মালিকের মেয়ের বিয়ে : উৎসবে মাতোয়ারা শ্রমিকরা

Spread the love

নাগরিক ডেক্স : খোঁপায় ফুল গুঁজে মেয়েরা হলুদ শাড়ি আর ছেলেরা পরেছেন পাঞ্জাবি। কারখানাটিও সেজেছিল অপরূপ সাজে। ছাদে প্যান্ডেল টানিয়ে মঞ্চ তৈরি করা হয়েছিল। হলুদ গাদা দিয়ে সাজানো মঞ্চ। মঞ্চে বসা নববধূর সঙ্গে হাতে হাত দিয়ে সবাই নেচেছেন। গেয়েছেন বিয়ের গান। এরা সবাই পোশাক শ্রমিক। গত বৃহস্পতিবার গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান হয়ে গেল চট্টগ্রাম মহানগরীর নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার ইনডিপেনডেন্ট অ্যাপারেলস নামে এক পোশাক কারখানায়।
সেদিন কারখানাটি পরিণত হয়েছিল বিয়ের কমিউনিটি সেন্টারে। সুই-সুতা ছেড়ে কারখানার সবাই মেতেছিলেন গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে। বধূ বেশে কনেটি কিন্তু পোশাক শ্রমিক নন। তিনি কারখানার মালিকের একমাত্র মেয়ে সাইকা তাফান্নুম। কারখানার মালিক চট্টগ্রাম চেম্বারের পরিচালক এস এম আবু তৈয়ব। তিনি নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মহানগর কমিটির সভাপতি। শ্রমিকদের নিয়ে কারখানাতেই মেয়ের গায়ে হলুদের মতো এমন একটি অনন্য অয়োজনে টের পায়নি কাকপক্ষীও। আশপাশের মানুষও বুঝতেই পারেনি, এখানে কি হচ্ছে। তবুও পোশাক শ্রমিকদের খোঁপায় ফুল। গায়ে হলুদ শাড়ি ও নাচ-গান শুনে এ কান থেকে ওকানে ছড়িয়ে পড়ে
ঘটনাটি। আর এ বিষয়ে এস এম আবু তৈয়ব বলেন, আমি প্রচারের জন্য এটা করিনি। আমি শ্রমিকদের আমার পরিবারের সদস্য মনে করি। তাই একমাত্র মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান কারখানার শ্রমিক-কর্মচারীদের নিয়ে করেছি। এটা তাদের প্রাপ্য। কারণ আমার জন্য, আমার কন্যার জন্য, আমার পুরো পরিবারের জন্য গার্মেন্ট কারখানার এই খেটে খাওয়া শ্রমিকদের প্রচুর ভূমিকা রয়েছে। আজ আমি এই অবস্থানে আসার পেছনে তাদের রক্তঘামই মূল। তারা আমার সন্তানকে একটি মর্যাদার আসন দিয়েছেন। আমি মনে করি, এরা আমার পরিবারের অংশ। তাই মেয়ের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানটি আমি তাদের সঙ্গে করেছি। রোববার মেয়ের বিয়ে অনুষ্ঠানেও শ্রমিকরা সঙ্গে থাকবেন।
আশপাশের লোকজন জানান, গার্মেন্ট কারখানায় প্রতিদিন শ্রমিকরা আসে যে যার মতো করে। কিন্তু সেদিন হলুদ শাড়ি-পাঞ্জাবি ও খোঁপায় ফুল দেখে সবার চোখ কপালে উঠে। নাচ-গান শুনে খবর নিতে গিয়ে জানা যায় মালিকের মেয়ের গায়েহলুদ অনুষ্ঠান।
শ্রমিকরা জানান, মালিক যে শাড়িটি নিজের স্ত্রী ও স্বজনদের জন্য কিনেছেন, ঠিক একই শাড়ি কিনেছেন কারখানার সবশ্রমিকের জন্য। পুত্রসহ নিজে গায়েহলুদের অনুষ্ঠানে যে পাঞ্জাবি পরেছেন, ঠিক একই পাঞ্জাবি দিয়েছেন গার্মেন্টসের পুরুষ শ্রমিক ও কর্মকর্তাদের। অনুষ্ঠানে যেই বাবুর্চি রান্না করেছেন, তাকে দিয়েই একই মেন্যুর রান্না পরিবেশিত হয়েছে গার্মেন্ট শ্রমিক-কর্মচারীদের মাঝেও। পোশাক শ্রমিকরাও কেউ পঞ্চাশ টাকা, কেউ বিশ টাকা, কেউবা একশ টাকা চাঁদা দিয়ে নিজেদের মতো করে চমৎকার এক সেট স্বর্ণের গহনা উপহার দিয়েছেন কন্যাকে। প্রায় দেড় লাখ টাকা দিয়ে কেনা সেই গহনা মালিকের মেয়ের গায়ে পরিয়ে দিয়েছেন পোশাক শ্রমিকরাই।
কারখানার কল্যাণ কর্মকর্তা রুবি আকতার বলেন, আমরা অনেক আনন্দ করেছি। সাইকা আপুকে হলুদ লাগিয়েছি সবাই। এমন মালিক হয় না। আমাদের পরিবারের সদস্যদের মতো আগলে রাখেন তিনি। এ রকম একটি আয়োজন আমাদের মুগ্ধ করেছে।
কারখানার শ্রমিক ইশিতা আকতার বলেন, আমাদের ভাইবোনদের বিয়েশাদি হলে যে রকম আনন্দ করি, সেভাবেই সবকিছু করেছি। নিজ হাতে আপাকে হলুদ লাগিয়েছি। এক টেবিলে খেয়েছি। মনেই হয়নি আমরা শ্রমিক। তাঁরা মালিক।
অনুষ্ঠানে লোকমান হোসেন নামে এক শ্রমিক আইয়ুব বাচ্চুর সেই তুমি কেন এত অচেনা হলে… গানটি গান। শ্রমিক-কর্মচারীরা নাচগান, ফ্যাশন শোসহ নানা আয়োজনে অংশ নেন। এ সময় আবু তৈয়বের স্ত্রী, দুই ছেলে, বড় ছেলের স্ত্রী উপস্থিত ছিলেন। তাঁরাও গানের তালে তালে উৎসাহ দিয়েছেন শ্রমিকদের। জড়িয়ে ধরে শ্রমিকদের সঙ্গে ছবিও তুলেছেন তাঁরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *