‘মৃত্যুর পর শোকসভা শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ’

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : মানুষ ভুলতে বসেছিল সিরাজুল আলম খান ও জাসদের কথা । দলটি এখন খণ্ড-বিখণ্ড, আগের তেজ নেই। আমি বলি পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট জাসদ অপ্রাসঙ্গিক হয়ে যায়, ৭ নভেম্বর এর মৃত্যু হয়। এরপর থেকে এর কঙ্কালটাই টেনে বেড়ানো হচ্ছে। একইসঙ্গে সিরাজুল আলম খানও গেছেন অস্তাচলে।
সদ্য প্রকাশিত ‘ প্রতিনায়ক: সিরাজুল আলম খান’ শীর্ষক বইতে এসব কথা লিখেছেন লেখক, গবেষক মহিউদ্দিন আহমদ। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা। এতে আরো লেখা হয়েছে, সিরাজুল আলম খানের নায়ক ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব। মুজিবে মোহমুগ্ধ ছিলেন তিনি।
একসময় তিনি বিদ্রোহ করলেন। সঙ্গীদের চোখে তিনি হলেন প্রতিনায়ক। তৈরি হলো তার কাল্ট। অর্থশাস্ত্রে মার্জিনাল ভ্যালু বা প্রান্তিক উপযোগিতার তত্ত্ব আছে। সঙ্গীরা একে একে তাকে ত্যাগ করায় তার প্রান্তিক মূল্যমান ঠেকে শূন্যের কোঠায়। তিনি এখন রেচিড অব পলিটিকস- রিক্ত, পরিত্যক্ত। তাকে ঘিরে যারা বিপ্লবের মন্ত্র জপেছিলেন, তাদের বেশিরভাগ এখন দলীয় রাজনীতি থেকে অবসরে। বাকিরা নানান শিবিরে বিভক্ত। একদা স্বপ্নবাজ ‘অ্যাংগ্রি ইয়াংম্যানরা’ এখন ইতিহাসের জাবর কাটেন।
সিরাজুল আলম খান লেখালেখি করে সময় কাটান। তার লেখা বিদ্বজ্জনের টেবিলে ঠাঁই পায় না। এ নিয়ে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। তার গুরু ও ঘনিষ্ঠজনেরা অনেকেই দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। একদিন তিনিও চলে যাবেন। প্রকৃতির এটাই নিয়ম।
বেশ কিছুদিন আগে আমি তার কাছে গিয়েছিলাম। সঙ্গে ছিলেন সুমন মাহমুদ। তিনি কিছু কথা বলার আগ্রহ দেখালেন। সুমনকে বললেন রেকর্ড করতে। যথারীতি এর ভিডিও হলো। তিনি তার শেষ ইচ্ছার কথা বললেন। ‘আমার মৃত্যুর পর কোনো শোকসভা হবে না। শহীদ মিনারে ডিসপ্লে হবে না লাশ। যত দ্রুত সম্ভব নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে আমার গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হবে মরদেহ, যা ঢাকা থাকবে একটা কাঠের কফিনে। মায়ের একটা শাড়ি রেখে দিয়েছি। কফিনটা শাড়িতে মুড়ে মাটিতে পুঁতে ফেলতে হবে, মায়ের কবরে।’
মহিউদ্দিন আহমদ লিখেছেন, মানুষ যেখান থেকে আসে, সেখানেই ফিরে যায়। কেউ কেউ জায়গা করে নেন ইতিহাসের পাতায়। কেউ নায়ক হন, কেউ প্রতিনায়ক। তারা ইতিহাস তৈরি করেন।

মানবজমিন থেকে সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *