৪০ বছর শক্তি ধারন করে ভয়াবহ করোনাআজকের

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : বিশ্বজুড়ে চলমান করোনা মহামারীতে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। গতকাল সোমবার পর্যন্ত গোটা বিশ্বে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখ ২৮ হাজার এবং মৃতের সংখ্যা ১ লাখ ৬৬ হাজার ছাড়িয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) তথ্য অনুযায়ী, গত বছরের ডিসেম্বরের শেষ দিকে চীনের হুবেই প্রদেমের উহানে প্রথম নোভেল করোনা ভাইরাসে (সার্স-কভ-২) আক্রান্ত রোগীর সন্ধান মেলে। এর পর ধীরে ধীরে তা গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে এখন মহামারীর রূপ নিয়েছে।

তবে নোভেল করোনা ভাইরাস রাতারাতি এত ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠেনি; বরং বাদুড় বা বনরুই জাতীয় প্রাণী থেকে ছড়িয়ে প্রাথমিক অবস্থায় এই ভাইরাস অন্তত ৪০ বছর ধরে শক্তি বৃদ্ধি করেছে। এর পরই এটি অর্জন করেছে মানুষ থেকে মানুষের সংক্রামিত হওয়ার শক্তি, যার ফল এখন ভোগ করতে হচ্ছে গোটা বিশ্বকে।

অধিকাংশ বিজ্ঞানীর ধারণা, নোভেল করোনা ভাইরাস এসেছে বাদুড় থেকেই। আবার অনেকের মত, শুধু বাদুড় নয়, বনরুইও এই ভাইরাসের অন্যতম বাহক। কারণ বাদুড় ও বনরুইয়ের শরীরে এমন ভাইরাল জিন মিলেছে, যার সঙ্গে সার্স-কভ-২ এর সাদৃশ্য রয়েছে। তার পরও এই দুই প্রাণীই যে করোনার বাহক তা নিশ্চিত নয়। কারণ বাদুড়ের শরীরে যে ভাইরাসের খোঁজ মিলেছে অর্থাৎ ব্যাট-কভ, তার থেকে সার্স-কভ-২ অনেকটাই আলাদা ও আরও বেশি সংক্রামক। সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে, এক মানুষ থেকে অন্য মানুষে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার ঘটনা খুব সহজ নয়। বিজ্ঞানীদের ধারণা, মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে অন্তত ৪০ বছর সময় লেগেছে ভাইরাসটির।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, প্রত্যেক ভাইরাসেরই একটা স্বাভাবিক উৎস বা রিজার্ভার থাকে। সেটা যে কোনো প্রাণী হতে পারে। এবার সেই প্রাণীর শরীর থেকে মানুষের সংস্পর্শে আসা এবং মানুষের শরীরে নতুন বাহক কোষ খুঁজে পাওয়া অত্যন্ত জটিল প্রক্রিয়া। সেটা সব ভাইরাসের ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। মানুষের শরীরে যদি ভাইরাস ঢুকেও পড়ে, তা হলেও ক্রমাগত এক শরীর থেকে অন্য শরীরে ট্রান্সমিশন এত দ্রুত সম্ভব নয়। সাধারণত দেখা যায় ভাইরাস তার অরিজিন বা বাহককে সংক্রামিত করে না। বাদুড়ের থেকে ভাইরাস যখন মানুষের শরীরের সংস্পর্শে আসবে, সে তখন চেষ্টা করবে নতুন বাহক কোষ খুঁজে বের করার। মানুষের দেহকোষের প্রোটিন যদি ভাইরাসের পছন্দ হয়, তা হলে ভাইরাল প্রোটিন তার সঙ্গে জোট বেঁধে কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। এটা হলো এক প্রজাতি থেকে অন্য প্রজাতিতে ভাইরাসের ছড়ানোর প্রথম ধাপ।

এবার আসা যাক মানুষ থেকে মানুষের ছড়ানোতে। তারও কয়েকটা পর্যায় আছে। প্রথমত, মানুষের শরীরে একবার ঢুকে পড়তে পারলে ভাইরাস চেষ্টা করে গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলোকে কব্জায় আনতে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের শরীরের সব অঙ্গকে কিন্তু ভাইরাস কব্জা করতে পারে না। কারণ সব দেহকোষে সে তার পছন্দের বাহক প্রোটিন খুঁজে পায় না। তাই দেখা যায়, কোনো ভাইরাস হয়তো ফুসফুসকে আক্রান্ত করে, আবার কোনো ভাইরাস কিডনি বা হৃদযন্ত্রকে সংক্রমিত করে।

দ্বিতীয়ত, যে অঙ্গকে ভাইরাস তার নিশানা বানায় সেখানে সে তার প্রতিলিপি তৈরি করতে থাকে। অর্থাৎ সংখ্যায় বাড়তে থাকে। এবার তার কাজ হয় নতুন বাহক কোষ খুঁজে বের করা। এর জন্য এক মানুষের শরীর থেকে অন্য মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার চেষ্টা করে। তবে তারও একটা নির্দিষ্ট সময় ও পদ্ধতি আছে। ভাইরাস যদি নিজেকে বদলাতে না পারে তা হলে একটা সময়ের পরে এই সংক্রমণ থেমে যায়। ভাইরাসটি প্রতিলিপি তৈরির ক্ষমতাও হারিয়ে ফেলে। ফলে দেখা যায় একটা পর্যায়ে গিয়ে সংক্রমণ থেমে গেছে। যেমন বার্ড ফ্লুর ক্ষেত্রে হয়েছিল।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, এটা সাধারণ ভাইরাসের চরিত্র। কিন্তু নোভেল করোনা ভাইরাস সাধারণ নয়, এটি নিজেকে সময়ের সঙ্গে বদলে নিয়েছে। অর্থাৎ নতুন নতুন বাহক খুঁজে বের করার জন্য ভাইরাসটি জিনের গঠন বদলে ফেলছে খুব তাড়াতাড়ি। এটা শুরু হয়েছে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের (এইচ৫এন১) সংক্রমণের সময় থেকেই। এই ভাইরাসের ৮টি জিনোম খুঁজে পাওয়া গিয়েছিল। দেখা গিয়েছিল, এই জিনোমগুলো নিজেদের মধ্যে একটা বন্ধন তৈরি করে ফেলছে। দুটি জিন মিলেমিশে গিয়ে নতুন ভাইরাল জিন তৈরি করছে। নতুন তৈরি হওয়া এই ভাইরাল জিন অনেক বেশি শক্তিশালী ও সংক্রামক। তার সংক্রমণের ক্ষমতাও অনেক বেশি।

বিজ্ঞানীরা বলছেন, মানুষের জীবনযাত্রার পরিবর্তন, বন্যপ্রাণীদের আরও কাছাকাছি চলে আসা, জঙ্গল ধ্বংস করে নগরসভ্যতার বিকাশ, খাদ্যাভ্যাসে বদলসহ নানা কারণ রয়েছে সংক্রামক ভাইরাসদের মানুষের আরও কাছাকাছি চলে আসার। সচেতনতার অভাব ও অসংযমী জীবনযাত্রাই এই মহামারীর অন্যতম বড় কারণ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *