মেহেন্দীগঞ্জে আদালত ভবন গুড়িয়ে দিলেও নিরব প্রশাসন

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জে ঐতিহাসিক একটি আদালত ভবন প্রকাশ্য দিবালোকে গুড়িয়ে দিয়ে তা নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা। ব্রিটশ আমলে গড়ে ওঠা এ আদালত ভবনটি এক সপ্তাহ ধরে জনসম্মূখে ভাঙ্গা হয়। কিন্তু এটি সম্পর্কে উপজেলা প্রশাসন, থানা পুলিশসহ সংশ্লিস্টরা রহস্যজনক কারনে নিশ্চুপ রয়েছে। গেল ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ্যে ভবনটি ভাঙ্গা হলেও বরিশাল গনপূর্ত বিভাগ গত ৬ জানুয়ারী অজ্ঞাতদের আসামী করে মামলা করায় অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি এবং স্পেশাল পিপি জানিয়েছেন, প্রকাশ্যে আদালত ভবন ভাঙ্গায় জেলা জজও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। স্থানীয় একজন শীর্ষ নেতার নির্দেশে পৌর কাউন্সিলর মনির জমাদ্দার এটি ভেঙ্গেছে। জানা গেছে, আদালতের ওই স্থানটি দখল করার জন্যই প্রায় ২০ লাখ টাকার ভবনটি অবৈধভাবে ভাঙ্গা হয়।
গেল ডিসেম্বরের শেষ নাগাদ বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ পৌর এলাকায় অবস্থিত ঐতিহাসিক আদালত ভবনটি ভাঙ্গা শুরু করে শ্রমিকরা। এর নেতৃত্ব দেন মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি মনির জমাদ্দার। দিনের বেলা ৬/৭দিন ভবনটি ভাঙ্গার সময় সাধারন মানুষের মধ্যে নানা কৌতুহল সৃস্টি হয়। স্থানীয়রা জানান, এর আসপাশেই উপজেলা পরিষদ ছিল। কিন্তু উপজেলা প্রশাসন কিংবা পুলিশ প্রশাসন থেকে কোন বাধা দেয়া হয়নি। খোজ নিয়ে জানা যায়, ভবনটি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে কোন দরপত্র আহবান করা হয়নি। সরকারী অনুমতিও নেয়া হয়নি। কিন্তু পৌনে ২শ বছর আগের ঐতিহাসিক এ আদালত ভবন ভাঙ্গায় প্রশাসন ছিল নিশ্চুপ। ভবনের ভেঙ্গে ফেলা অংশ ফেলা হয়েছে কাউন্সিলর মনির এর ঠিকাদারি কাজের নির্মানাধিন সড়কে। ওই জমি দখল করাই তাদের টার্গেট।
জানতে চাইলে বরিশাল গনপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জে আদালত ভবন ভাঙ্গার ঘটনায় প্রথমে জিডি করা হয়েছে। পরে ৬ জানুয়ারী তার অধিনস্থ উপ বিভাগীয় প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম বাদী হয়ে মেহেন্দীগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় অজ্ঞাতদের আসামী করা হয়েছে। সার্ভে ভেল্যু অনুযায়ী ভবনটির মুল্য ২০ লাখ টাকা উল্লেখ করা হয়েছে। প্রকাশ্য দিবালকে ভবন ভাঙ্গার ঘটনায় কেন অজ্ঞাত আসামী করা হল এ প্রসঙ্গে নির্বাহী প্রকৌশলী জেরাল্ড অলিভার গুডা বলেন, মেহেন্দীগঞ্জ বিচ্ছিন্ন এলাকা হওয়ায় এ বিষয়ে তারা ততোটা অবগত নন। তবে আদালত ভবন ভাঙ্গা বিধি সম্মত হইনি।
বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের স্পেশাল পিপি মেহেন্দীগঞ্জ নিবাসী অ্যাড. মনসুর আহমেদ বলেন, গনপূর্তের মামলায় অজ্ঞাত নামা কেন হবে। প্রকাশ্যে দিনের বেলায় আদালত ভবনটি ভাঙ্গা হয়েছে। কার নির্দেশে ভাঙ্গছে, কারা ভাঙ্গছে তা ইউএনও, উপজেলা পরিষদ, স্থানীয় লোকজন দেখেছে। জেলা জজ আদালত এ ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। মেহেন্দীগঞ্জ আদালতের বিচারক জিডি করেছেন। তিনি বলেন, ১৮৫৬ সালে ব্রিটিশরা এই আদালতে মুন্সেফ চৌকি বসাতেন। ১৯৮৫ সালেও এখানে আদালতের কার্যক্রম চলেছে। এটি পরিত্যাক্ত ঘোষনাও হয়নি। অথচ শুনেছি স্থানীয় কাউন্সিলর মনির জমাদ্দারের নেতৃত্বে আদালত ভবন গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, মনির মেহেন্দীগঞ্জের একজন জনপ্রতিনিধির নির্দেশে এ সরকারী ভবনটি কোন অনুমতি ছাড়াই ভেঙ্গে ফেলেছে।
বরিশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পিপি অ্যাড. এ কে এম জাঙ্গির বলেন, আদালত ভবন ভাঙ্গায় গনপূর্ত বিভাগ তাকে চিঠি দেয় মামলা তৈরির জন্য। তিনি বিষয়টি জেলা জজ, ডিসি ও মন্ত্রী পদমর্যাদার আবুল হাসানাত আবদুল্লাহকে অবহিত করেন। পরে মামলার ড্রাফট প্রস্তুত করেন। তাতে মেহেন্দগিঞ্জ পৌর কাউন্সিলর মনির জমাদ্দারকে আসামী উল্লেখ করা হয়। কিন্তু গনপূর্ত রহস্যজনকভাবে তাকে আর কিছু জানায়নি। আদালত ভবন ভাঙ্গার ঘটনায় জেলা ও দাওয়ার জজ এর পক্ষ থেকে জিডিও করা হয়েছে। পিপি জাহাঙ্গর বলেন, আদালত তো ক্ষোভ প্রকাশ করতেই পারেন। একটি সরকারী ভবন নিয়ম না মেনে ভাঙ্গায় তিনিও ক্ষুব্ধ। এর সাথে জড়িতদের দৃস্টিন্তমুলক বিচার হওয়া দরকার।
আদালত ভবন ভাঙ্গার নেতৃত্ব দেয়া মেহেন্দীগঞ্জ পৌরসভার ৯নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও উপজেলা শ্রমিকলীগ সভাপতি মনির জমাদ্দার বলেন, আদালত ভবন কারা ভেঙ্গেছে তা তিনি জানেন না। উপজেলা পরিষদের নাকের ডগায় ভবনটি ভাঙ্গা হয়েছে। এ ঘটনা তো ইউএনও, প্রকৌশলী, ওসির অজানা নয়। তার এলাকার মধ্যে ভবন হলেও তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না।
তবে মেহেন্দীগঞ্জ থানার ওসি আবেদুর রহমান অবশ্য বলেছেন, আদালত ভবন ভাঙ্গায় মামলা একটি করেছে গনপূর্ত বিভাগ। তাতে আসামী করা হয়েছে অজ্ঞাত। এ ঘটনায় কারা জড়িত তা তিনি জানেন না। ঘটনাটি কবে ঘটেছে তাও তার জানা নেই। দিনদুপুরে কয়েকদিন ধরে আদালত ভবন ভাঙ্গার মামলায় এখনও কাউকে আটক করা হয়েছে কিনা এ প্রসঙ্গে ওসি আবেদুর বলেন, এখনও কাউকে আটক করা যায়নি। তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
এব্যপারে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিযুষ চন্দ্র দে বলেন, আদালত ভবন ভাঙ্গার বিষয়ে তিনি অবগত নন। তবে তাকে ওসি জানিয়েছেন যে আদালত ভবন ভাঙ্গার ঘটনায় গনপূর্ত মামলা দায়ের করেছে। ভবনটি ভাঙ্গার ক্ষেত্রে প্রসিডিউর মানা হয়েছে কিনা তা ফাইল না দেখে বলা যাবে না। তাছাড়া যেহেতু এ ঘটনায় মামলা হয়েছে সেহেতু উপজেলা প্রশাসনের কিছুই করার নেই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *