আমীন আল রশীদ: ‘জেনুইন বরিশাইল্যা’ বলে কোনো শব্দ থাকলে, সেই শব্দ যার নামের সঙ্গে যায়, তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রখ্যাত অধ্যাপক, লেখক, রসিক তপনরায় চৌধুরী। কত রসালো কায়দায় ইতিহাস আর নিজের ভাষা ও সংস্কৃতি তুলে ধরা যায়, তার জ্বলন্ত উদাহরণ মি. চৌধুরীর ‘বাঙালনামা’ এবং ‘রোমন্থন অথবা ভীমরতিপ্রাপ্তর পরচরিতচর্চা’ বই দুটি।
যারা এ বই দুটি পড়েননি, তারা ভাবতেও পারবেন না, কী অমৃত আপনি মিস করে বসে আছেন। আমার ধারণা এ বই দুটি অনলাইনেও কিনতে পাওয়া যায়। উল্লেখ্য, তপন রায়চৌধুরী যখন বরিশালের বাসিন্দা এবং বরিশাল জিলা স্কুলের ছাত্র, তখন সেখানে ব্রজমোহন কলেজের অধ্যাপক, আরেক প্রখ্যাত বরিশাইল্যা এবং ‘চন্দ্রদ্বীপপুত্র’ জীবনানন্দ দাশ–যিনি কলেজে ‘প্রফেসর জেএনডি’ নামেও অনেকের কাছে পরিচিত ছিলেন।
তো মি. জেএনডির সাথে চৌধুরী সাহেবের সরাসরি দেখাসাক্ষাৎ বা আলাপচারিতার প্রমাণ পাওয়া না গেলেও ‘বাঙালনামা’ বইয়ের ৮৪ পৃষ্ঠায় তিনি লিখেছেন: শুধু একটি মানুষের মূল্য বরিশালবাসী তাঁর জীবৎকালে বুঝতে পারেনি। মানুষটির নাম জীবনানন্দ দাশ। ওঁর কবিতার সমঝদার বরিশাল শহরে বেশি কেউ ছিল না। বরং ‘শনিবারের চিঠি’র প্রতিধ্বনি করে ঠাট্টা-বিদ্রুপই বেশি শোনা যেত। মানুষটি নিতান্তই সঙ্গীহীন ছিলেন।
রূপহীন কবির চলাফেরাও ছিল গ্রাম্যতা-দোষে দুষ্ট। উনি একা একা নদীর পাড়ে হাঁটতে যেতেন। তাঁর পেছন পেছন কিছু বখাটে ছেলে ওঁকে ভেঙিয়ে ভেঙিয়ে হাঁটত। কলেজেও উনি একা বসে থাকতেন, কারও সঙ্গে বিশেষ কথা বলতে দেখা যেত না। ওঁর স্ত্রী রাজনৈতিক কাজে বিশেষভাবে জড়িত ছিলেন। তাঁকে যেদিন পুলিশে গ্রেপ্তার করে সেদিন কবি হাউমাউ করে কেঁদেছিলেন। এ নিয়ে হাসাহাসির অন্ত ছিল না। ‘বনলতা সেন’-এর কবির ব্যক্তিগত জীবনের গভীর ট্র্যাজেডি ওঁর মৃত্যু পরে প্রকাশিত গদ্যরচনায় ফুটে উঠেছে। ওঁর কবিতা বুঝতে পারতাম না। কিন্তু মানুষটার জন্য কষ্ট হত।’
এত কথা লেখার কারণ, পরশু তপন রায়চৌধুরীর জন্মদিন ছিল। তাঁর জন্ম হয়েছিল ১৯২৬ সালের ৮ মে, আর মৃত্যু ২৬ নভেম্বর ২০১৪। ২০০৯ সালে তিনি বাংলাদেশে এসেছিলেন। ওই সময় প্রথম আলো অফিসেও গিয়েছিলেন। আমি তখন প্রথম আলোর সিস্টার কনসার্ন এবিসি রেডিওতে কাজ করি। পাশাপাশি ভবন। অথচ এরকম একজন মানুষ পাশের ভবনে এসে চলে গেলেন, সে কথা জানতে পারি পত্রিকায় সংবাদ দেখে। এ নিয়ে দীর্ঘদিন মনকষ্টে ভুগেছি। যাই হোক, শুভ জন্মদিন জ্যাঠা।…দুদিন পরে উইশ করায় মাইন্ড কইরেন না।