স্বামীর মরদেহের সঙ্গে তিনদিন ছিল সামিরা, অত:পর পলায়ন

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : ঘুমন্ত অবস্থায় স্বামীর গলাকেটে হত্যার পর মরদেহ অ্যাসিডে ঝলসে দেন। এরপর ঝলসানো মরদেহটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তায় ভরে বিছানার চাদরে মুড়িয়ে রেখেছিলেন। আর গুম করতে না পেরে ফ্ল্যাটের ওই মরদেহের সঙ্গেই তিন দিন কাটিয়েছেন সামিরা। পরে মরদেহ রেখেই ফ্ল্যাটে তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যান তিনি।

মরদেহে পচন ধরায় দুর্গন্ধে আটদিন পর টের পায় অন্য ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়ারা। খবর পেয়ে পুলিশ গত ১৭ ফেব্রুয়ারি গভীর রাতে ফ্ল্যাটের তালা ভেঙে বিকৃত মরদেহটি উদ্ধার করে।

মর্মন্তুদ এই হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল গাজীপুরের শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ডের (প্রশিকা মোড়) তিনতলা একটি বাড়ির দোতলায় একটি ফ্ল্যাটে।

ফ্ল্যাটে থাকা ব্যক্তির স্বজনদের দাবি ছিল, মরদেহটি আবদুর রহমানের (৪৫)। আবদুর রহমান পাশের গাজীপুর ইউনিয়নের গাজীপুর (গোতারবাজার) গ্রামের নছিম উদ্দিনের ছেলে। আবদুর রহমান তাঁর চতুর্থ স্ত্রীকে নিয়ে এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ওই ফ্ল্যাটে ছিলেন। সামিরা আক্তার (২৬) পাশের চকপাড়া গ্রামের আলী হোসেনের মেয়ে।

সোমবার রাতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় অভিযান চালিয়ে সামিরাকে (২৬) গ্রেপ্তার করে র‌্যাব সদস্যরা। অভিযানকালে গ্রেপ্তার করা হয় সামিরার বাবা আলী হোসেনকেও (৫৫)। 

পরে র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করে সামিরা দাবি করেন, গত ১০ ফেব্রুয়ারি তার স্বামীর এক ব্যবসায়িক অংশীদারকে দিয়ে জোরপূর্বক যৌন কাজে বাধ্য করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তাঁর স্বামীকে হত্যার পরিকল্পনা করেন তিনি।

র‌্যাব-১ এর পোড়াবাড়ী ক্যাম্পের কম্পানি কমান্ডার আবদুল্লাহ আল মামুন জানান, তাদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের রোমহর্ষক বর্ণনা দিয়েছেন সামিরা। সামিরা জানিয়েছেন, গত ১১ ফেব্রুয়ারি ভোর তিনটার দিকে ঘুমন্ত অবস্থায় তার স্বামীকে গলাকেটে হত্যা করেন তিনি। পরে অ্যাসিডে ঝলসে দেওয়া হয় মরদেহ। বিকৃত মরদেহটি তোশক দিয়ে পেঁচিয়ে বস্তায় ভরা হয়। এরপর ওই বস্তাটিও বিছানার চাদর দিয়ে মুড়িয়ে রাখেন তিনি। এরপর মরদেহটি গুমের চেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়ে মা-বাবার সহায়তায় তিনি পালিয়ে যান। প্রথমে পাশের কালিয়াকৈর উপজেলার ফুলবাড়ী এলাকায় তার বান্ধবীর বাসায় দুদিন আত্মগোপনে থাকার পর সেখান থেকে গত ১৫ ফেব্রুয়ারি নওগাঁ তাঁর মামার বাড়ি চলে যান। নওগাঁ থেকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর দক্ষিণখান এলাকায় তাঁর চাচার বাসায় আত্মগোপন করেন।

র‌্যাবের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সামিরা আরো জানিয়েছেন, আবদুর রহমান ও তার বাড়ি একই উপজেলায় হওয়ায় তারা পূর্ব পরিচিত ছিলেন। ২০১৬ সালে আবদুর রহমান দ্বিতীয় স্ত্রীকে নিয়ে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গীতে থাকতেন। পূর্ব পরিচিত হওয়ায় সামিরা ওই বাসায় থেকে টঙ্গী সরকারি কলেজ থেকে ডিগ্রি পরীক্ষাও দেন। ওই সময় অনেকবার বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে তাকে ধর্ষণের চেষ্টা চালান আবদুর রহমান। একপর্যায়ে কৌশলে খাবারের সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে খাওয়ানো হয় তাকে। পরে আবদুর রহমান তাকে একাধিকবার ধর্ষণ করে ও তা মোবাইল ফোনে ধারণ করে রাখে। ওই ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়াসহ হত্যার ভয় দেখিয়ে আবদুর রহমান ধর্ষণ করতেন তাকে। এরপরও ধর্ষণের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেয়। এতে তার স্বামী তাকে তালাক দেন। পরে শ্রীপুর উপজেলার নয়নপুর এলাকায় ওষুধের দোকান দেন তিনি। ২০১৮ সালে আবদুর রহমান বিয়ে করেন তাকে। বিয়ের পর শ্রীপুর পৌর এলাকার কেওয়া পশ্চিম খণ্ড এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে সংসার শুরু করেছিলেন তারা।

সামিরা আক্তার র‌্যাবকে আরো জানিয়েছেন, তার স্বামী জমির দালাল ছিলেন। বিয়ের পর থেকে কখনো ব্যবসার স্বার্থে কখনো বা অনেক টাকার বিনিময়ে তার ব্যবসায়িক অংশীদারদের সঙ্গে যৌন কাজে বাধ্য করতেন তাকে।

শ্রীপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আকতার হোসেন বলেন, র‌্যাব সদস্যরা সামিরাকে আজ বিকেলে থানায় হস্তান্তর করেছে। তিনি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করেছেন। আজ তাকে (সামিরা) আদালতে পাঠানো হবে।

সুত্র- কালের কন্ঠ

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *