বাবা-মা বটবৃক্ষের শীতল ছায়া

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: কস্ট, সুখ, দু:খ, আনন্দ, আবেগে চোখের কোনে জল আসা অস্বাভাবিক কিছু নয়,কিন্তু কিছু জলের ভিতর মূল্যবান কিছু ফোঁটা থাকে মুক্তার মত জ্বলজ্বল করে শুভ্রতা ছড়ায়,উঁকি দেয় স্নেহের পরশ। আর এ স্বার্থহীন স্পর্শের সবটুকুই যাদের দখলে তারা হলো বাবা,মা। আমেরিকার ৯৬ বছরের বৃদ্ধ এক বাবা তার ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬৩ বছরের ছেলের রক্ত জোগানের কাজে প্রতি দু সপ্তাহে গাড়ী চালিয়ে হাসপাতাল আসা যাওয়া করেন।
বাবা আর ছেলে দুজনেই মৃত্যু পথযাত্রী। কিন্তু বাবা তার ছেলেকে বাঁচিয়ে রাখার যে আকুলতা। ভালবাসার বন্ধনের যে গভীর মায়াগুলোর তীব্রতা ঝাঁকুনি দিয়ে জানান দেয় বাবা, মার বিকল্প আর কিছুতে কি আছে? মাতৃগর্ভে সন্তানটির সুস্থতায় মা নিজের অসুস্থাতার খোলা আকাশ বিছিয়ে দিয়ে নিরাপত্তার চাদরে আগলে রাখেন অহর্নিশ। সন্তান যখন মায়ের কোল থেকে বেড়িয়ে হাঁটতে শিখে-বাবার নিরাপত্তা,আস্থা আর ভালবাসায় মিশ্রিত নির্ভরতার হাতটি ধরে, তখন সন্তানের রাজ্য জয়ের নক্ষত্ররাজি হাসিতে বাবাদের মনে দোল পূর্নিমার জেয়ার।
ত্যাগ আর ভালবাসায় আবৃত বাবা, প্রতিটি সন্তানই এক একটি পূর্ন জোছনা। যার আয়নায় আলোর ঝলকানিতে আলোকিত হয় বাবা মার মুখ। সন্তানের সফলতায় বাবা মার মুখে যে নিরঙ্কুশ সুখলীলা খেলা করে-সেখানেই সুখের সমুদ্রের শীতল বাস।আবার সন্তানের সর্ষে সমেত দুখঃ,কস্ট,বেদনা,কান্নামিশ্রিত জড়ানো কন্ঠ বাবা মায়ের বুকের মাঝে খেলা করে হাহাকারের তরঙ্গমালার ন্যায়। চোখের জল আর মনের জলের জোয়ারে প্লাবিত হয়ে খেলা করে দিবারাত্রির নিদ্রাহীন নয়নের ক্লান্তহীন পথচলা।বয়সের ভারে ন্যুব্জ, অথবা বাক্ শক্তি হারানো যে সব বাবা মায়েরা মৃত্যুর প্রহর গুনছেন-তারাও সন্তানের জন্য নিরবিচ্ছিন্ন সুখের আশীর্বাদের প্রদীপ। যেদিন এ প্রদীপ নিভে যাবে, থেমে যাবে আলোর সব খেলাঘরের সব বাতি, বন্ধ হয়ে যাবে সুখের সবগুলো দরজা। সেদিন অবাক নয়নে সন্তানেরা নিথর দেহের দিকে তাকিয়ে নিজেদের শিশুকাল, শৈশবের নানান রঙের দিনগুলো ভেবে খাটিয়ার পাশে দু ফোঁটা অশ্রু যখন গড়িয়ে পরবে, তখন-বাবা মায়ের নিথর সে হাত দু খানি আর সন্তানের চোখের জল মুছে দিয়ে বলবেনা-ভয় কিসের খোকা! এই তো আমি আছি! সেদিন আমরা সন্তানরা অনুভব করবো- জীবন চলার পথে বাবা মায়ের উজ্বল নক্ষত্রের আলো আমাদের কতটা জরুরী।
সন্তানদের ছেরে বাবা মায়েরা যখন একাকী অন্ধকার মাটির ঘরে শুভ্র কাপড়ে মুড়িয়ে থাকবেন,তখন সন্তানেরা পৃথিবীর রঙিন আলোয় একাকীত্বের সাথে বসবাস। একাকীত্বের কোন রঙ, আলো থাকেনা। তাই বাবা মায়ের জীবিত থাকাকালীনই যেন হয় সন্তানদের শ্রদ্ধা, ভালবাসা মিশ্রিত আলোকিত সময়। যাতে করে তাদের মৃত্যুর পরেও সুখের আলোর পরশ অনুভব হয় প্রতিদিন প্রতিক্ষন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *