হারিয়ে যাওয়া যুবকের বৃদ্ধ হয়ে ফেরার গল্প

Spread the love

নাগরিক ডেক্স : দেশ স্বাধীনের পরের বছরের কথা। হাবিবুর রহমানের বয়স তখন ত্রিশের কাছাকাছি। রড-সিমেন্টের ব্যবসা করতেন। ব্যবসার কাজেই সিলেট থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে বের হন তিনি। কিন্তু আর ফেরেননি। এরপর কেটে গেছে দীর্ঘ সময়। যুবা থেকে হয়েছেন বৃদ্ধ। তিনি বেঁচে আছেন নাকি মারা গেছেন, কোনো তথ্যই ছিল না পরিবারের কাছে। বছরের পর বছর তার ফিরে আসার প্রতীক্ষায় থেকেছে পরিবার। তাদের সেই প্রতীক্ষার অবসান হলো ৪৮ বছর পর।

ফেসবুকে আপলোড করা একটি ভিডিওই তাকে ফিরিয়ে দিল পরিবারের কাছে। সিলেটের বিয়ানীবাজারের হাবিবুর রহমানের হারিয়ে যাওয়া এবং ফিরে আসার গল্প সিনেমার মতোই।

পরিবার জানায়, গত ডিসেম্বরে ফেসবুকে একটি ভিডিও দেখতে পান হাবিবুরের এক আত্মীয়। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন হাবিবুরকে ওই ভিডিওতে তার জীবনের গল্প বলতে দেখা যায়। পাশের বেডের রোগীর স্বজনের সঙ্গে তিনি গল্প করছিলেন। একজন সেই ঘটনার ভিডিও ধারণ করে ফেসবুকে আপলোড করেন। ভিডিওটি দেখার পর ওই আত্মীয় তা দেশে পরিবারের সদস্যদের কাছে পাঠিয়ে দেন। সেই সূত্র ধরেই স্বজনরা তাকে খুঁজে বের করেন।

তবে কীভাবে তিনি হাসপাতালে এলেন, এতদিন কোথায় ছিলেন, সে বিষয়ে জানা যায়, রাজিয়া বেগম নামে এক নারী ২৫ বছর আগে মৌলভীবাজারের শাহাবুদ্দিনের (রহ.) মাজারে হাবিবুরের দেখা পান। তখন তিনি অনেকটা মানসিক সমস্যায় ছিলেন। এরপর থেকেই রাজিয়াই তার দেখভাল করতেন। ২৫ বছর ধরে মাজারে থাকলেও তার আগে তিনি কোথায়, কীভাবে কাটিয়েছেন সে তথ্য মেলেনি।

রাজিয়ার বয়স এখন পঞ্চাশের কাছাকাছি। মাজারের পার্শ্ববর্তী রায়স্ত্রী গ্রামের রাজিয়া সমকালকে বলেন, আমি তাকে সম্মান করে পীর সাহেব বলি ডাকি। গত ২৬ ডিসেম্বর খাট থেকে পড়ে গিয়ে হাবিবুরের একটি হাত ভেঙে যায়। এরপর তাকে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি।

হাবিবুরের বর্তমান বয়স ৭৮ বছর। তাকে পেয়ে পরিবারের সদস্যদের আনন্দের যেন শেষ নেই। হয়তো সবচেয়ে বেশি খুশি হতেন স্ত্রী জয়গুন নেছা। কিন্তু তিনি ইহলোক ত্যাগ করেছেন ২০০০ সালে। হাবিবুর রহমান সিলেটের বিয়ানীবাজারের মাথিউরা ইউনিয়নের বেজগ্রামের বাসিন্দা। তার পরিবার বর্তমানে বসবাস করছে বিয়ানীবাজারের পৌর শহরের কসবা গ্রামে। চার সন্তানের মধ্যে দুই ছেলে মাহতাব উদ্দিন ও হালিম উদ্দিন যুক্তরাজ্য প্রবাসী। ১৯৭২ সালে নিখোঁজ হওয়া হাবিবুর রহমানের সন্ধান মিলেছে শুক্রবার।

হাবিবুর রহমানের ছেলে জালাল উদ্দিন বলেন, ভিডিওতে চেহারা এবং জীবনের গল্পের মিল দেখে শুক্রবার তিনি ও তার ভাই শাহাব উদ্দিন হাসপাতালে গিয়ে বাবাকে শনাক্ত করেন। তারা কথাবার্তা বলে চিনতে পারেন হাবিবুর রহমানই তাদের হারিয়ে যাওয়া বাবা। হাবিবুর নিজের নাম ও স্ত্রী নাম ছাড়াও ভাইদের নাম বলেন। এমনকি নিজের গ্রামের নামও বলেছেন। এ সময় আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। পরে তারা ওসমানী হাসপাতাল থেকে হাবিবুর রহমানকে নগরীর আল-হারামাইন হাসপাতালে ভর্তি করেন। সঙ্গে আছেন সেই রাজিয়া বেগমও।

হাবিবুর রহমানের নাতি কেফায়েত হোসেন বলেন, আশা ছিল দাদা একদিন ফিরে আসবেন। সেই আশা পূরণ হয়েছে।

পরিবার জানায়, ১৯৭২ সালে ব্যবসার কাজে বেরিয়ে নিখোঁজ হন হাবিবুর। তখন তিনি চার ছেলেসন্তানের জনক ছিলেন। তিনি বেঁচে আছেন- এমন তথ্য ছিল না পরিবারের কাছে।

সুত্র- দৈনিক সমকাল

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *