হাতে কীভাবে অর্থ আসবে, সেটা নিয়ে ভাবেন। অর্থাৎ দুটো দৃষ্টিভঙ্গি সম্পূর্ণ বিপরীত মেরুর। তাই পুরস্কার প্রাপ্তির পরে পুরস্কারটাকেই খাটো করে দেখানো হবে, কটাক্ষ করা হবে, এতে আমি অস্বাভাবিক কিছু তো দেখছি না,” বলছিলেন মি. সেনগুপ্ত।

হিন্দুত্ববাদী নানা সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন, এমন ব্যক্তিরা কটাক্ষ করছেন সোমবার থেকেই।

কেউ যেমন বলছেন অর্থনীতিতে নোবেল পুরস্কারই নেই, তাই অভিজিৎ ব্যানার্জী নোবেল পেয়েছেন, এমনটা বলা ঠিক নয়।

কেউ টেনে আনছেন আরেক নোবেলজয়ী বাঙালী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনকেও।

মন্তব্য করছেন অভিজিৎ ব্যানার্জী আর অমর্ত্য সেনদের মতো অর্থনীতিবিদদের জন্যই পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতির এই দুর্দশা।

কেউ অর্থনীতির নোবেল বলে পরিচিত স্ভেরিয়াস রিক্সবাঙ্ক পুরস্কার যে নোবেল নয়, সেটা প্রমান করার জন্য নানা তথ্য আর ছবি দিচ্ছেন।

তবে হিন্দুত্ববাদী কোনও সংগঠনের তরফে আনুষ্ঠানিকভাবে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদকে কটাক্ষ করা হয় নি, এটাও মনে করিয়ে দিলেন বিজেপির তাত্বিক নেতা অনির্বান গাঙ্গুলি।

দিল্লির জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তণ ছাত্র অভিজিৎ বিনায়ক ব্যানার্জী। একই বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েছেন বর্তমান অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামানও।

ওই বিশ্ববিদ্যালয়েরই অর্থনীতির অধ্যাপাক অমিতশোভন রায় অবশ্য বলছিলেন অভিজিৎ ব্যানার্জী যেসব সমালোচনা করেছেন, সেগুলো রাজনৈতিক সমালোচনা ছিল না – সেগুলো ছিল একজন অর্থনীতিবিদের দৃষ্টিভঙ্গি।

“আমি মনে করি না অভিজিৎ ব্যানার্জী সরকারের নানা অর্থনৈতিক নীতি নিয়ে যেসব সমালোচনা করেছেন, সেগুলোর মধ্যে রাজনীতি ছিল। তিনি একজন অর্থনীতিবিদ, সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই তিনি কথাগুলো বলেছেন। নোট বাতিল নিয়ে তো পৃথিবীজুড়ে বহু অর্থনীতিবিদও বলেছেন। কিন্তু সেগুলো যদি কেউ মনে করেন কোনও তাদের দলের সমালোচনা করছেন অভিজিত, সেটা ভুল হবে,” বলছিলেন অমিতশোভন রায়।

একদিকে যখন সামাজিক মাধ্যমে অভিজিৎ ব্যানার্জীকে কটাক্ষ করা হচ্ছে, অন্যদিকে ওইসব মন্তব্যকে ট্রলও করা হচ্ছে ব্যাপকভাবে।

ট্রলগুলির সুর মোটামুটি একই – বিজেপি সরকারের সমালোচনাকারী অর্থনীতিবিদ নোবেল পেয়ে যাওয়ায় সরকার- সমর্থকদের গাত্রদাহ হচ্ছে, সেজন্যই অনেক দেরীতে প্রধানমন্ত্রীর সাদামাঠা টুইট আর তার সমর্থকদের নোবেল নিয়েই নানান প্রশ্ন!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *