মরিচের উৎপত্তি হলো যেভাবে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: মরিচ এমন এক জিনিস যা ছাড়া আমরা আমাদের খাবার কল্পনা করতে পারি না। মরিচের মতো আর কোনো খাবার এত দ্রুত বিস্তার লাভ করেনি এবং এতভাবে রান্নায় ব্যবহৃত হয়নি। লবণের পরে মরিচই রান্নায় সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। যারা ঝাল ভালোবাসে তাদের কাছে মরিচ এক সুখের অনুভূতির নাম। আর যারা ভালোবাসেন তারাও মাঝে মধ্যে টক-ঝাল-মিষ্টিতে একটু ঝাল দিয়ে খাওয়ার লোভ সামলাতে পারে না। তাই হয়তো মানবজাতি যতদিন থাকবে রন্ধনপ্রণালী থেকে মরিচের বিলুপ্তি ঘটবে না। মরিচ ভাত বা গমের মতো জীবন বাঁচানো খাদ্য না বা এটা না খেলেও কারো কিছু আসে যায় না। তবে এই মরিচ খাবারে এমন স্বাদ নিয়ে আসে যা ভালোবাসেন না এমন মানুষ হয়তো পাওয়া যাবে না। তাই এই মরিচের উৎপত্তি নিয়েও কম বিবাদ হয়নি।এশিয়া এবং ইউরোপের অনেক দেশই দাবি করে মরিচের উৎপত্তি তাদের দেশে। এক্ষেত্রে চীন আর ভারতের জনগণ সবার আগে। তবে মজার ব্যাপার হলো মরিচের উৎপত্তি এশিয়া-ইউরোপ দূরে থাক, আফ্রিকাতেও নয়। গবেষক আর ঐতিহাসিকগণ একমত যে, মরিচের উৎপত্তি সুদূর আমেরিকা মহাদেশে। ১৪৯২ সালে ইতালীয় নাবিক এবং ঔপনিবেশিক ক্রিস্টোফার কলম্বাস যখন ভারত তথা পুরো এশিয়ায় যাওয়ার বিকল্প জলপথের সন্ধানে বের হন তখন তিনি নিজেও জানতেন না যে তার লক্ষ্যে তিনি না পৌঁছালেও এমন এক জায়গায় গিয়ে পৌঁছাবেন যেখানে পাওয়া ঝাল মশলা পুরো পৃথিবীর রন্ধন প্রণালী বদলে দেবে। ১৪৯২ সালে কলম্বাস এবং তার জাহাজের লোকেরা এশিয়ার বদলে পৌঁছে যান আমেরিকার ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে। মেক্সিকোতে তারা প্রথমবারের মতো দেখা পায় ক্যাপসিকামের যাকে আমরা বর্তমানে মরিচ বলে চিনি। তারা গোলমরিচকে Black Pepper বলতেন। কলম্বাস যখন মরিচ খুঁজে পান, তিনি অন্যান্য দ্রব্যের সাথে মরিচও ইউরোপে নিয়ে আসেন। তবে প্রথমদিকে আমেরিকার মানুষের মতো তারা মরিচের প্রেমে পড়ে যাননি, বরং নতুন আবিষ্কৃত উদ্ভিদ হিসেবে দুই-একটা গাছ বাড়িতে লাগাতো। কিন্তু ইউরোপীয়রা নিজে না খেলেও সেই জিনিসের ব্যবসা করতে ওস্তাদ ছিল। তাই ১৫ শতকের শেষের দিকে পর্তুগিজরা প্রথম মরিচ ভারতবর্ষে নিয়ে আসে অন্যান্য দ্রব্যের সাথে বিনিময় করতে। ভারতীয়রা প্রথম আস্বাদনেই ভালবেসে ফেলে এই নতুন ঝাল ফলকে। ভারতের গোয়ায় ছিল পর্তুগিজ উপনিবেশ। এখানে রান্নায় প্রচুর পরিমাণে মরিচ ব্যবহার শুরু হয়। অ্যাংলো ইন্ডিয়ান এবং ভারতীয় উভয় সম্প্রদায়ই মরিচ দিয়ে বিভিন্ন ধরনের খাবার রান্না শুরু করে। পাকা লাল মরিচ শুকানোর পদ্ধতি বের করার পর মরিচ দূরদূরান্তে বহন করা সহজ হয়। ফলে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলে দ্রব্যের বিনিময় মাধ্যম হিসেবে মরিচ ছড়িয়ে পড়ে। পরের শতকে পুরো ভারতবর্ষ এবং এশিয়ার অন্যান্য দেশ থেকে শুরু করে আফ্রিকা-ইউরোপে রান্নায় মরিচের ব্যবহার এতই বৃদ্ধি পায় যে মরিচ ছাড়া কোনো দেশেই রান্না কল্পনা করা যেত না। প্রায় সাড়ে সাত হাজার বছর ধরে মানুষের খাদ্যাভ্যাসে মরিচের ব্যবহার রয়েছে। প্রায় ৬,৫০০ বছর আগে থেকে মেক্সিকো এবং এর আশেপাশের অঞ্চলে মরিচ চাষ হয়ে আসছে। এমনকি এই মরিচ আমেরিকার সবচেয়ে প্রাচীন চাষকৃত শস্যের একটি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *