কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাঁধ নির্মানে অনিয়ম তদন্তে জেলা প্রশাসন

Spread the love

নাগরিক রিপোট॥ কুয়াকাটাসৈকত সুরক্ষা বাঁধনির্মান কাজে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। কাজ শেষ হওয়ার আগেই জিও ব্যাগ টিউব ফেটে বের হয়ে যাচ্ছে বালি। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে জিও ব্যাগ টিউবে মোটা বালির স্থলে দেয়া হচ্ছে সৈকতে কাদামাটি মিশ্রিত বালি। ব্যাগ টিউবও নি¤œমানের। ফলে সৈকতে স্থাপনের কিছুদিন পর সেগুলো ফেটে যাচ্ছে। অপরিকল্পিতভাবে টিউব জিও ব্যাগ স্থাপনের জন্য শ্রীহিন হয়ে পড়ছে সৈকত। স্থানীয় বাসিন্দা পর্যটকরা মনে করেন নি¤œমানের কাজের কারনে সুরক্ষা বাঁধ স্থায়ী হবেনা। ফলে সৈকত রক্ষার উদ্যেগ ব্যর্থ হবে।

এদিকে কুয়াকাটা সৈকত সুরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজে অনিয়ম তদন্তে সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন পটুয়াখালীর জেলা প্রশাসক এবং কুয়াকাটা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি মো. মতিউল ইসলাম চৌধুরী। পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট (এডিএম) মো. নুরুল হাফিজকে প্রধান করে গঠিত তদন্ত কমিটি গত মঙ্গলবার সরেজমিনে সৈকত পরিদর্শন করেন। এসময় তদন্ত কমিটির প্রধান এডিএম নুরুল হাফিজ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে দেখা গেছে কাজের মান ভাল হয়নি। পূর্ণ তদন্ত শেষে প্রয়োজনী ব্যবস্থা নেয়া হবে

তবে অনিয়মের জন্য অভিযুক্ত কলাপাড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী খান মো. অলিউজ্জামান তদন্ত কমিটির সদস্য সচিব হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদনে প্রভাব পড়ার আশংকার কথা জানিয়েছেন কুয়াকাটা প্রেস ক্লাবের সভাপতি মিজানুর রহমান বুলেট।

সূর্যোদয় এবং সুর্যাস্ত দেখার বিরল সুযোগ মেলে পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে। পূর্বপশ্চিমে ১৮ কিলোমিটার দীর্ঘ সৈকতের ফাঁকে ফাঁকে ছিল নয়নাভিরাম ঝাউবন, নারিকেল বাগান কেওড়া বন। কিন্ত সাগরে প্রচন্ড ঢেউয়ের তোরে গত বছরে হারিয়ে গেছে নারিকেল বাগান কেওড়া গাছের লেম্বুর বন। ইকোপার্ক সংলগ্ন সৈকতে কোনভাবে অস্তিত্ব টিকে আছে ঝাউবনের। সৈকত লাগোয়া এসব সৌর্ন্দয্যের উৎসগুলো কেড়ে নিয়ে সাগর গিলতে শুরু করেছে বেলাভূমি।

চলতি বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে প্রচন্ড ঢেউয়ের তোড়ে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে মুল বেলাভূমি বিলীন হতে শুরু করলে কলাপাড়া পাউবোসৈকত সুরক্ষা বাঁধনামে একটি প্রকল্প হাতে নেয়। প্রকল্পের অধীনে পূর্ব দিকে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট পিকনিক স্পট থেকে পশ্চিমে দাখিল মাদরাসা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার সৈকতে জিও ব্যাগ টিউব দিয়ে সুরক্ষা বাঁধ নির্মানের পদক্ষেপ নেয়া হয়। প্রকল্পের ব্যায় ধরা হয় কোটি ৯০ লাখ টাকা।

নিয়মানুযায়ী পাউবোর কলাপাড়া সার্কেল থেকে দরপত্র আহ্বানের পর সৈকত সুরক্ষা বাঁধের কাজ পায় বিজেজিও টেক্সটাইল নামের একটি প্রতিষ্ঠান। গত ১৫ এপ্রিল প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হয়। কাজ শেষ করার কথা ৩০ জুনের মধ্যে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীল সুত্র জানায়, দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী প্রতিটি জিও টিউবের দৈঘ্য হবে ৩০ মিটার এবং প্রস্থ মিটার। প্রতিটি টিউবের সাগর সাইডে এবং তীর অংশে দুটি করে দশমিক ৭৪ মিটার প্রস্থের জিও ব্যাগ দিতে হবে। টিউব এবং জিও ব্যাগ ভরতে হবে সিলেট স্যান্ড বা মোটা বালু দিয়ে। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি সচেতন মহলের অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজের শুরু থেকেই দরপত্রের শর্ত উপেক্ষা করে সৈকতের বালু দিয়ে প্রকাশ্যে জিও ব্যাগ টিউব ভরে সৈকতে স্থাপন করছেন। বালি কাটা মেশিন দিয়ে সৈকতের বালু টিউব ব্যাগে ভরলেও পাউবো কর্তৃপক্ষ তা দেখছেন না।

কুয়াকাটা পৌরসভার কাউন্সিলর মো. শাহ আলম হাওলাদার অভিযোগ করেন, সৈকতে গর্ত করে মেশিন দিয়ে জিও টিউবে বালু ভরার প্রতিবাদ করেছিলেন তিনি। এতে ক্ষুদ্ধ হয়ে পাউবোর কলাপাড়া সার্কেল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাঁধাদানের অভিযোগ তুলে নোটিশ দিয়েছেন। তিনি আরও অভিযোগ করেন, প্রকাশ্যে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান সৈকত সুরক্ষা বাঁধ নির্মানের কাজে অনিয়ম করলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের ভূমিকা রহস্যজনক। ৩০ জুনের মধ্যে বাঁধের কাজ শেষ করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত অর্ধেক কাজও হয়নি।

পর্যটক মনিরুল আলম স্বপন বলেন, ‘দেখে মনে হয়না, টিউব জিও ব্যাগ কোন কর্তৃপক্ষের তত্ত্বাবধানে স্থাপন করা হচ্ছে। কাজ টেকসই হবেনা। বরং সৈকতের সৌন্দর্য্য নষ্ট হচ্ছে কুয়াকাটা ডেভেলপমেন্ট সোসাইটির নির্বাহী পরিচালক রুমন ইমতিয়াজ তুষার বলেন, সৈকতের বালু ভরার কারনে টিউব ব্যাগ থেকে তা বের হয়ে যাচ্ছে। নি¤œমানের হওয়ায় স্থাপনের দিন পরেই ফেটে যাচ্ছে ব্যাগ টিউবগুলো।

কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আব্দুল বারেক মোল্লা বলেন, ‘আমরা কুয়াকাটা সৈকত রক্ষার জন্য দাবী জানিয়েছিলাম। সুরক্ষা বাঁধ নির্মান কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তাই প্রকল্প বাস্তবায়নে পাউবো কর্তৃপক্ষের দায়িত্বশীলতা প্রয়োজন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *