বাউফলে তাপস হত্যা মামলার আসামী-স্বাক্ষী সকলে আ’লীগের নেতাকর্মী

Spread the love

নাগরিক রিপোর্ট : পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলায় আওয়ামীলীগের দুই গ্রুপের সংঘর্ষে নিহত যুবলীগ কর্মী তাপস দাস হত্যাকারীদের বিচারের দাবীতে বৃহস্পতিবার দুপুরে বাউফল থানার সামনে মানববন্ধন করেছে উপজেলা হিন্দু-বৌদ্ধ খৃষ্টান ঐক্য পরিষদ। নিহত তাপস স্থানীয় সংসদ সদস্য সাবেক চিফ হুইপ আ.স.ম ফিরোজের সমর্থক। অপরদিকে হত্যা মামলার প্রধান আসামী হলেন- পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক বাউফল পৌরসভার মেয়র জিয়াউল হক জুয়েল। মামলার এজাহারভূক্ত অপর ৩৪ জনের মধ্যে ৩৩ জন জুয়েল সমর্থক এবং উপজেলা আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী। রাজনৈতিক কর্মীর বাইরে একমাত্র আসামী করা হয়েছে দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকার উপজেলা প্রতিনিধি এবিএম মিজানুর রহমানকে।
ঈদের আগের দিন রোববার দুপুরে বাউফল পৌর শহরে জেলা পরিষদ রেষ্ট হাউজের সামনে এমপি আ.স.ম ফিরোজ ও পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আহত তাপস রোববার রাতে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যুবরন করেন। তিনি কালাইয়া গ্রােেমর বিধু দাসের ছেলে। এ ঘটনায় তাপসের বড় ভাই পংকজ দাস বাদী হয়ে মেয়র জুয়েলসহ ৩৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেছেন।
বাউফল থানার অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, এজাহারভূক্ত আসামী যুবলীগ সদস্য মো. সোহাগ ও পৌর যুবলীগের সদস্য কার্তিক সাহাকে ঘটনার রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্যদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্থানীয় সুত্রগুলো জানিয়েছে, হত্যা মামলা দায়েরের পর পরই মেয়র জুয়েলসহ তার অনুসারীরা আত্মগোপন করায় বাউফল পৌর শহর পুরোপুরি এমপি আ.স.ম ফিরোজের সমর্থকদের নিয়ন্ত্রনে। তবে সাধারন মানুষের মধ্যে আতংক বিরাজ করছে।
হত্যা মামলার এজাহারে দেখা গেছে, মামলার আসামী ও স্বাক্ষীরা সকলে আওয়ামীলীগ ও অঙ্গ সংগঠনের বিভিন্ন পদ-পদবীতে রয়েছেন। প্রধান আসামী জুয়েল ছাড়া অপররা হলেন- উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ সাইদুর রহমান হাসান মৃধা, সাধারন সম্পাদক মাহমুদ রাহাদ জামসেদ, যুগ্ন সাধারন সম্পাদক মো. মাহতব উদ্দিন ও তোয়েল, পৌর ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মো. আরিফ খান ও ইকবাল হেসেন চৌকিদার, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান, দফতর সম্পাদক মেহেদি হাসান হৃদয়, যুগ্ন সম্পাদক মো. রেজা, সহ সম্পাদক রাববী ও তৌকি, প্রচার সম্পাদক সজল, সদস্য ইমন, মো. সোহেল, জামির, নাইম, শান্ত, বাউফল সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ইউসুফ, সাধারন সম্পাদক শুভ, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহমুদ হাসান ও রুদ্র, যুবলীগ সদস্য মোঃ ইব্রাহিম ও মোঃ সোহাগ, কালাইয়া ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি রমিজ উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক কোষাধ্যক্ষ ও দাশপাড়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান এ.এন.এন জাহাঙ্গীর হোসেন, পৌর যুবলীগ সদস্য রিয়াজ গোলদার, কার্তিক সাহা, নওমালা আবদুর রশিদ খান ডিগ্রী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ বেল্লাল, নওমালা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সহ সভাপতি মোঃ আরিফ এবং দাশপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক আরিফ।
মামলায় ২০ নম্বর আসামী করা হয়েছে এবএিম মিজানুর রহমানকে । তিনি হলেন প্রথম আলোর বাউফল প্রতিনিধি ও বাউফল প্রেসক্লাবের নির্বাহী সদস্য।
মিজান বলেন, রোববার দুপক্ষের সংঘর্ষ চলাকালে অন্যন্য সংবাদকর্মীদের সঙ্গে ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারন করেন। তার দাবী, স্থানীয় সাংসদ আ.স.ম ফিরোজের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশ করায় এর আগে তার বিরুদ্ধে গণধর্ষন ৬টি মামলা দায়ের হয়েছিল। সবকটি মামলা আদালতে মিথ্যা প্রমানিত হয়েছে। দুই বছর আগে তাকে গ্রেফতার করে থানায় অনুমানিষক নির্যাতনও করা হয়েছিল।
হত্যা মামলার স্বাক্ষীরা সকলে এমপি আ.স.ম ফিরোজের অনুসারী। তারা হলেন- এমপির ভাতিজা কালাইয়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান এসএম ফয়সাল হোসেন মনির মোল্লা, উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব হাওলদার, যুবলীগ নেতা ইয়ার খান ও ইমাম হোসেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ন সাধারন সম্পাদক নাজিরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ ইব্রাহিম ফারুক, উপজেলা যুবলীগ সভাপতি মোঃ শাহজাহান সিরাজ, সাংগঠনিক সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, পৌর আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক এনায়েত খান সানা, পৌর যুবলীগের সাধারন সম্পাদক মামুন খান, দাশপাড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ সভাপতি আতিকুর রহমান মোহন, উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মাহামুদুল হাসান রুবেল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সাধারন সম্পাদক সামসুল কবির নিশাত, উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোঃ হারুন খান।
রোববার দুপক্ষের সংঘর্ষের ব্যাপারে পৌর মেয়র ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ জিয়াউল হক জুয়েল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা সংবলিত করোনাভাইরাস সংক্রমণরোধে তোরণ নির্মাণ করা হচ্ছিল জেলা পরিষদের সামনে। শহরের পরিবেশ অশান্ত করতেই নাজিরপুর ইউপি চেয়ারম্যান ইব্রাহিম ফারুকের নেতৃত্বে বহিরাগত সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়েছে।
মঙ্গলবার পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের পক্ষে সাংবাদিক সম্মেলন করে পৌর আওয়ামীলীগের একাংশের সভাপতি ও পৌর কাউন্সিলর আব্দুল লতিফ খান বাবুল বলেন, ‘আমরাও তাপস হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্ত এবং ঘাতকদের শাস্তির দাবী জানাচ্ছি। কিন্ত একটি মহল তাপস হত্যাকান্ডকে নিয়ে ঘোলাপানিতে মাছ শিকারের অপচেষ্টায় লিপ্ত। তাপস হত্যার ঘটনায় রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে দমন করতে মিথ্যা মামলা করা হয়েছে’।
উল্লেখ্য, আধিপত্য বিস্তার নিয়ে বাউফল উপজেলা আওয়ামীলীগ এমপি আ.স.ম ফিরোজ ও পৌর মেয়র জিয়াউল হক জুয়েলের নেতৃত্বে দীর্ঘদিন যাবত দুইভাগেবভক্ত। উপজেলার প্রতিটি ইউনিয়ন এমনকি ওয়ার্ড পর্যন্ত এ দুই গ্রুপের অস্তিত্ব বিদ্যমান। বিভিন্ন সময়ে দুইপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে এ পর্যন্ত কয়েকজনের প্রাণহানি হয়েছে।###

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *