আমি সাংবাদিকের স্ত্রী বন্ধু বোন শিক্ষক

Spread the love

দেশের এই কঠিন সময়ে নিশ্চিতভাবেই ডাক্তাররা প্রথম সারির যোদ্ধা। কোন সন্দেহ নাই তাতে। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে, খেয়ে না খেয়ে, প্রপার ইকুইপমেন্ট ছাড়াই অনেক ডাক্তার অনেক হাসপাতালে করোনা রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছেন। অনেকে ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন, একজন ডাক্তারতো মারাই গেলেন। তাদের সবার প্রতি আমার, আমাদের শ্রদ্ধা, সম্মান আর অফুরান ভালোবাসা। we are proud of them.

আমরা পুলিশ, সেনা সদস্যদেরকেও স্যালুট জানাই। পরিবার, পরিজন ছেড়ে আমাদের ঘরে রাখতে, সবকিছু ঠিকঠাক মনিটরিং এর মাধ্যমে ম্যানেজ করার জন্য তারাও দিনরাত পরিশ্রম করছেন। তাদের অবদান আমরা যতোদিন বাঁচবো স্মরন করবো। প্রশাসনের অন্যান্য মাঠ কর্মী যারা জেলা উপজেলায় কাজ করছেন তাদের প্রতিও আমার ব্যক্তিগত শ্রদ্ধা ও সাধুবাদ রইলো। এখনও অব্দি যতোটুকু ঠিকঠাক আছে সেটা তাদের বদৌলতেই।

পুলিশ-সেনাবাহিনী কোথায় কী কাজ করছেন, কজন দেশে বা দেশের বাইরে করোনায় আক্রান্ত হলেন, কজন মারা গেলেন, কজনই বা সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন; কোন হাসপাতালে কী অনিয়ম হচ্ছে বা কী কী ইকুইপমেন্ট এর ঘাটতি আছে কিংবা কোথায় ত্রান বিতরনে অনিয়ম হচ্ছ; কোথায় কোন স্টেশনে ১৯ দিন ধরে বাড়ি যেতে না পেরে একজন আটকে আছেন; কোন এলাকার করোনা পরিস্থিতি কেমন; বাজারে পণ্য সরবরাহ কেমন – এই সমস্ত তথ্য আমাদেরকে রোজ যারা দিচ্ছেন সরাসরি স্পট বা নিউজরুম থেকে কিংবা পত্রিকা মারফত তারা হোলেন আমাদের সাংবাদিক ভাই-বোনেরা- যাদের নাম এই সময়ে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত কিন্তু সবচেয়ে বেশি অবহেলিতও।

প্রথম সারির যোদ্ধা হিসেবে ডাক্তার পুলিশ আছেন অথচ সেই তাদের অভাব অভিযোগ আর সমস্যার কথা যে সাংবাদিকগণ রোজ তুলে ধরছেন তাদের নিয়ে কারোই কোন উচ্চবাচ্য নেই। সাংবাদিকরা মানুষ না? তাদের জীবনের ঝুঁকি নেই? তাদের বডি কি লোহা দিয়ে তৈরি? তাদের করোনা ধরেনা? নাকি করোনার সাথে সাংবাদিকদের দোস্তি আছে? করোনা কী সাংবাদিকদের ভিডিও কলে এসে বলেছে যে দোস্তরা তোমরা বিন্দাস কাজ করো তোমাদের আক্রমণ করবোনা?!!

আমার স্বামী সাংবাদিক। আগে সপ্তাহে একটা দিন অন্তত চাইলে ছুটি নিতে পারতেন। এখন ওনাকে সাত দিনই অফিস করতে হয়। ওনার সব প্রতিবেদক বাসায় বসে কাজ করেন। ওনাকে সব সমন্বয় করে পাতা বের করার জন্য অফিস যেতে হয়। উনি সতর্ক থাকেন, নিরাপদ থাকার চেষ্টা করেন ১০০ভাগ। কিন্তু ঝুঁকি থেকেই যায়। বাইরেতো যেতেই হচ্ছে। উনি রোজ যাবার সময় আমি দরজা ধরে দাঁড়িয়ে থাকি আর আল্লাহকে বলি আল্লাহ ওনাকে তুমি নিরাপদে বাসায় ফিরিয়ে এনো। 

আমি জানি সব সাংবাদিকের স্ত্রীদের আমার মতোই অবস্থা। আমার সাংবাদিক আপা বা বান্ধবীদের স্বামীদেরও আমার মতোই অবস্থা। একই অবস্থা আমার সাংবাদিক বন্ধু এবং সাংবাদিক বড়ো ভাইয়ের স্ত্রীদেরও। আমার অনেক ছাত্রছাত্রী সাংবাদিক। তাদের জন্য প্রাণ ভরে দোয়া করি রোজ তারা যাতে নিরাপদে থাকে। তাদের সবারও এই ঘোর সংকটে কঠিন অবস্থা। একজন সাংবাদিক যার রোজগারে একটা সংসার চলে আল্লাহ না করুন যদি তিনি মারা যান তার পরিবার কে দেখবে? অনেক সাংবাদিক করোনায় ইতোমধ্যে আক্রান্ত। তাদের পরিবারের দায়িত্ব কে নেবে বা কে নিচ্ছে?

অনেক পত্রিকা ইতোমধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে, অনেক পত্রিকা বন্ধের পথে!! অনেক চ্যানেলের নিউজরুম বন্ধ হয়ে গেছে। অনেক হাউজে ছাটাইও চলছে। অনেক হাউজে এখনও বেতন হয়নি, অনেক হাউজ হাফ বেতন দিয়েছ। সাংবাদিকরা এই মুহুর্তে পেশাগত দিক থেকে আছেন সবচেয়ে ঝুঁকির মধ্যে। কারণ হাউজ বন্ধ হয়ে যাওয়া মানেই বেতন বন্ধ। অনেক সাংবাদিকদের বাড়িওয়ালারা বাড়ি ছাড়ার নোটিশ দিচ্ছেন – কেনো?সাংবাদিকদের সংসার, বউ বাচ্চা, মা বাবা, ভাইবোন নাই? তাদের দুঃখ-কষ্ট, অভাব অভিযোগ নাই? তাদের জীবন নেই? তাদের প্রেম – প্রিয়জন থাকতে নেই? তাদের প্রতি আমাদের কেনো এতো অবহেলা?

সংবাদের সঠিক প্রবাহ পুরো সিস্টেমকে ঠিক রাখে। তাই যারা সংবাদ নিয়ে কাজ করেন, সংবাদ আমাদের ঘরের ড্রয়িংরুমে পৌঁছে দেন, যাদের দেয়া সংবাদ দেখার বা পড়ার জন্য রোজ আমাদের চোখ টিভির পর্দা বা পত্রিকার পাতায় আঁটকে থাকে সেই সাংবাদিকদের বাঁচান।

কামরুন নাহার

সহকারী অধ্যাপক

বাংলাদেশ প্রেস ইনস্টিটিউট। 

সুত্র- সংগৃহীত

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *