বিসিসির বর্তমান পরিষদের ‌দুই বছর পার, কি পেলেন নগরবাসী!

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট: টানা দুই বছর পাড় করলো বরিশাল সিটি করপোরেশনের (বিসিসি) বর্তমান ৪র্থ পরিষদ। করপোরেশনের বর্তমান মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ সহ তার পরিষদ বিপুল ভোটে জয়লাভ করে ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর দায়িত্ব গ্রহন করেন। দুই বছরে বর্তমান পরিষদের কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা আর প্রাপ্তি নিয়ে বিভিন্ন শ্রেনীপেশার মানুষের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে।
২০১৮ সালের ৩০জুন বিজয় লাভ করেন বিসিসি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তার এ বিজয়ে নগরীর আপামর জনতার সমর্থন ছিল এমনটা জানিয়েছেন সাধারন মানুষ। দেখতে দেখতে মেয়র সাদিক এবং তার পরিষদের ২টি বছর শেষ হলো। কিন্তু কি পেলেন নগরবাসী এ নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।


প্রত্যাশা কতটা পুরন হলো জানতে চাইলে বরিশাল নগরীর বর্ধিত এলাকা ২৬ নং ওয়ার্ডের এক সরকারী কর্মকর্তা বলেন, অনেক বছর আগে তাদের এ এলাকা করপোরেশনের আওতায় আসে। এখন মুরগীর খামার করতে হলেও বিসিসিকে কর দিতে হয়। কিন্তু এর বিপরীতে উন্নয়ন তেমন একটা হয়নি। তিনি তার এলাকায় এখনও কাদা পেড়িয়ে শহরে উঠতে হয় সাধারন মানুষকে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা নেই। অনেক রাস্তায় এখনও সড়ক বাতি পৌছায়নি।


সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন বরিশাল জেলা সাধারন সম্পাদক ও নগরীর কাউনিয়ার বাসিন্দা কাজী এনায়েত হোসেন শিবলু বলেন, নগরবাসী বিসিসির বর্তমান পরিষদকে যে প্রত্যাশা নিয়ে ভোট দিয়েছিলেন তা অনেকাংশে পুরোন হয়নি। নগরীর বেহাল সড়ক, জলাবদ্ধতা, খাল সংস্কার না করতে পাড়ায় জনগন হতাশ। বিশেষ করে বর্ধিত এলাকার উন্নয়ন হয়নি গত ২ বছরে।


মেয়র সাদিক তারুন্যের অহংকার এমনটাই জানেন নগরবাসী। এ প্রসঙ্গে নগরীর এক তরুন সংগঠক বলেন, ভোটের সময়ে সকলের মুখে মুখে ‘সাদিক ভাই’ ছিল। তিনি নগরীতে কয়েকটি পার্কও করেছেন। কিন্তু এই নগরী কতটা শিশুবান্ধব তা নিয়ে এখন হতাশা দেখা দিয়েছে।


বাসদের বরিশালের সদস্য সচিব ও সিটি নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী মনিষা চক্রবর্তী বলেন, গত দুই বছরে বিসিসির বর্তমান পরিষদের কাছ থেকে যেমনটা প্রত্যাশা করেছেন তার তেমন কোনটাই পুরন হয়নি। বরং নগরবাসী পেয়েছেন ২০ গুন বাড়তি হোল্ডিং ট্যাক্স এর বোঝা, ভবনের প্লানিং এ দীর্ঘ সুত্রæতা, নগরীতে জলাবদ্ধতা। তিনি বলেন, নগরীর উন্নয়নে তো সরকারী বরাদ্ধই নেই। এই পরিষদের কাছে প্রত্যাশার চেয়ে ব্যার্থতা দেখছেন নগরবাসী। তিনি বলেন, দুই বছর অনেক সময়। এর মধ্যে কিছু না পাড়লে বাকি দিনগুলোতে কতটা পাড়বে তা নিয়ে জনগান শংকিত।


তবে নগরীর ১৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আক্তার উজ্জামান গাজী (হিরু) বলেন, দায়িত্বগ্রহনের ২ বছরে তাদের পরিষদ এবং মেয়র সেরনিাবাত সাদিক আবদুল্লাহর কাছে নগরবাসীর প্রত্যাশা অনেক ছিল। তবে করোনার কারনে কাংখিত উন্নয়ন করতে পারেননি তারা। তারা ইতোমধ্যে নগরীতে ৫টি টেকসই সড়ক নির্মান করেছেন। মেয়র নগরীর ১৩টি খাল সংস্কারের ঘোষনা দিয়েছেন। করপোরেশনের দুর্নীতি দুর করে নগরভবনের প্রশাসনিক সংস্কার এনেছেন। তাদের বড় প্রকল্প পাশ হলে সার্বিক উন্নয়নে নগরীর চিত্র পাল্টে যাবে। তিনি বলেন, হোল্ডিং ট্যাক্স, পানি সরবরাহ, প্লান এর জন্য পরিষদকে দায়ী করা যাবে না। এগুলো করপোরেশনের প্রশাসনের দায়। মেয়র বলেছেন, যেসব সক্টরে হোল্ডিং ট্যাক্স, পানির বিল) অস্বাভাবিক দেখা দিয়েছে তা সংশোধন করা হবে।


এব্যপারে বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র এবং সিটি কাউন্সিলর মো: রফিকুল ইসলাম বলেন, দায়িত্বগ্রহনের দুই বছরে বর্তমান পরিষদ নগরবাসীকে সেবা দিতে চেস্টা করেছেন। বিসিসির জন্য বড় প্রকল্প বরাদ্ধ হওয়ার কথা থাকলেও তা একনেকে পাশ হয়নি। সেটি ছিল ১২০০ কোটি টাকা। পরে কাটছাট করে সাড়ে ৬শ কোটি টাকার প্রকল্প পাঠানো হয়েছে। এটি পাশ হলে উন্নয়ন কাজ শুরু হবে। তিনি বলেন, কিছু ভুলের কারনে হোল্ডিং ট্যাক্স নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। তবে মেয়র তা সংশোধনের আশ্বাস দিয়েছেন ।


নগরীতে ভবন নির্মানে জটিলতা প্রসঙ্গে প্যানেল মেয়র রফিকুল বলেন, নগরী আগামী প্রজণে¥র বসবাসের উপযুক্ত হিসেবে গড়ে তুলতে প্লানিং পরিকল্পিতভাবে করতে হবে। কারো ২০০ গজ জমি থাকলে তিনি ৩ তলা ভবন কিভাবে করবেন। জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নদীর পানি ড্রেনে ঢুকে যাচ্ছে। তারা এ নিয়ে ভাবছেন। এজন্য নগরবাসীকে একটু তো কস্ট করতেই হবে। একজন কাউন্সিলর হিসেবে তিনি নিজ এলাকায় রাস্তাঘাটের উন্নয়ন বাদে, সামাজিক কাজে সময় ব্যায় করেছেন বলে জানান রফিকুল ইসলাম।


দায়িত্বগ্রহনের প্রথম বছরে জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিক নেতৃবৃন্দ, প্রশাসনের নেতৃবৃন্দনও বিসিসি মেয়র এবং পরিষদের কাউন্সিলরদের ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। ২০১৮ সালের ২৩ অক্টোবর দায়িত্বগ্রহনের দ্বিতীয় বছরে নগরভবনে কোন কর্মসুচী রয়েছে কিনা তা জানতে সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী ইসরাইল হোসেনকে ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *