নাগরিক রিপোর্ট ॥ ‘কু ঝিকঝিক, কু ঝিকঝিক’ রেল গাড়ির এ শব্দ অচিরেই শোনা যাবে বরিশালে। এমন হাওয়াই বইছে এ অঞ্চলে। বরিশাল জেলায় বসছে এ জন্য দুটি স্টেশনও। রেল পথের জন্য ইতোমধ্যে শুরু হয়েছে ফিজিবিলিটি স্টাডি ও জমি অধিগ্রহন এর কার্যক্রম। ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মানের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। নগরীর কাশিপুরে বসতে যাওয়া স্টেশন এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে দেখা দিয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। এদিকে রেল লাইনের এ মহাযজ্ঞের খবরে দারুন খুশি বরিশালবাসী।
বৃহস্পতিবার সকালে নগরীর ২৮ নং ওয়ার্ডের ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক সংলগ্ন মন্টু মিয়ার ভাতের হোটেলে প্রবেশ করে শোনা যায় রেল নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা। তবে অধিকাংশেই কপাল খুলে যাওয়ায় ভীষণ খুশি। হোটেল মালিক মন্টু মিয়া বলেন, এই এলাকায় রেল স্টেশন হবে। ভুমি অধিগ্রহন হলে কয়েকগুন অর্থ পাওয়ার আশায় আছেন অনেকে। এলাকাবাসীও উন্নয়নের কথা ভেবে খুশি। ওই ওয়ার্ডের নবজাগরনী সড়কের চৌহুতপুর এলাকার চা এর দোকানে যেন আসর জমেছিল। কথা হয় সেখানকার বাসিন্দা মো: পাভেল এর সাথে। তিনি বলেন, তার ১০ শতাংস জমির উপর করা বাড়ি রেল স্টেশনের মধ্যে পড়েছে। পাশের চৌধুরী বাড়ির মাইনুল ইসলাম চৌধুরী জানান, তার দাদা বাড়ির একাংশ সরকার অধিগ্রহন করবে। সেখানকার চা দোকানীসহ একাধীক ব্যক্তি বলেন, রেল স্টেশন হওয়ায় তারা বেশ খুশি। এই এলাকা বেশ উন্নত হবে। এখনই নানা পরিকল্পনা শুরু করেছেন স্টেশন ঘিরে। এ নিয়ে হৈচৈ পড়ে গেছে গোটা এলাকায়।
রেল পথ নির্মানে ফিজিবিলিটি স্টাডি এর দায়িত্ব পাওয়া বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের ফিল্ড সুপারভাইজার মো: সারোয়ার জাহান পার্থ বলেন, দুটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত প্রাথমিক জরিপ করে যাচ্ছে। এ দুটি হচ্ছে ডিডিসি ও ডিএসসি। রেল লাইনের প্রস্থ হবে ৩২৮ফিট বা ১শ মিটার। ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত ২৭০ কিলোমিটার রেল লাইন নির্মান হবে। এজন্য বরিশালে দুটি স্টেশন হচ্ছে। নগরীর কাশিপুর ও বিমানবন্দর সংলগ্ন বাবুগঞ্জের দেহেরগতি এলাকায় এ স্টেশন হবে। তিনি বলেন, এর আওতায় ভাঙ্গা থেকে কুয়াকাটা পর্যন্ত জরিপ চলছে। ইতোমধ্যে ২৬শ ঘর এ মার্কিং করা হয়েছে যেগুলো উচ্ছেদ করতে হবে। তাদের জরিপের কাজও অনেকাংশে শেষ পর্যায়ে বলে জানান সুপারভাইজার সারোয়ার।
বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২৮ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো: জাহাঙ্গির হোসেন বলেন, বৃহস্পতিবার তার এলাকায় এসে একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা বাড়ি-ঘরে মার্কিং করে গেছে। রেল লাইনের একটি স্টেশন তার ওয়ার্ডের মধ্যে হচ্ছে। এজন্য বৃহস্পতিবার বাড়ি, গাছপালা মার্কিং করে গেছেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠান। তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানটি পরিসংখ্যান নিচ্ছে ওই এলাকায় কতটা স্থাপনা আছে। কাশিপুরের এক কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এ স্টেশন হচ্ছে। এর পরিধি হবে ৬৪০ ফিট। তিনি বলেন, এ ঘটনায় তার এলাকায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে। কিছু বুনিদি পরিবার আছে যারা বাড়িঘর হারানোর চিন্তায় হতাশ। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মোক্তার বাড়ি, চৌধুরী বাড়ি। অধিকাংশই খুশি। কেননা ক্ষতিপুরন পাবে কয়েকগুন। তবে জনগন চান এখানে রেল স্টেশন হোক।
এব্যপারে ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা রেল লাইন বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সচিব অধ্যক্ষ মহসিন উল ইসলাম হাবুল বলেন, তাদের দীর্ঘদিনের দাবী ঢাকা-বরিশাল-কুয়াকাটা পর্যন্ত রেল লাইন। নগরীতে স্টেশন এর উদ্যোগ ও ফিজিবিলিটি স্টাডি শুরু হওয়া নি:সন্দেহে সুখবর। এজন্য যেকোন ত্যাগ স্বীকার করতে বরিশালবাসী প্রস্তুত রয়েছে।
২০১৯-০৮-০৪