স্বাস্থ্যখাত ঢেলে সাজানোর দাবী মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : সরকারি হাসপাতালে যন্ত্রপাতি ক্রয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ স্বাস্থ্যখাত নতুন ভাবে ঢেলে সাজানো এবং করোনা সংকটে স্বল্পমূল্যে অক্সিজেন উৎপাদন ও সরবরাহের জন্য বুয়েটের একদল শিক্ষক-ছাত্রদের উদ্ভাবিত “অক্সিজেট” ডিভাইসকে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের দ্রুত অনুমতি প্রদান- এই দুই দফা দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে আয়োজিত এক মানববন্ধন ও প্রতিবাদ সমাবেশে মঞ্চের নেতৃবৃন্দ এসব দাবি জানান। মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুলের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুনের সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে সংগঠনের উপদেষ্টা বিশিষ্ট ভাস্কর শিল্পী রাশা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সনেট মাহমুদসহ প্রমুখ নেতৃবৃন্দ বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশে নেতৃবৃন্দ বলেন, করোনা সংক্রমণ যত বাড়ছে ততই বাড়ছে অক্সিজেনের চাহিদা। এরই মধ্যে চাপ কম থাকায় খুলনায় এবং হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সংকটে বগুড়ায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। এমন প্রেক্ষাপটে আশার আলো দেখাচ্ছে বুয়েটের তৈরি অক্সিজেট। যন্ত্রটি মূলত স্বল্প খরচে রোগীকে উচ্চ গতির অক্সিজেন দিতে সক্ষম। যন্ত্রটি বাতাস ও অক্সিজেনের সংমিশ্রণে মিনিটে ৬০ লিটার গতিতে অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারে। প্রয়োজনে দিবে শতভাগ অক্সিজেন কনসেন্ট্রেশন। এরই মধ্যে যন্ত্রটিকে হাইফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলার সঙ্গে তুলনা করেছেন চিকিৎসকরা। বুয়েটের গবেষক দল ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে আবেদন করার পরেও আজও পর্যন্ত অনুমতি দেয়া হয়নি। করোনা সংকট মোকাবিলায় অক্সিজেট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হবে। যন্ত্রটি নিয়ে এতদিন গণমাধ্যমে আলোচনা হওয়ার পর এখনও পর্যন্ত ওষুধ প্রশাসন অধিদপ্তর অনুমতি দেয়া হয়নি যা অত্যন্ত দুঃখজনক। এবিষয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

অবিলম্বে বুয়েট উদ্ভাবিত অক্সিজেটকে দ্রুত অনুমোদন দেওয়ার দাবি জানিয়ে তারা বলেন, অন্যথায় ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরের বিরুদ্ধে কঠোর কর্মসূচী ঘোষণা করা হবে। তারা বলেন, শুধুমাত্র ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর নয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অধীনে অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। করোনা সংকট মোকাবিলার জন্য স্বাস্থ্যখাতকে নতুনভাবে ঢেলে সাজানোর বিকল্প নেই। প্রতিটি জেলা হাসপাতালে পর্যাপ্ত আইসিউ বেড স্থাপন, অক্সিজেন ব্যবস্থা, করোনা টেস্টের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ সকল নাগরিককে টিকার আওতায় আনতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি ও অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদেরকে চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

ভাস্কর শিল্পী রাশা বলেন, করোনা ভাইরাস পরিস্থিতি মোকাবেলায় বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে দশ হাজার কোটি টাকা থোক বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এই অর্থ ব্যয়কালীন দুর্নীতি রোধ করা কতটা সম্ভব হবে-তা নিয়ে আমরা সন্দেহ প্রকাশ করছি। সরকারের ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য জনগণের মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্য খাতকে অবিলম্বে দুর্নীতিমুক্ত করতে হবে।

স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রীর হাস্যকর বক্তব্য প্রত্যাখান করছে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ। তার দায়িত্বহীন বক্তব্য দুর্নীতিবাজদের উৎসাহিত করেছে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির ধারাবাহিক চিত্রগুলো মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সফল অর্জনসমূহকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। অবিলম্বে স্বাস্থ্যখাতকে নতুনভাবে ঢেলে সাজাতে হবে।

সভাপতির বক্তব্যে আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, করোনা সংকটে স্বাস্থ্যখাতে নিয়োগে ঘুষ বাণিজ্য, কেনাকাটায় দুর্নীতি আর অনিয়মের অনেক খবর গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে, যেসব খবরের কোন প্রতিবাদও আসেনি সংশ্লিষ্ট দপ্তর থেকে। করোনা মহামারির সময়ে এই খাতে অনিয়ম ও দুর্নীতির পরিমাণ অনেক বেড়েছে বলে দুর্নীতিবিরোধী সংস্থা ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ বা টিআইবি একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। তিনি বলেন, ২০১৯ সালে একটি প্রতিবেদনে স্বাস্থ্যখাতে কেনাকাটা, নিয়োগ, পদোন্নতি, বদলি, পদায়ন, চিকিৎসাসেবা ইত্যাদি মিলিয়ে দুর্নীতি বেশি হয়, এমন ১১টি খাত চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন। স্বাস্থ্যখাতের এসব দুর্নীতি ও অনিয়ম অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। অন্যথায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ঘেরাও আরোও কঠোর কর্মসূচী পালন করবে বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *