শিক্ষকদের নেতৃত্বে ফাটল ধরিয়ে বিএম কলেজ অধ্যক্ষের বিদায়

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: ঐতিহ্যবাহী বরিশাল বিএম কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: সফিকুর রহমান সিকদারের শেষ কর্মদিবস ছিল শনিবার। কলেজের ৬৫তম অধ্যক্ষ হিসেবে তিনি টানা ২৯ মাস দায়িত্ব পালন করে নানা আলোচনায় এসেছেন। কোন কোন ক্ষেত্রে সমাদৃতও হয়েছেন বিভিন্ন সেক্টরে। তবে সহকর্মী শিক্ষকদের মধ্যে জমে থাকা ক্ষোভ মুছে যেতে পারেননি অধ্যক্ষ সফিকুর। বিএম কলেজের ঐতিহ্য ভেঙ্গে নির্বাহী আদেশে গঠন করা শিক্ষক পরিষদের নেতৃত্ব মেয়াদ উত্তীর্নই রেখে গেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, তিনি ছাত্র নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ায় অনেক জেষ্ঠ্য শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে তার কার্যালয়মুখী হননি। নানা খাতে বাড়তি অর্থ নেয়ায় দুর্নীতি দমন কমিশন তদন্তে নেমে ব্যাংক হিসেবেও জব্দ করেছিল বিএম কলেজের।
জানা গেছে, ২০১৮ সালের ১ জানুয়ারি মো: সফিকুর রহমান সিকদার বিএম কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে অনেকটা চমক নিয়ে দুরদুরন্ত থেকে যোগদান করেন। পরের বছর ২০১৯ সালের ১৮ জানুয়ারী সহকারী অধ্যাপক মো: আল আমিন সরোয়ারকে সম্পাদক করে অধ্যক্ষ নিবার্হী আদেশে গঠন করেন শিক্ষক পরিষদের কমিটি। এ নিয়ে কলেজের প্রায় ১৯০জন শিক্ষকের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করে। এর পর থেকেই শুরু হয় নানা আলোচনা ও সমালোচনা। শনিবার শেষ কর্মদিবসে শিক্ষকদের একাংশ বিদায় জানান অধ্যক্ষ সফিকুর রহমানকে।
জানতে চাইলে কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী সঞ্জয় কুমার বিশ্বাস বলেন, অধ্যক্ষ সফিকুর কলেজের ক্রান্তিকালে দায়িত্ব গ্রহন করেন। কিন্তু তিনি বিএম কলেজের রীতি নীতিকে, চেইন অব কমান্ডকে ২০ বছর পিছিয়ে দিয়ে গেছেন। তিনি ছাত্র নেতাদের দ্বারা পরিচালিত হয়েছেন। কলেজের ঐতিহ্য ভেঙ্গে নির্বাহী আদেশে শিক্ষকদের সংগঠন শিক্ষক পরিষদের কমিটি গঠন করেন। ওই কমিটির মেয়াদ গত বছরের ডিসেম্বারে শেষ হয়। শিক্ষকরা এ অবস্থায় নতুন নেতৃত্ব চাইতে অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান। কিন্তু ছাত্রনেতাদের বকা ঝকায় শিক্ষকরা চলে আসেন। সেই থেকে অনেক শিক্ষকই অধ্যক্ষের কার্যালয়ে যান না। তিনি বলেন, শোনা যায় শিক্ষকদের থামিয়ে দেয়ায় ছাত্র নেতাদের আর্থিক পুরুস্কৃত করা হয়েছিল।
বিসিএস সাধারন শিক্ষক সমিতির যুগ্ন মহাসচিব এবং আগৈলঝাড়া সরকারী কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর সরদার আকবর আলী বলেন, তিনিও বিএম কলেজে কর্মরত থাকাকালীন শিক্ষক পরিষদের নির্বাচিত প্রতিনিধি চেয়েছেন। কিন্তু কলেজের রীতি বিরোধী একটি কমিটি গঠন করে দেন অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান। ওই কমিটিরও মেয়াদ শেষ হয়েছে, অথচ নতুন নেতৃত্ব নেই। যেকারনে সিনিয়র শিক্ষকরা ওই ঘটনার পর থেকে তার(অধ্যক্ষের) কক্ষে জান না।
কলেজের একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন, গত বছরের(২০১৯) অক্টোবরে কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ভর্তিতে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের একটি টিম অধ্যক্ষের কার্যালয়ে এসে তদন্ত করেন। ওই সময়ে কলেজের ব্যাংক হিসেবও জব্দ করা হয়। সুত্র জানায়, গত বছর ক্রিড়া প্রতিযোগিতার নামে বিপুল অর্থ ব্যায় দেখানো হয়। এমন কি কলেজের বোটানিক্যাল গার্ডেন ধ্বংস করে মোটা অংক ব্রঅয় করে লং টেনিস এর মাঠ তৈরি করতে গিয়েও ব্যাপক সমালোচনায় পরেন অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান সিকদার। এসব খাতের অর্থের একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের কয়েক ছাত্রনেতাকে ভাগ দেয়া হত বলে অভিযোগ উঠেছে।
এব্যাপারে বিএম কলেজের সদ্য বিদায়ী অধ্যক্ষ প্রফেসর মো: সফিকুর রহমান সিকদার বলেন, তিনি চেস্টা করেছেন কলেজের স্বার্থে কাজ করতে। শেষ কর্মদিবসে শনিবার একাডেমিক কাউন্সিলের সভা ডেকেছেন। সেখানে শিক্ষক পরিষদের নেতৃত্ব সহ সব বিষয়েই গাইড লাইন দিয়ে গেছেন। পরবর্তীতে যিনি দায়িত্ব পালন করবেন তিনি সেগুলো ফলো করে ব্যবস্থা নিবেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *