এলপি গ্যাসে ব্যবসায়ীরা নিচ্ছে ১৫৯ টাকা বেশী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : বেসরকারি কোম্পানীর এলপি গ্যাস সিলিন্ডার (১২ কেজি) নিয়ে বরিশালো বাজারে নৈরাজ্য থামছেনা। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরবি) জুলাই মাসে সারাদেশে এলপি গ্যাস ভোক্তাদের কাছে বিক্রির খুচরা মূল্য নির্ধারন করে দিয়েছে ৮৯১ টাকা। বরিশালের পরিবেশকরা গতকাল প্রথম দিনই খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করছেন ১০০০ টাকা করে। যা ভোক্তাদের কিনতে হবে ১০৫০ টাকা। বরিশালে এলপি গ্যাস নিয়ে একটি সিন্ডিকেটের কারনে ভোক্তাদের বিইআরবি নির্ধারিত দরের চেয়ে ১৫৯ টাকা বেশী দামে এলপি গ্যাস কিনতে হবে এ মাসে।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, বেসরকারি কোম্পানীর এলপি গ্যাস কোম্পানীর বরিশালের পরিবেশকদের সিন্ডিকেট চক্রটি গত ২৫ জুনের পরই খুচরা ব্যবসায়ীদের সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ করে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার (১ জুলাই) সকাল থেকে আগের দামের চেয়ে দেড়শ টাকা বেশী দামে খুচরা ব্যবসায়ীদের সিলিন্ডার সরবরাহ শুরু করেছেন বেসরকারী কোম্পানীর পরিবেশকরা।
ব্যবসায়ীদের দেয়া তথ্য মতে, বেসরকারি কোম্পানীর পরিবেশকদের এ সিন্ডিকেট কয়েকবছর যাবত বরিশালে এলপি গ্যাস নিয়ে অনৈতিক ব্যবসায় সক্রিয়। তারা প্রতি মাসের ২৭-২৮ তারিখের পরই খুচরা ব্যবসায়ীদের গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দিয়ে নতুন মাসের ১ তারিখ থেকে দাম বৃদ্ধি করেন। মজুদ থাকা সিলিন্ডার দিয়ে খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে পরিবেশকরা কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নেন মাসের প্রথম দিনই।
নগরীর গোঁড়াচাঁদ দাস রোডের খুচরা বিক্রেতা সেলিম বিজনেস পয়েন্টের স্বত্ত্বাধীকারী মো.সেলিম বলেন, গত ২৬ জুলাই থেকে পরিবেশকরা তাকে সিলিন্ডার সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ করে দেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সরবরাহ শুরু হলেও প্রতিটি সিলিন্ডারের পাইকারী মুল্য ধরা হয়েছে ১০০০ টাকা। যা খুচরা বিক্রেতাদের কাছে বিক্রি করতে হবে ১০৫০ টাকায়। মো. সেলিম বলেন, এর আগে ওই সিলিন্ডার ৮৫০ টাকায় কিনে ৯০০ টাকায় ভোক্তাদের কাছে বিক্রি করতেন।
একই ধরনের তথ্য দেন খুচরা বিক্রেতা চৌধুরী ট্রেডার্সের স্বত্ত্বাধীকারি মো.সুজন চৌধুরী। তিনি বলেন, প্রতি মাসের ২৬-২৭ তারিখেই পরিবেশকরা তাদেরকে সিলিন্ডার সরবরাহ বন্ধ করে পরের মাস থেকে দাম বৃদ্ধি পাওয়ার কথা জানিয়ে দেন। এবার গত ২৫ জুনের পরই তারা চাহিদা অনুযায়ী সিলিন্ডার দিচ্ছিলেন না। গতকাল বৃহস্পতিবার থেকে আগের দামের চেয়ে দেড়শ টাকা বেশী মূল্যে সিলিন্ডার দিচ্ছেন পরিবেশকরা।
সুজন চৌধুরী বলেন, বিইআরবি ভোক্তাদের জন্য জুলাই মাসের খুচরা মূল্য নির্ধারন করে দিয়েছে ৮৯১ টাকা। যা গণমাধ্যমে গুরত্ব সহকারে প্রচার হচ্ছে। এখন ১০৫০ টাকা বিক্রি করতে গিয়ে ভোক্তাদের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে খুচরা বিক্রেতাদের।
অরিয়ন গ্যাস কোম্পানীর বরিশালের পরিবেশক মো.তরিকুল ইসলামের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোম্পানী থেকেই দাম বৃদ্ধি করা হয়েছে। যে কারনে তারা খুচরা বিক্রেতাদেরও দিচ্ছেন বেশী দামে। বিইআরবি’র নির্ধারন করে দেয়া মূল্য’র বিষয়টি বলা হলে এ পরিবেশক বলেন, ‘এটা কোম্পানী ও সরকারের মধ্যে বোঝাপড়া হবে। তারাই সরকাকে ম্যানেজ করবেন’।
এলপি গ্যাস কোম্পানী মেট্রোম্যাক্স’র পরিবেশক মলয় সাহাসহ আরও কয়েকজন পরিবেশকও দাবী করেন, কোম্পানী থেকে দাম বৃদ্ধি করায় তাদের কিছু করার থাকেনা। তবে বসুন্ধরা গ্যাস কোম্পানীর পরিবেশক মো. রাসেল হোসেন বলেন, তারা জুন মাসের দর ৮৮০ টাকায় খুচরা বিক্রেতাদের এখনও দিচ্ছেন। দাম বৃদ্ধির বিষয়টি কোম্পানী থেকে এখনও জানানো হয়নি।
প্রসঙ্গত, এলপি গ্যাস নিয়ে বেসরকারী কোম্পানীগুলোর অতিরিক্ত মুনাফা বন্ধ করতে বিআইআরবি গত মে মাস থেকে সারাদেশে ভোক্তাদের কাছে বিক্রির একটি মূল্য নির্ধারন করে দিচ্ছে। শুরু থেকেই তা বাজারে তা কার্যকর হচ্ছেনা। বিআইআরবি জুন মাসে খুচরা বিক্রেতাদের জন্য এলপি গ্যাসের মূল্য নির্ধারন করে দিয়েছিল ৮৪০ টাকা। তখন বরিশালের সিন্ডিকেট চক্রের কারনে খুচরা বাজারে বিক্রি হতো ৯০০ টাকা দরে। বুধবার বিআইআরবি জুন মাসের চেয়ে আরও ৪৯ টাকা বৃদ্ধি করে খুচরা মূল্য নির্ধারন করেছে ৮৯১ টাকা। বরিশালের বৃদ্ধি পেল প্রতি সিলিন্ডারে দেড়শ টাকা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *