রাজনীতিতে ব্যাবসায়ী ছোবলে দিশেহারা গনতন্ত্র

Spread the love

সৈয়দ জুয়েল: রাজনীতির একটা সোনালী অতীত ছিল আমাদের। জেল, জুলুম, নিজের স্বার্থে নয়, দেশের মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠিত করতে আজীবন সংগ্রাম করে জীবন বিলিয়ে দিয়েছেন যে মানুষগুলো-সেই সব রাজনীতিকের বড়ই অভাব। স্বর্নালী সে সময়টায় ব্যাবসায়ীরা রাজনীতি করতোনা। রাজনীতির ভিতর যখন ব্যাবসায়ীরা ঢুকে পরেছে, ঠিক তখন থেকেই এর শেঁকড় ছড়িয়ে ত্যাগের রাজনীতির আদর্শের একটু একটু করে অসুস্থ হয়ে- আই,সি,ইউ তে এখন আমাদের রাজনীতি।
প্রতিটি দলের যে গঠনতন্ত্র আছে, সে বিষয়ে তাদের অধিকাংশরই কোন ধারনা নেই বা জেনে থাকলেও তার চর্চা করেন না। যার কুফল পাচ্ছে দলীয় হাই কমান্ড থেকে শুরু করে সাধারন জনতা। মূলতঃ ব্যাবসায়ীদের বড় একটা অংশ রাজনীতি নিয়ন্ত্রন করছেন। যাতে করে প্রতিটি সরকারই এদের কাছে অনেকটা জিম্মি। দল পরিচালনায় যে অর্থের প্রয়োজন হয়,তার বড় একটা অংশের জোগান দাতা এই ব্যাবসায়ীরা।
তাই অতীতের সরকারী দলগুলো ও বর্তমান সরকারী দলও অনেক গুরত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হিমশিমের দোলনায় দোলে- ঝুলন্ত অবস্থায় রয়ে যায় সরকারের সফলতার ধারাগুলো। গনতন্ত্র তখনই হোঁচট খায়। নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যাবসায়ীরা বিনিয়োগের ধান্দা করে দু হাতে কোটি কোটি টাকার বানিজ্য করে। হেরে যায় তখন দলীয় নীতি আদর্শের গড়া অথবা সমাজের আদর্শিক সুশীল শ্রেনীর মানুষরা। ভোটাররা অর্থের কাছে সুষ্ঠ সমাজ গড়ার কারিগরদের নিজেরাই পরাজিত করে দিয়ে গনতন্ত্রের কবরে মাটি খোঁড়ার কাজে বড় এক ভূমিকা পালন করে থাকেন।
ফলশ্রæতিতে সড়ক ,স্বাস্থ্য, শিক্ষার মত গুরত্বপূর্ণ মৌলিক অধিকারের একটিতেও কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে গিয়েও সফল হতে পারেননি কোন সরকার। অসতের ভীড়ে সুস্থ ধারা চর্চার রাজনীতিবিদরা বড় অসহায়। তাদের নীতি আর আদর্শের কথায় চায়ের মগে এখন আর ঝড় তুলেনা। শিল্প পতিদের এয়ার কন্ডিশনড্ গাড়ীতেই রাজনীতি এখন ঘুর পাক খাচ্ছে। ১৯৭১ সালে মালয়েশিয়া ও বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা প্রায় একই ছিল,আজ মালয়েশিয়া শ্রমিক পাঠাতে আমরা হুমড়ি খেয়ে পরি। তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলি- কত হাজার লোক পাঠালাম,তা নিয়ে। স্বাধীনতার এত বছর পরে দেশের রাজনীতিবিদ তৈরীতে আমরা ব্যার্থতার পরিচয় দিয়েছি সন্দেহাতীত ভাবে। আর তাই আমরা পাইনি একজন- মাওলনা হামিদ খাঁন ভাষানী, এ,কে,ফজলুল হক, শেখ মুজিবর রহমানের মত অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদদের। এ রাজনীতিবিদদের এক ডাকে লক্ষ লক্ষ লোকের সমাগমে রাজপথ কেঁপে উঠতো। এখন ১৭-১৮ কোটি জনসংখ্যার দেশে রাজপথ আর কাঁপেনা। অতীতের ক্ষমতায় থাকা জাতীয় পার্টি,বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বি,এন,পি) ক্ষমতা থেকে দূরে চলে যুতসই আন্দোলনে ব্যার্থ হওয়ার বড় এক কারন- এই ব্যাবসায়ী রাজনীতিক নির্ভরশীলতা।
কারন ব্যাবসায়ী রাজনীতিবিদরা কখনোই মূল ধারার রাজনীতির সাথে খাপ খাইয়ে নিতে পারেনা। তাদের রাজনীতির উদ্দেশ্যই থাকে রাস্ট্রের সম্পদ লুট করে নামে বেনামে গাড়ী,বাড়ী,ব্যাংকের ভল্ট ভারী,ইউরোপ আমেরিকায় একাধিক বাড়ী ক্রয়। যেখানে মাওলানা ভাষানী,এ,কে,ফজলুল হক,শেখ মুজিবর রহমানের মত নেতারা ইউরোপ,আমেরিকায় একটি বাড়ী ক্রয় করতে পারেনি,সেখানে সলিমুদ্দি,কলিমুদ্দিরা রাজনীতিতে ঢুকে যা করছেন-আম জনতা ঠিকই জানেন।
রাজনীতি আর রাজনীতিবিদদের হাতে নেই। এর কুফল যেমন অতীতের ক্ষমতায় থাকা দলগুলো পাচ্ছে,বর্তমান ক্ষমতায় থাকা দলও বিরোধী দলে গেলে ঐ একই সংকটে পরবে। গনতান্ত্রিক রাস্ট্র ব্যাবস্থায় উল্টো পথে আমাদের অবস্থান। রাজনীতিতে ব্যাবসায়ীদের প্রবেশে লাগামহীন এ ঘোড়ার পিঠে গনতন্ত্রের যে সওয়ার উঠেছে- তার লাগাম টেনে ধরে না রাখতে পারলে বিপর্যয়ের মুখে পরবে সুস্থ রাজনীতি, ধ্বংস হবে গনতন্ত্র। আর নাগরিকদের মৌলিক অধিকার গুলো লাল ফিতায় ফাইল বন্দী হয়ে গনতন্ত্রের যাদুঘরে শোভা পাবে, যা দেখেই আমাদের অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে থাকতে হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *