খেলার মাঠে দেয়াল দিচ্ছে পুলিশ, ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট
ব‌রিশাল নগ‌রের কাউনিয়া ব্রাঞ্চরোড ঐতিহ্যবাহী পু‌লিশ সেকশন খেলার মা‌ঠে ইটের বাউন্ডা‌রি দেয়াল দেয়া শুরু করেছে জেলা পূুলিশ। অনেকটা তরিঘরি করে গত তিনদিন ধরে প্রায় ৩০ শতাংস জমির উপর গড়ে ওঠা খেলার মাঠটির চারপাশে দেয়াল দেয়া হচ্ছে। এতে ওই এলাকায় তরুন যুবকদের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় বিপুল পরিমান জেলা ডিবি পুলিশের সদস্যদের অবস্থান নিতে দেখা গেছে। স্থানীয় বাসিন্দা, শিশু-কিশোররা এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বুধবার নগরীতে বিক্ষোভ করেছেন।

প্রায় ৭০ বছরের পুরানো খেলার মাঠ রক্ষায় স্মারকলিপি দিয়েছে প্রধান উপদেস্টার কাছে। স্বাধীনতার আগে কাউনিয়া ব্রাঞ্চরোড এলাকায় পুলিশ সেকশন স্থাপন করা হয়। সেখানকার ৯০ শতাংস ভিপি সম্পত্তি ছিল। এখন রয়েছে ৫৬ শতাংস। ওই জমির উপর খেলার মাঠে আসপাশের বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, ক্লাবের ছেলেরা যুগ যুগ ধরে খেলাধুলা করে আসছিল। ২০২৪ সালের জুলাই মাসে জেলা পুলিশ ওই মাঠের সামনে স্টল করার উদ্যোগ নেয়। নতুন করে গত সোমবার থেকে এ মাঠে নতুন করে দেআল তুলছে জেলা পুলিশ। এর প্রতিবাদে বুধবার সকালে নগরের অশ্বিনীকুমার হলের সামনে শিশু কিশোর এবং স্থানীয় বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ মানববন্ধন করেন। পরে একটি মিছিল বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিন করে জেলা প্রশাসকের কাছে প্রধান উপদেস্টা বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, নগরের ২ ও ৭ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের জন্য একমাত্র ব্যবহৃত খেলার মাঠ এটি। মাঠ রক্ষায় এলাকাবাসী মাঠে নেমেছে।

সরেজমিনে বুধবার নগরের ব্রাঞ্চরোড পু‌লিশ সেকশন খেলার মা‌ঠে গিয়ে দেখা যায় ৮ থেকে ১০জন মিস্ত্রী তরিঘরি করে দেয়াল তুলছে। তাদের সঙ্গে কথা হলে মিস্ত্রীরা বলেন, কোন রকম ৫ ফিট করে দেয়াল তুলে দেয়াই তাদের কাজ। খুবই নাজুকভাবে এটি করা হচ্ছে। এসময় আসপাশে ডিবি পুলিশের সদস্যদের দেখা গেছে। স্থানীয় চা দোকানী মোঃ শা‌হিন জানান, এই মা‌ঠের পাশে আছমত আলী মাস্টার সরকা‌রি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আশরা‌ফিয়া মাদ্রাসা, ক্লাব রয়েছে। এলাকার ছেলেরা এ মাঠে খেলাধুলা করে। সেই মাঠ দেয়াল দিয়ে আটকে দেয়া হচ্ছে। যেকারনে বুধবার সকাল থেকে এলাকায় উত্তেজনা দেখা দিয়েছে।

জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা পরিবেশ কর্মী আকতারুল কবির বলেন, জেলা পুলিশ খেলার মাঠে বাউন্ডারি শুরু করেছে। ২ বছর আগে তারা স্টল করতে চেয়েছিল, স্থানীয়রা তা বাধা দিয়ে বন্ধ করছে। এখন নতুন করে মাঠের চারদিকে বাউন্ডারী দিচ্ছে। তারা সন্দেহ করছেন যে বাউন্ডারী শেষ হলে পরে বানিজ্যিকভাবে স্টল করবে। ৬৬ বছর পাড় ক‌রে‌ছি এখা‌নে খে‌লাধুলা করে। এখন সেই মাঠ দখল হোক তা তারা চাননা।

সংস্কৃতিকর্মী শুভংকার চক্রবর্তী ব‌লেন, ৭০ বছর আগের এ মা‌ঠে খেলাধুলা করে বড় হ‌য়ে‌ছি। এটি রক্ষা না করতে পারলে আগামী প্রজন্ম কাঠগড়ায় দাড়করাবে আমাদের। এজন্য এলাকার ক্রিড়াপ্রেমী শিশু কিশোর, সমাজকর্মী সহ বিভিন্ন শ্রেনীর মানুষ টাউন হলের সামনে মানববন্ধন করেছেন। পরে বিক্ষোভ মিছিল করে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানকার ৯০ শতাংস ভিপি সম্পত্তি। মস‌জিদ-মাদ্রাসার পরও ৫৬ শতাংস রয়েছে। যার প্রায় ৩০ শতাংস খেলার মাঠ ।

বরিশাল জেলা পুলিশ সুপার মো: শরিফ উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ওই জমিটি বহু বছর আগে জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পুলিশ বিভাগ পেয়েছে। আগামীতে আবারও ফাড়ি চালুর জন্য নতুন ভবন হবে। সেজন্য নতুন করে সীমানা প্রাচীর করা হচ্ছে। সেখানে একটি গেট থাকবে। স্থানীয় শিশু কিশোররা চাইলে গেট গিয়ে ঢুকে মাঠে খেলাধুলা করতে পারবে। ভবিষ্যতে ভবন হলেও একপার্শ্বে করা হবে যাতে মাঠের মতো কিছু খোলা জায়গা থাকে।