চালের দাম বাড়ানো হচ্ছে যে কৌশলে

Spread the love

হঠাৎ করে বেড়েছে চালের দাম। বাজারে সব ধরনের চালের দাম প্রতিকেজিতে ২ থেকে ৫ টাকা করে বেড়েছে। কেন বেড়েছে, তা জানে না কেউ। সরকারের নীতিনির্ধারকরা মনে করেন, দেশে চালের পর্যাপ্ত উৎপাদন ও মজুত রয়েছে। সুতরাং দাম বাড়ার কোনও যৌক্তিক কারণ নেই। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সরবরাহ কম থাকায় দাম বেড়েছে, সরবরাহ বাড়লেই দাম কমে যাবে। অন্যদিকে ক্রেতারা বলছেন, বাজারে সরকারের কোনও মনিটরিং নেই। ব্যবসায়ীরা সুযোগ পেলেই ইচ্ছেমতো চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেলসহ নিত্যপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বাজারদর সামাল দিতে ব্যর্থ হয়ে সরকারের মন্ত্রীরা বিষয়টি ভাগ্যের ওপরে ছেড়ে দেন, তাদের অজুহাত—নতুন ফসল উঠলেই দাম কমে যাবে। রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।

কোনাপাড়া বাজারের খুচরা ব্যবসায়ী সমতা ট্রেডার্সের মালিক জাকির হোসেন জানান, প্রতিকেজি নাজিরশাইল চাল ৫৫ থেকে ৬০ টাকা, মিনিকেট ৫০ টাকা, ইরি জাতীয় আটাশ সামের মোটা চাল ৪০ টাকা কেজিদরে বিক্রি হচ্ছে, যা ৩-৪ দিন আগেও কেজিতে ৫ থেকে ৭ টাকা কম দামে বিক্রি হয়েছে। 

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, গত ৭ থেকে ৯ নভেম্বর এই তিন দিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে দেশের আবহাওয়া খারাপ ছিল। এ সময়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে উত্তরবঙ্গ থেকে চালের ট্রাক ঢাকায় আসেনি। এই সুযোগে রাজধানীর পাইকারি ব্যবসায়ীরা চালের দাম বাড়িয়েছে, যার প্রভাব পড়েছে সারাদেশে। এছাড়া, মোবাইল ফোনের কেরামতি তো রয়েছেই। কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বিভিন্ন ইস্যুতে সুযোগের সন্ধানে থাকেন। তারা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে ‘রাজধানীতে ট্রাক আসছে না, তাই চালের সরবরাহ কমে গেছে’ বলে বিভিন্ন বাজারে খুচরা ব্যবসায়ীদের দাম বাড়াতে  উৎসাহ দিয়েছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কোনাপাড়া বাজারের একজন খুচরা চাল বিক্রেতা এমন অভিযোগও করেন।

তিনি জানান, বাদামতলী-বাবুবাজারের আড়ত থেকে মোবাইলের মাধ্যমে একজন পাইকারি ব্যবসায়ী ৮ নভেম্বর বিকালে আমাদের জানিয়েছেন, প্রবল বৃষ্টি ও বাতাসের কারণে নাটোর ও নওগাঁ থেকে চালের ট্রাক আসছে না। তাই বাজারে চালের সরবরাহ কমে গেছে। ওই পাইকারি ব্যবসায়ী আরও বলেন, ‘এখন আমাদের দোকান থেকে চাল নিতে হলে প্রতিমণে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিতে হবে।’ কী আর করা, দোকান চালাতে হলে মাল লাগবে। তাই প্রতিমণ চালে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা বাড়িয়ে দিয়ে কয়েক ধরনের চাল এনে দোকান চালাচ্ছি। 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাদামতলী-বাবুবাজার চাল আড়তদার সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলহাজ নিজাম উদ্দিন বলেন, ‘মিলাররা নতুন করে চাল সরবরাহের অর্ডার নিচ্ছে না। আমরা পুরনো অর্ডারের চাল এনে বাজার চালাচ্ছি। নতুন অর্ডারের চাল পেলে দাম বাড়বে। কারণ, তারাই  দাম বাড়িয়ে চাচ্ছেন।’    

এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ অটো মেজর অ্যান্ড হাসকিং মিল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক লায়েক আলী বলেন, ‘ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের প্রভাবে ২/৩ দিন দেশের আবহাওয়া খারাপ ছিল। বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট  হওয়ার ভয়ে পাটের বস্তাভর্তি চালের ট্রাক আমরা রাজধানীতে পাঠাইনি, এটি ঠিক। কিন্তু, তাতে রাজধানীর বাজারে চালের সংকট হওয়ার কোনও প্রশ্নই ওঠে না। কারণ, রাজধানীর বাজারগুলোতে এমনিতেই ৮-১০ দিনের চাল অতিরিক্ত মজুত থাকে। সাধারণত পাইকারি ব্যবসায়ীরাই তাদের নিজেদের গুদামে এ ধরনের মজুত করেন, যেন বাজারে নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে।’

লায়েক আলী  আরও  বলেন, ‘সরবরাহ কম বা নেই—এমন অজুহাতে যারা চালের দাম বাড়িয়েছেন তারা কাজটি ভালো করেননি।’

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘সরকার চায় চালের দাম বাড়ুক। আগামী আমন মৌসুমে ২৬ টাকা কেজিদরে ধান কিনবে সরকার। আগে আমরা ১৫ টাকা কেজিতে ধান কিনেছি। সরকার ২৬ টাকা দরে ধান কিনবে বলে এখন আমাদের তা ২০ থেকে ২২ টাকা দরে কিনতে হচ্ছে। এ কারণেও চালের দাম বেড়ে থাকতে পারে।’ সরবরাহ কম থাকার অজুহাতে চালের দাম বাড়ানোর কোনও কারণ নেই বলেও জানান তিনি।

খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার জানান, দেশে পর্যাপ্ত চালের মজুত রয়েছে। কোথাও সরবরাহে ঘাটতি নেই। তিনি বলেন, ‘যে দুদিন দেশে প্রাকৃতিক দুর্যোগ ছিল, সেই দুদিন বাজারে খাদ্যপণ্য সরবরাহের বিষয়টি আমরা কড়াকড়িভাবে নজরদারিতে রেখেছিলাম। কাজেই সরবরাহের অপ্রতুলতার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আশা করছি, এ বছর ধানের বাড়তি উৎপাদন হবে। বাড়তি উৎপাদন নিয়ে এমনিতেই আমরা বিড়ম্বনায় রয়েছি। কাজেই দেশে চাল সংকটের কোনও সুযোগ নেই।’ 

বাজারে চালের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে জানতে চাইলে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন বলেন, ‘বাজারে খোঁজখবর নিয়ে পর্যালোচনা না করে এ বিষয়ে কিছু বলা ঠিক হবে না।’ 

সুত্র- বাংলা ট্রিবিউন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *