নাগরিক রিপোর্ট ॥ আসছে ঈদ উল আযহা। কোরবানীর পশু কেনায় তোরজোর শুরু করেছেন বরিশালের সাধারন মানুষ। অবশ্য দক্ষিনাঞ্চলে কোরবানীর পশুর (গরু-ছাগল-মহিষ-ভেড়া) চাহিদা বিগত বছরগুলোতে স্থানীয়ভাবে মেটানো যায়নি। এবারও একই অবস্থা। বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের দায়িত্বশীলরা জানিয়েছেন. বিভাগের ৬ জেলায় চাহিদার অর্ধেক পশুর যোগান দেয়ার সম্ভব হবে। অবশিস্ট চাহিদা মেটাতে সীমান্ত জেলা যশোর, কুষ্টিয়া, সাতক্ষিরা, মেহেরপুর এলাকা থেকে পশু আমদানীর নির্ভর করতে হবে। এবার বিগত সময়ের চেয়ে চাহিদা অপেক্ষা কম পশু রয়েছে বলে ওই সুত্র জানিয়েছে। প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, এ অঞ্চলে উদ্যোক্তার অভাবে খামার বাড়ছেনা। যার প্রভাব পড়ছে প্রতিবছর কোরবানীর পশু চাহিদার ওপর। চাহিদা পুরোন না হওয়ায় এবারও পশুর দাম অপেক্ষাকৃত বেশি হওয়ার আশংকা করেছে ব্যবসায়ীরা।
বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ কার্যালয় সুত্রে জানা গেছে, এবছর বরিশাল বিভাগের ৬ জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় দেড় লাখ। তার বিপরীতে স্থানীয় খামারে পশু আছে ৮৭ হাজার ১৫৩টি। অর্থাৎ প্রায় ৬৩ হাজার পশুর ঘাটতি আছে। বিভাগে তালিকাভূক্ত পশুর খামার আছে ১৫ হাজার ১৪৪টি। ঈদ উল আজাহায় পশু চাহিদার এ পরিসংখ্যান প্রসঙ্গে দপ্তটির এক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা বলেন, গতবছর বিভাগের ৬ জেলায় প্রায় দেড় লাখ পশু কোরবানী হয়েছে। চামড়া ক্রয়-বিক্রয়ের হিসেব অনুযায়ী তারা এ সংখ্যা নির্ধারন করেছেন। এ কর্মকর্তা বলেন, আগের বছর কোরবানী হওয়ার সংখ্যা ৩ ভাগ বৃদ্ধি করে প্রতিবছরের ঈদ উল আজাহায় পশুর চাহিদা নির্ধারিত হয়। গতবছর অতিরিক্ত পশুর চাহিদা বাদ দিলে এবারের চাহিদা দেড় লাখের মধ্যে সীমাবদ্ধ আছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, এবার চাহিদা তুলনায় স্থানীয় পশুর সংখ্যা অপেক্ষাকৃত কম।
জানতে চাইলে বরিশাল জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডা. নুরুল ইসলাম বলেন, ভারত থেকে গরু পাঠানো বন্ধ এবং মাংসের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের তরুন ব্যবসায়ীরা পশু খামারের ব্যবসার দিক ঝুকছে। তবে এ অঞ্চলে কোরবানীর পশুর চাহিদা মেটানোর পর্যায়ে যেতে আরও অনেক বছর অপেক্ষা করতে হবে। এ অঞ্চলে লোকজনদের পশুর খামার ব্যবসায় অনাগ্রহ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এখানে নদী-সাগর বেষ্টিত হওয়ায় পশু খামার ব্যবসার মতো প্রতিকূল পরিবেশ আগে ছিল না। যে কারন বংশানুক্রমে এ অঞ্চলের জনগোষ্ঠী পশুর খাবার ব্যবসায়আগ্রহী হয়নি। এ অঞ্চলে চাহিদার বড় সরবরাহ আসে চরাঞ্চলে কৃষকদের পালিত পশু থেকে।
এদিকে বরিশালের বৃহৎ পশুর হাট বানারীপাড়ার গুয়াচিত্তা, বাকেরগঞ্জের বোয়ালী, সদর উপজেলার কাগাসুরা গরুর হাটের একাধীক ব্যবসায়ী জানান, সীমান্ত থেকে ভারতীয় গরু প্রবেশে সিলগালা করে দেয়া হয়েছে। এ অবস্থায় দেশীয় গরু বিশেষ তরে উত্তর অঞ্চলের পশুর উপর নির্ভর করতে হবে। স্থানীয় পর্যায়ে বরিশালে গরু, ছাগল কম থাকায় এবারও পশুর দাম বাড়তে পাড়ে বলে ওইসব হাটের ব্যবসায়ীরা আশংকা করছেন।
এব্যপারে বরিশাল বিভাগীয় প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক কানাই লাল স্বর্ণকার বলেন, ঈদ উল আযাহার প্রস্ততি নিয়ে গত বুধবার তিনি ঢাকায় মন্ত্রাণালয়ের একটি সভায় অংশ নিয়েছেন। সেখানে বরিশাল বিভাগের সার্বিক অবস্থা উপস্থাপন করা হয়েছে। ওই সভায় জানানো হয়, গোটা দেশে কোরবানীর চাহিদার চেয়ে বেশী অনেক পশু রয়েছে। বরিশালে পশু কোরবানী ক্ষেত্রে ঘাটতি হওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বিভাগে গত কয়েকবছরে খামার বৃদ্ধি পাওয়ায় পশু কোরবানীর ক্ষেত্রে ঘাটতি অনেক কমেছে। দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসায়ীরা অন্য জেলা থেকে আমদানী করে পশুর হাটে এ ঘাটতি পুরন করে থাকে।
২০১৯-০৭-২০