ঈদ মৌসূমে বেপরোয়া লঞ্চ চলাচল ॥ ঘটছে দুর্ঘটনা

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ আসন্ন ঈদ উল আযহাকে ঘিরে নৌপথে যাতায়াতে তোরজোর শুরু করেছেন দক্ষিনাঞ্চলের যাত্রীরা। ঈদে বরিশাল-ঢাকা রুটে লঞ্চে যাতায়াতের চাহিদা নজিরবিহীন। অবশ্য দুর্যোগ মৌসূমও চলমান। এমন অবস্থায় নৌপথে একের পর এক ঘটছে দুর্ঘটনা। এ রুটের বৃহৎ লঞ্চগুলো প্রতিযোগিতা করে লঞ্চ চালাচ্ছে। গত দুই দিনে এমন দুটি ঘটনায় যাত্রীদের মাঝে শংকা বিরাজ করছে। অভিযোগ রয়েছে, লঞ্চের অদক্ষ মাস্টার ও সুকানি বেপরোয়া গতি লঞ্চ চালাচ্ছে। অথচ বিআইডব্লিউটিএ এক্ষেত্রে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। ঈদ মৌসূমে যাত্রীদের নিরাপত্তায় এমন দুর্ঘটনা এড়ানোর প্রস্তাব রোববার নৌ মন্ত্রনালয়ের সভায় উত্থাপন করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা।
গত বুধবার ঢাকা থেকে বরিশালে আসার পথে গভীর রাতে সুন্দরবন-১০ কে সজোরে ধাক্কা দেয় পরাবাত-১১। এতে যাত্রীদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়ে। ব্যাপক ক্ষতি হয় লঞ্চটির। ওই লঞ্চে থাকা পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী কর্নেল (অব:) জাহিদ ফারুক এমপি’র সহযোগীরা জানান, গভীর রাতে সুন্দরবন-১০ লঞ্চটি মেঘনা নদীতে পড়লে আকস্মিক পারাবাত-১১ ধাক্কা দেয়। ওই লঞ্চে থাকা প্রায় ৯০০ যাত্রীর অধিকাংশের মধ্যে আতংক বিরাজ করে। জানা গেছে, প্রতিমন্ত্রী দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নৌপরিবহন অধিদপ্তরকে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর পরদিন বৃহস্পতিবার সুন্দরবন-১১ লঞ্চকে ধাক্কা দেয় পরাবাত-১২। সুন্দরবন-১১ লঞ্চে থাকা ব্যাংক কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ বলেন, যাত্রীরা ঘুমিয়ে ছিলেন। হঠাৎ রাত ১২টার দিকে দুলে ওঠে লঞ্চটি। অনেকে আতংকে কেবিন থেকে বেড়িয়ে আসে। জানা গেছে, বরিশাল-ঢাকা নৌপথে এমন একাধিক ঘটনায় প্রানও ঝড়ে গেছে যাত্রীর।
সুন্দরবন-১০ লঞ্চের মাস্টার মো: মজিবর রহমান বলেন, মিয়ার চর চ্যানেলে পানি কম থাকায় এমন দুর্ঘটনা ঘটছে। পারাবাত এর মালিক শহীদ ভুইয়া এবিষয়ে তার মাস্টারকে সতর্ক করেছেন। কেননা তার লঞ্চের মাস্টার শামিম মোল্লা লঞ্চের দুরত্ব বজায় রাখেনি। তিনি বলেন, ২০১৫ সালে এই শামিম মোল্লা পরাবাত-৯ এর বেপরোয়া গতিতে সুন্দরবন-৮ কে আঘাত করে। তখন ৩জন যাত্রী মারা যান। তিনি বলেন, বিআইডব্লিউটিএ’র ক্ষেত্রে দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। কেননা ঈদ মৌসূমেও বিআইডব্লিউটিএ কে ঢাকা-বরিশাল নৌপথের মিয়ারচর চ্যানেল ক্লিয়ার রাখে না। সেখানে দীর্ঘদিন ধরে একটি মালবাহী কার্গো ডুবে আছে।
তবে নামপ্রকাশ না করার শর্তে লঞ্চের এক মালিক জানান, মাস্টার এবং সুকানীর বেপরোয়া লঞ্চ চালানোয় একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রানও যাচ্ছে ঝড়ে। অথচ মাস্টার সুকানির বিরুদ্ধে কে ব্যবস্থা নেয়া হয় না। সমুদ্রপরিবহন অধিদপ্তর তাদের সনদ বাতিল করলে এমন মরন খেলায় আর মাততে পারে না। ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী সমাজকর্মী আনোয়ারুল হক বলেন, দক্ষিনের মানুষের নৌপথে যাতায়াত আরামদায়ক। কিন্তু এখন বেপরোয়া গতিতে লঞ্চগুলো চালানো হচ্ছে। যেকারনে ঘটছে দুর্ঘটনা। তিনি বলেন, আসন্ন ঈদ মৌসূম এবং দুর্যোগকালীন এমন বেপরোয়া লঞ্চ চলাচলে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। বিআইডব্লিউটিএ’র এক্ষেত্রে নজরদারী বাড়ানো দরকার।
জানতে চাইলে লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা ও সুন্দরবন লঞ্চের স্বত্তাধিকারী সাঈদুর রহমান রিন্টু বলেন, গত দুই দিনের ঘটনাই আশংকাজনক। বুধবার লঞ্চে প্রতিমন্ত্রী ছিলেন। অবশ্য সকল যাত্রীর নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব আমাদের। কেন বেপরোয়াভাবে লঞ্চ চালাতে হবে? তিনি বলেন, আজ রোববার নৌ মন্ত্রনালয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ‘ঈদ প্যাসেঞ্জার ম্যানেজমেন্ট’ সভায় এ বিষয়টি উত্থাপন করা হবে।
এসব প্রসঙ্গে জানতে বরিশাল নৌ নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের উপ পরিচালক (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আজমল হুদা মিঠু সরকারকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এব্যাপারে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীন নৌ চলাচল (যাত্রী পরিবহন) সংস্থার সচিব মো: সিদ্দিকুর রহমান পাটোয়ারী বলেন, একের পর এক লঞ্চে দুর্ঘটনা ঘটছে। এগুলো কে বলবে। মাস্টার, সুকানিরা কেবল আন্দোলনের হুমকী দেয়। আর বেপরোয়া লঞ্চ চলানোয় জানমালের দায় পড়ে মালিকদের। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার নৌ সেক্টরে শৃংখলা ফেরাচ্ছেন না। বিআইডব্লিউটিএ কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নৌমন্ত্রনালয়ের সভায় আজ রোববার যাত্রীদের নিরাপত্তায় বেপরোয়া গতিতে লঞ্চ চালানো বন্ধের প্রস্তাব তোলা হবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *