যে ৫ কারনে শীতে বেশী ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : চলতি শীত মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রূপালী ইলিশ। এ মৌসুমে স্থানীয় নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশী ইলিশ ধর পড়া এবং আকার বড় হওয়ায় বিস্মিত জেলে ও ইলিশের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা। এনিয়ে লোকমুখে নানা গুঞ্জন থাকলেও ইলিশ গবেষকরা বিষয়টি স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন। শীত মৌসুমে ইলিশ বেশী পাওয়ার পক্ষে অন্তত ৫টি যুক্তি দেখিয়েছেন ইলিশ বিশেষজ্ঞরা। তবে একটি যুক্তিতে অনঢ় সকলে। তা হচ্ছে- প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং জাটকা নিধন বন্ধ অধিক কার্যকরি হওয়ায় ইলিশ উৎপাদন বেড়েছে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামী শীত মৌসুমগুলোতেও এভাবে ইলিশ পাওয়া যাবে বলে আশাবাদী বিশেষজ্ঞরা।
ইলিশ নিয়ে গবেষণাকারী সরকারি একমাত্র প্রতিষ্ঠান হচ্ছে মৎস্য অধিদপ্তরের আওতাধীন “চাঁদপুর ইলিশ গবেষনা কেন্দ্র”। এ প্রতিষ্ঠানটি এবার একুশে পদক পেয়েছে। প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আনিছুর রহমান চলতি শীত মৌসুমে স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েকগুন বেশী ইলিশ পাওয়ার বিষয়টি এভাবে যুক্তি দেখিয়েছেন, ‘খেজুর গাছে রাখা হাড়ি ফোটা ফোটা রসে ভরে গিয়ে এক পর্যাযে উপচে রস পড়ে যায়। ২০০৫ সাল থেকে জাটকা নিধন এবং ২০০৭ সাল থেকে বিভিন্ন মেয়াদকালীন সময়ের জন্য ইলিশ নিধন বন্ধে আমাদের সাগর এখন ইলিশে পরিপূর্ন। সাগরে ইলিশ অধিক হয়ে যাওয়ায় সেগুলো নদীতে প্রবেশ করে জেলেদের জালে ধরা পড়ছে’।


তার বক্তব্য মতে, প্রতিবছর অক্টোবরে প্রজনন মৌসুমে ইলিশ ধরায় ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞা, মার্চ মাস থেকে দুইমাস ইলিশের ৫টি অভয়শ্রমে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা এবং ২০ মে থেকে টানা ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরার নিষেধাজ্ঞা এবং ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত আট মাস জাটকা (১০ ইঞ্চির কম সাইজের ইলিশ) নিধন বন্ধে কার্যকরের সুফল হিসাবে শীত মৌসুমে অভ্যন্তরীন নদ-নদীতে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশী ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। ইলিশের আকার প্রায় কেজি কিম্বা তার বেশী হওয়া প্রসঙ্গে এ বিশেষজ্ঞ বলেন, ইলিশ সারা বছর ডিম ছাড়লেও ৮০ ভাগ ইলিশ ডিম আশ্বিনের পূর্নিমায়। সে সময়ে (অক্টোবর মাস) ২২ দিনের নিষেধাজ্ঞার মা ইলিশ নিরাপদে ডিম ছাড়ে। এ মেয়াদ শেষ হওয়ার পরদিনই ১ নভেম্বর থেকে শুরু হয় জাটকা নিধনে ৮ মাসের নিষেধাজ্ঞা। জাটকা মাঝারী আকারে পরিনত হওয়ার মধ্যেই অভয়শ্রমগুলোতে ১ মার্চ থেকে দ্ইুমাস মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা শুরু হয়। আবার ২০ মে থেকে ৬৫ দিন সাগরে মাছ ধরায় নিষেধাজ্ঞা থাকে। এসব কারনে জাটকা ইলিশ একাধিকবার নদী থেকে সাগরে এবং সাগর থেকে নদীতে নিরাপদে আসাযাওয়ার সুযোগ পায়। ইলিশ যত বেশী ছুটোছুটি করবে, আকারে তত বড় হবে।
বাজারে বেশী পাওয়ায় দামও কমে গেছে। ফলে এবার শীত মৌসুমে দক্ষিণাঞ্চলের ঘরে ঘরে ইলিশ নিত্যদিনের খাবারে পরিনত হয়েছে। তবে সকলেরই একটি অভিযোগ, শীতে পাওয়া ইলিশে স্বাদ নেই, যেমনটি পাওয়া যায় মৌসুমের (জুলাই-আগষ্ট-সেপ্টেম্বর) ইলিশে। এ প্রসঙ্গে ইলিশ বিশেষজ্ঞ ড. আনিছুর রহমান বলেন, ইলিশের গতি ঘন্টায় ৩ কিলোমিটার। একদিনে তারা ৭২ থেকে ৭৪ কিলোমিটার সামনের দিকে ছুটতে পারে। এ গতিতে গভীর সাগর থেকে পদ্মা-মেঘনা কিম্বা তার আশপাশের নদীনদীতে পৌছতে একটি ইলিশের দুই-তিন সময় লেগে যায়। ফলে ক্লান্ত ইলিশের শারীরিক গঠনও চুপসে যায়। আবার সাগরের লোনা পানি থেকে নদীর মিঠা পানিতে পৌছে তার খাদ্যভাসেরও পরিবর্তন ঘটে। মিঠা পানিতে অন্তত ১৫ দিন থাকতে পারলে ইলিশের স্বাদের পরিবর্তন হয়। কিন্ত দূর্ভাগ্যজনকভাবে তার আগেই জেলেদের জালে ধরা পড়ে যায় ইলিশ। আবার অনেক ইলিশ নদীতে প্রবেশের সময় সাগরের মোহনাতেই ধরা পড়ে যাচ্ছে। এই ইলিশেই নোনা পানির সাগরের ইলিশের মতো স্বাদহীন হয়।
ঢাকা শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিসারিশ, একোয়াকালচার অ্যান্ড মেরিন সায়েন্স অনুষদের প্রভাষক মীর মোহাম্মদ আলী দীর্ঘ বছর ওয়াল্ড ফিশের গবেষক হিসাবে কাজ করেছেন। তিনি ড. আনিছুর রহমানের সকল যুক্তির সঙ্গে একমত পোষণ করে বলেন, সাগরে ইলিশ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে। তেমনি জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবেও ইলিশের গতি-প্রকৃতির কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। শীতে নদীতে ইলিশ বেশী পাওয়ার এটাও একটা কারন হতে পারে।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় কার্যালয় থেকে পাওয়া তথ্যমতে, এবছরের জানুয়ারীতে বিভাগের ৬ জেলার স্থানীয় নদ-নদীতে মোট ১৯ হাজার ৫৯১ মেট্রিক টন ইলিশ পাওয়া গেছে। এর আগে সর্বাধিক পরিমান ইলিশ পাওয়া গিয়েছিল ২০১৬ সালের জানুয়ারীতে ২০ হাজার ৩৪৭ মেট্রিক টন। এর মাঝের তিনবছর যথাক্রমে ২০১৭ সালের জানুয়ারীতে ১২ হাজার ২০ মেট্রিক টন, ২০১৮ সালের জানুয়ারীতে ৯ হাজার ৬৫৭ মেট্রিক টন এবং ২০১৯ সালের জানুয়ারীতে ১৭ হাজার ৬৯২ টন ইলিশ পাওয়া গেছে বরিশাল বিভাগে। মৎস্য অধিদপ্তরের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, সবচেয়ে বেশী ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে, বরিশাল, ভোলা ও পটুয়াখালীর নদী-নদীতে।##

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *