আইন শিথিলের দাবী: আয়ারল্যান্ডে কর্মী সংকটে বাংলাদেশী রেস্টুরেন্ট

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল ॥ অতীতের রেস্টুরেন্ট মালিকদের শোষনের কুফল পাচ্ছেন বর্তমান রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীরা। জনবল সংকটের অভাবে অধিকাংশ রেস্টুরেন্টগুলোতে মালিকরা নিজেরাই কাজ করে ব্যাবসা টিকিয়ে রাখছেন কোনভাবে। ২০০৫ সাল পর্যন্ত ওয়ার্ক পার্মিটে অনেক ভারতীয় ও বাংলাদেশী ক্যাটারিং শিল্পে এদেশে এসেছেন।
এখানে আসার পর তৎকালীন রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীরা সপ্তাহে ছয়দিনে ৬০ ঘন্টা কাজ করিয়ে সপ্তাহে ১২০ থেকে ১৪০ ইউরো দিত, কিন্তু আইরিশ আইন অনুযায়ী নুন্যতম বেতন ৬০ ঘন্টায় ৫০০ ইউরোর মত। সাথে সরকারী খাতায় কম ঘন্টা দেখিয়ে ট্যাক্স ফাঁকি দেয়া ছিল নিত্যদিনের। পাঁচটি বছর শোষনের পরে ওয়ার্ক পারমিটের লোকগুলি যখন ২০১০ থেকে আইরিশ নাগরিকত্ব পেল, তখন থেকে ধীরে ধীরে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে কেউ কেউ নিজেই রেস্টুরেন্ট দিল, আবার কেউ কেউ আইরিশ কোম্পানীতে কাজ করে নিজের ভাগ্যের চাকা ঘুরাতে লাগলো।
সফলও হয়েছেন অনেকেই। আর তখন থেকেই একটু একটু করে বাড়তে লাগলো লোক সংকট। এ বিষয় বেশ কয়েকজন বর্তমান রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীর সাথে কথা বললে তারা জানান- জীবনের বড় একটা অংশ নিম্ন বেতনে কাজ করে পরিবারের জন্য তেমন কিছুই করতে পারিনি। আর সাবেক রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীরা আমাদের ঠকিয়ে এ দেশের ট্যাক্স ফাঁকি, মদ বিক্রির হারাম টাকা দিয়ে দেশে, এখানে নামে বেনামে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
কিছু কিছু মদ ব্যাবসায়ীরা আবার হারামের উপর ভর করে হালাল দোকান দিয়ে পাপের প্রায়শ্চিত্ত করছেন। তারা আবার হালাল ও হারামের সবকও দেন বলে অভিযোগ আছে। তাদের এ সব কর্মকান্ডের খেসারত দিতে হচ্ছে বর্তমান রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীদের। অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে কর্মচারীদের বেশ ভালই বেতন তারা দিচ্ছেন, কর্মচারীদের প্রতি তাদের কমিটমেন্টও চোখে পরার মত, তারপরও লোক পাচ্ছেনা রেস্টুরেন্টের কাজের জন্য।
এদিকে ওয়ার্ক পারমিটে জনবল আনাও প্রায় কঠিন, তাই ঝুঁকিতে আছে রেস্টুরেন্টগুলো। বর্তমান আইরিশ আইনে যে শর্তাবলী জুড়ে দেয়া হয়েছে ওয়ার্ক পারমিটে ক্যাটারিং শিল্পের জন্য, এটা মেনে লোক আনা অনেকটাই দূরহ। এ আইন শিথিল হলে এ লোক সংকট কাটিয়ে ওঠা সম্ভব বলে মনে করেন এ দেশের বর্তমান ব্যাবসায়ীরা। তবে এর জন্য অনেকেই দায়ী করেছেন আগের রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীদের, তাদের বেতন কম দেয়ার কারনে একদিকে সরকারও যেমন রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে, আরেকদিকে কর্মচারীরা সরকারী সুবিধা নিতে বাধ্য হয়েছেন। আর এতে করে চাপ পরেছে আইরিশ অর্থনীতিতে।
আবার কিছু কিছু রেস্টুরেন্টের কর্মচারীরা মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন, তার ক্ষতিপূরনও দিতে বাধ্য হয়েছিল। সবচেয়ে স্পর্শকাতর বিষয় ছিল- এক ভাই তার আপন ভাইয়ের নামে মামলা করে বসেন। কোর্টের মাধ্যমে বড় একটা ক্ষতিপূরনও দিতে বাধ্য হয়েছিলো। আবার কিছু ব্যাবসায়ী মামলার ভয়ে রাতারাতি রেস্টুরেন্টের মালিকানা পরিবর্তন করে হালাল ব্যাবসায় ঢুকে গিয়ে সাধু সাজার অপচেস্টা করেছিলেন।
তবে আগের সেই হীনমন্যতার মালিক এখন নেই বললেই চলে। বর্তমান রেস্টুরেন্ট ব্যাবসায়ীদের বড় একটা অংশ ভুক্তভোগী, তাই তারা তাদের সেরাটাই দিচ্ছেন কর্মচারীদেরকে। অনেক ব্যাবসায়ী এ বিষয়ে ক্ষোভের সাথে বলেন- আমরা আমাদের ব্যাবসা চালাতে হিমশিম খাচ্ছি, তারপরও বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে আগের মালিকদের মত অসহায় লোকদের উপর কসাইয়ের মত ছুঁড়ি চালাইনি। আগের রেস্টুরেন্টের ব্যাবসায়ীদের ঐ সব কাজের জন্য আমাদের দেশ থেকে লোক আনা অনেক কঠিন হয়ে গেছে, এরকম চলতে থাকলে লোকবলের অভাবে রেস্টুরেন্ট বন্ধ করে দেয়া ছাড়া কোন উপায় থাকবেনা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *