গৌরনদী সংবাদদাতা ॥ নাবালক জন্ম সনদে দলিল সম্পাদন করতে রাজি না হওয়ায় কতিপয় ছাত্রলীগের নেতাকর্মী রোববার বিকালে বরিশালের গৌরনদী সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে হামলা চলিয়ে কাগজপত্র তছনছ, ভাংচুর ও দলিল লেখক সমিতির সভাপতিসহ ৫ ষ্টাফকে পিটিয়ে আহত করেছে। গুরুতর আহত দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওছার হোসেন, অফিস সহায়ক এনায়েত হোসেন সরদারকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স্রে ভর্তি করা হয়েছে। এ ঘটনায় সাব-রেজিস্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদী হয়ে সরকারী গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা সুমন মাহামুদ ওরফে সুমন মোল্লা, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সুজন ও পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মিলন খলিফার নামোল্লেখসহ ছাত্রলীগের ১৫ নেতাকর্মীকে আসামি করে রাতেই থানায় মামলা দায়ের করেন।
গৌরনদীর সাব-রেজিষ্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা মামলার এজাহারে উল্লেখ করেন, গত ২০ আগস্ট দলিল লেখক কামাল হোসেন মিয়া ৭ জন দাতার নাম উল্লেখ করে আমার কাছে একখানা দলিল দাখিল করেন। পর্যালোচনায় ৪ জন দাতার জন্ম সনদ নিয়ে সন্দেহ হয়। এর পরেও মামলার প্রধান আসামি সুমন মোল্লাসহ অন্যান্য আসামিরা দলিল সম্পাদনের জন্য আমাকে চাপ প্রয়োগ করে নানা ধরনের হুমকি প্রদান করে। বিষয়টি নিয়ে জাল-জালিয়াতি প্রমানিত হওয়ায় আমি দলিলটি স্থগিত রেখে ওই দলিল লেখক কামাল হোসেনকে বহিষ্কার করি। পরবর্তিতে আসাামরা ওই ৪ জনের জন্ম সনদ যোগাড় করে রোববার (২৫ আগস্ট) বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে দলিলটি আমার কাছে দাখিল করে। সেখানেও জালিয়াতির বিষয়টি ধরা পরে।
এর পরেও চাপের মুখে দলিলটি সম্পাদনের চেষ্টা চালায় সুমন মোল্লা, শাখাওয়াত হোসেন সুজন, মিলন খলিফাসহ অন্য আসামিরা। তারা অফিসের মধ্যে বসে আমার সাথে ঔদাত্যপূর্ন আচারন করে। এ সময় দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওছার হোসেনের সাথে কথার কাটাকাটি হয়। এক পর্যায়ে দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে তারা কাওছার হোসেনকে মারপিট শুরু করে। তাকে (কাওছার) রক্ষায় জন্য সাব-রেজিষ্ট্রি অফিসের সহকারী মোঃ শাহাদাত হোসেন (৪৫), অফিস সহায়ক এনায়েত হোসেন সরদার (৩০), দলিল লেখক সজল সরকার (৩৫)সহ অফিসের ৫ জন ষ্টাফ এগিয়ে এলে তাদেরকেও পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে। এসময় আসামিরা অফিসের কম্পিউটার ও ২টি চেয়ার ভেঙ্গে ফেলে এবং মূল্যবান দলিলপত্র তছনছ করেছে বলে এজাহারে উল্লেখ করেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, হামলাকারীরা দলিল লেখক কাওছার হোসেনকে টেনে হেচড়ে অফিস থেকে বের করে অপহরণের চেষ্টা চালায়। তারা তার পড়নের জামা-কাপড় ছিড়ে ফেলে। এ সময় টিটু কমিশনার ছাত্রলীগ নেতাদের কবল থেকে দলিল লেখক কাওছারকে উদ্ধার করেন। ঘটনার পর সেখানে পুলিশ পৌছে। ওইদিন সন্ধার পর পৌর মেয়র মোঃ হারিছুর রহমান ও গতকাল সোমবার সকালে গৌরনদী সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুর রব ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে সরকারি গৌরনদী কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি সাখাওয়াৎ হোসেন সুজন বলেন, আমার মা একটি দলিলের গৃহীতা। ওই দলিলটি রেজিষ্ট্রারি করতে গেলে ৭জন দাতার মধ্যে ৪ জন দাতার কাগজপত্রে কিছুটা সমস্যা সৃষ্টি হয়। পরবর্তিতে রোববার আমি কাগজপত্র সংশোধন করে নিয়ে গেলে সাব-রেজিষ্টার দলিল নিবন্ধন করতে চাইলেও দলিল লেখক সমিতির সভাপতি কাওছার তাতে বাধা দেন। এ নিয়ে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটেছে।
এ ব্যাপারে গৌরনদী মডেল থানার ওসি গোলাম সরোয়ার জানান, এ ঘটনায় সাব-রেজিষ্ট্রার মুবাশ্বেরা সিদ্দিকা বাদী হয়ে সরকারী গৌরনদী কলেজের সাবেক ভিপি ছাত্রলীগ নেতা মোল্লা সুমন মাহমুদ, কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ শাখাওয়াত হোসেন সুজন, পৌর ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ মিলন খলিফার নামোল্লেখ কর অজ্ঞাতনাাম ছাত্রলীগের ১০/১২ নেতাকর্মীকে আসামি করে ওইদিন রাতে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। মামলার আসামিদের গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
২০১৯-০৮-২৬