কে এই কাসেম সোলাইমানি

Spread the love

নাগরিক ডেক্স : ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ডের এলিট শাখা কুদস ফোর্সের প্রধান জেনারেল কাসেম সোলাইমানি ইরাকে মার্কিন হামলায় নিহত হয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পের নির্দেশেই তাকে হত্যা করে হয়েছে। বৃহস্পতিবার ইরাকের রাজধানী বাগদাদে মার্কিন সামরিক বাহিনীর চালানো এক হামলায় নিহত হন সোলাইমানি। ইরাকে মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার একদিন পর এই হামলা চালালো যুক্তরাষ্ট্র। সোলাইমানি নিহতের খবর নিশ্চিত করেছে ইরানও। হামলায় তিনি সহ, ইরাকি মিলিশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহানদিসও নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে ইরান। এই ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনা ব্যাপক আকারে বৃদ্ধি পাবে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মেজর জেনারেল কাসেম সুলাইমানি
১৯৯৮ সাল থেকে কুদস ফোর্সের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন মেজর জেনারেল কাসেম সোলাইমানি।
বিগত ২০ বছরে তার ওপর বহু হামলা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, ইসরাইল সহ বহু আরব গোয়েন্দা সংস্থা। কিন্তু বৃহস্পতিবারের আগে কোনো হামলাই সফল হয়নি। গত বছরের শুরুর দিকেও খবর বের হয়েছিল যে, তাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে যুক্তরাষ্ট্র।

সোলাইমানি নেতৃত্বাধীন কুদস ফোর্স বিদেশে চোরাগুপ্তা অভিযান চালিয়ে থাকে। সিরিয়ায় বাহিনীটির হস্তক্ষেপের অভিযোগ স্বীকার করেছে ইরান। ২০১১ সালে সিরীয় প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদ যখন গৃহযুদ্ধে হারার পথে ছিলেন তখন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে যান কুদস ফোর্স প্রধান। পাশাপাশি বাশারের পক্ষে যুদ্ধ করতে অস্ত্র দিয়েছে কয়েক হাজার শিয়া মিলিশিয়াকে। এছাড়া, ইরাকে আইএস বিরোধী লড়াইয়েও তার ভ’মিকা বিশাল। ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধকৌশলের জন্য বিশ্বজুড়ে ব্যাপক পরিচিতি পান তিনি।
ইরানে সুলেইমানি বিখ্যাত তারকাদের চেয়েও জনপ্রিয়। ট্রাম্প প্রশাসনের অভিযোগ, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে ইরানের প্রধান হাতিয়ার হচ্ছে তার নেতৃত্বাধীন কুদস ফোর্স। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও গত বছরের এপ্রিলে ইরানের রেভুলিউশনারি গার্ডস ও কুর্দস ফোর্সকে সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।

১৯৯৮ সাল থেকে ইরানের সবচেয়ে ক্ষিপ্র, চতুর ও প্রভাবশালী বাহিনীর নেতৃত্ব দিয়ে আসছিলেন সোলাইমানি। প্রথম দিকে তার বাহীনির তৎপরতা ছিলো খুবই নগণ্য। সেসময় লেবাননে হিজবুল্লাহ, সিরিয়ায় আসাদ ও ইরাকে শিয়া মিলিশিয়াদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করেন তিনি। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় লাইমলাইটে এসেছেন। প্রায়ই ইরানের সুপ্রিম লিডার আয়াতুল্লাহ খোমেনি ও অন্যান্য প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে দেখা গেছে তাকে। তার নেতৃত্বে ইরানের বাইরে গোয়েন্দা, আর্থিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে ব্যাপক প্রভাব অর্জন করে কুদস ফোর্স।

তবে সোলাইমানির উত্থান হয়েছে একেবারে সাধারণ একজন হিসেবে। তার জন্ম ইরানের পূর্বাঞ্চলে দরিদ্র পিতা-মাতার ঘরে। পরিবারকে সাহায্য করতে ১৩ বছর বয়স থেকেই কাজ শুরু করেন তিনি। ১৯৭৯ সালে ইরানে বিদ্রোহের সময় সামরিক বাহিনীতে যোগ দিয়ে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেন তিনি। মাত্র ছয় সপ্তাহের প্রশিক্ষণ নিয়ে ব্যাপক কৌশলগত ক্ষিপ্রতা ও চতুরতা প্রদর্শন করেন। ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময় তার অবদানের জন্য জাতীয় বীরের পরিচিত পান এ জেনারেল।

২০০৫ সালে ইরাকে ফের সরকার গঠনের পর সেখানকার রাজনীতিতে প্রভাব বৃদ্ধি করেন সোলাইমানি। সে সময় ইরাকে গঠিত হয় শিয়া-ভিত্তিক রাজনৈতিক দল ও প্যারামিলিটারি বাহিনী বদর অর্গানাইজেশন। দেশটিতে ইরানের সবচেয়ে পুরনো প্রক্সি বাহিনী হিসেবে পরিচিত তারা।

২০১১ সালে সিরিয়ায় গৃহযুদ্ধের সময় ইরাকি মিলিশিয়াদের আসাদ সরকারের পক্ষে যুদ্ধ করতে নির্দেশ দেন সুলাইমানি। এছাড়া, ইরাকে জঙ্গি গোষ্ঠী আইএস বিরোধী যুদ্ধে ইরান-সমর্থিত শিয়া প্যারামিলিটারি ইউনিটগুলো ও বিখ্যাত হাশদ আল-শাবি (পপুলার মোবালাইজেশন ফোর্সেস) ইরাকি মিলিটারির সঙ্গে মিলে লড়াই করে। এসব সংগঠনের অনেকগুলোই ছিল সুলেইমানির নিয়ন্ত্রণে।

বহুবার মরেছেন তিনি
এখন পর্যন্ত বহুবার সোলাইমানি নিহত হয়েছেন বলে গুজব ছড়িয়েছে। ২০০৬ সালে ইরানে এক বিমান দুর্ঘটনায় বেশ কয়েকজন সামরিক কর্মকর্তা নিহত হন। তখন গুজব ছোড়ায় যে, সুলেইমানি মারা গেছেন। এরপর ২০১২ সালে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে এক বোমা হামলার পরও তার মৃত্যুর খবর ছড়ায়। ২০১৫ সালে গুজব ছড়ায় যে, আসাদপন্থি বাহিনীর নেতৃত্ব দিতে গিয়ে সিরিয়ায় এক হামলায় নিহত বা গুরুতর আহত হয়েছেন সুলেইমানি।

গত বছরের আগস্টে সিরিয়াজুড়ে রেভুলিউশনারি গার্ডের ঘাঁটিগুলোয় ব্যাপক ড্রোন হামলা চালায় ইসরাইল। ইসরাইলের গোয়েন্দা বিষয়ক মন্ত্রী ইসরাইল কাতজ পরে জানান, সেসময় সোলেইমানিকে হত্যার চেষ্টা করছিল ইসরাইল। সর্বশেষ গত অক্টোবরে তেহরান দাবি করেছে, তারা সুলেইমানির ওপর ইসরাইলি ও আরব সংস্থাগুলোর একটি হামলা নস্যাৎ করেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *