ঘুরে দাড়াতে পাড়ছে না বরিশাল বিএনপি

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট ॥ ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবার কেবল সভা আর সমাবেশেই সীমাবদ্ধ রেখেছে বরিশাল বিএনপি। অথচ কয়েকবছর আগেও অনেকটা প্রতিযোগীতা করে দলটি তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন করছে। কারন হিসেবে জানা গেছে, বরিশাল বিএনপিতে সাংগঠনিক দুর্বলতা আর বিরোধ জেঁকে বসেছে। মহানগর, উত্তর আর দক্ষিনে দ্বন্দের কারনে দীর্ঘদিনেও নতুন নেতৃত্ব সৃস্টি হয়নি। দলের বড় একটি অংশ অনুপস্থিত থাকায় কর্মসুচীর আকারও ছোট করছে স্থানীয় বিএনপি। এখন কেবল ৪ দেয়ালের মাঝেই সীমাবদ্ধ বিএনপির অধিকাংশ কর্মসুচী। বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা এই সংকটের কথা স্বীকার করে এজন্য দলীয় ব্যার্থতার পাশাপাশি রাজনৈতিক চাপকেও দায়ী করেছেন।
রোববার পালিত হচ্ছে বিএনপির ৪১তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এ উপলক্ষে মহানগর বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের গন্ডির মধ্যে সমাবেশে করেছে। আর উত্তর ও দক্ষিন কেবল চার দেয়ালের মাঝে সভা করবে। দলটির এমন সংকোচিত কর্মসুচীতে হতাশ নেতাকর্মীরা। ছাত্রদলের সাবেক জেলা যুগ্ন আহবায়ক ছিলেন সাইফুল ইসলাম সুজন। আন্দোলনে নগরীতে তাকে দেখা গেছে সম্মুখভাগে। তিনি বলেন, জীবন থেকে একটি রাজনৈতিক অধ্যায় শেষ হয়ে গেছে তার। এখন আর রাজনৈতিক পরিচয় নেই। ছাত্রদলে পদ পাননি। যুবদল, সেচ্ছাবেকদলেও ঠাই হয়নি। তিনি বলেন, ‘এখন আমরা তো টোকাই হয়ে গেছি। কেন আমি কর্মসুচীতে যাব।’ সুজন বলেন, তার মত বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের বড় অংশ এখন আর দলীয় কর্মসুচীতে যান না। তাই প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে র‌্যালীও হয় না। দলে কর্মী সংকট, তাই বড় কর্মসুচী নিতে পাড়ছে না বর্তমান নেতারা। কর্মী না থাকলে দল কি করে ঘুড়ে দাড়াবে।
এক সময়ের তুখোড় ছাত্রনেতা ও বিএনপির সাবেক এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে প্রতিবছর বিশাল র‌্যালী হত। প্রতিযোগীতা করে নেতাকর্মী আনা হত। এখন কর্মসুচী হয় ৪ দেয়ালের মাঝে। তিনি বলেন, নেতাকর্মীরা আর কত আসবে। তাদেরও তো নেতা হতে ইচ্ছে হয়। কিন্তু নেতৃত্বের পরিবর্তন না আসায় অনেক কর্মী হারিয়ে যাচ্ছে।
বাবুগঞ্জ উপজেলা বিএনপির এক নেতা বলেন, এক সময় তিনি গাড়ি ভরে কর্মী নিয়ে যেতেন দলীয় কর্মসুচীতে। জেলা বিএনপিতে ঠাঁই পাবেন সেই আসায় অনেক করেছেন। কিন্তু ৬ বছর হয়ে গেছে দক্ষিন জেলা বিএনপিতে নেতা মাত্র ৭জন। একই ধরনের মন্তব্য করেছেন হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের অনেক বিএনপি কর্মী।
দলীয় সুত্রে জানা গেছে, ২০১৩ সালের নভেম্বরে বরিশাল মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন হয়। একই বছর দক্ষিন জেলা বিএনপির কমিটি গঠিত হয়েছিল। উত্তর জেলা বিএনপির কমিটি হয়েছে প্রায় ৯ বছর। সুত্রমতে, মহানগর বিএনপির অনেক পদধারী নেতা দলীয় কর্মসুচীতে আসনে না অনেক বছর। কেউ কেউ আবার দলই ছেড়ে দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও দল পূনর্গঠন না হওয়ায় নেতাকর্মীরা কর্মসুচীবিমুখ হয়ে পড়ছেন। ইতোমধ্যে সাবেক ছাত্রদলের একটি অংশ ভেতরে ভেতরে বৈঠক করে সংঘটিত হচ্ছেন বর্তমান নেতৃত্বের বিরুদ্ধে। ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সাংগঠনিক সম্পাদক জি এম আতায়ে রাব্বি বলেছেন, তারা সাবেক ছাত্রনেতারা যারা এখন যুবদল, বিএনপিতে আছেন তারা বেশ কয়েকবার বৈঠক করে একটি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন যে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। কেননা দলে তাদের যোগ্যতার মুল্যয়ন হচ্ছে না। ৭ সদস্যের দক্ষিন জেলা বিএনপির মধ্যেও কোন্দল চরমে। মেয়া উত্তীর্ন কমিটি থাকায় উত্তর জেলা বিএনপিতে ক্ষোভ বাড়ছে।
জানতে জাইলে উত্তর জেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল আলম রাজু বলেন, নেতৃত্বের দিক থেকে দল সংকটে আছে। চেয়ারপার্সনের মুক্তির আন্দোলন সাংগঠনিক দুর্বলতায় চাপা পড়ে গেছে। দল পুনর্গঠন না হওয়ায় তারাও সফল হতে পারেননি। যেকারনে ঘুরে দাড়াতে পাড়ছে না বিএনপি। তিনি দাবী করেন, ক্ষমতাসীন দলের চাপের কারনে নেতাকর্মীরা প্রকাশ্যে কর্মসুচীতে অংশ নিতে পাড়ছে না।
মহানগর বিএনপির সহ সাধারন সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, বহু ঘাতপ্রতিঘাত এর মধ্যে দল ভাল আছে। ক্ষমতাসীন দলের চাপ নিয়ে দলকে চলতে হয়। তিনি বলেন, কিভাবে ঘুরে দাড়াবে বিএনপি, ‘জনগনকে ভোট দিতে দেয়া হোক।’ বিএনপি নেতা তারিন স্বীকার করেন, কিছু লোক ভয়ে আসে না কর্মসুচীতে। আর কিছু লোক কি কারনে আসে না তা তিনি জানেন না। নগর বিএনপি পুনর্গঠন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এটি প্রক্রিয়াধীন বিষয়।
এব্যপারে বরিশাল দক্ষিন জেলা বিএনপির সাধারন সম্পাদক আবুল কালাম শাহিন বলেন, খালেদা জিয়াকে ছাড়া দল কি করে ভাল থাকে। দক্ষিন জেলা পুর্নাঙ্গ করতে না পাড়ার কথা স্বীকার করে বিএনপি নেতা শাহিন বলেন, সাংগঠনিক সম্পাদক কে হবেন এই সিদ্ধান্তের কারনে এতো বছরেও কমিটি পুর্নাঙ্গ করা যায়নি।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *