সৈয়দ জুয়েলঃ আবারও বুড়িগঙ্গায় তলিয়ে গেল অনেকগুলো স্বপ্ন। প্রায় একশো জনের মত যাত্রী নিয়ে মুন্সিগঞ্জ থেকে ছেড়ে আসা মর্নিং বার্ডকে ময়ূর-২র ধাক্কায় কয়েক সেকেন্ডেই তলিয়ে দিল নদীর তলদেশে। কিছু লোক বেঁচে গেলেও অধিকেরই সলিল সমাধি হলো। উদ্ধার অভিযান এখনো চলছে,এখন পর্যন্ত ৩৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে।নিখোঁজ রয়েছে আরো অনেক। মুন্সিগঞ্জ থেকে ঢাকা সদরঘাটে যে লঞ্চগুলো আসে এর অধিকাংশই ছোট আকৃতির,এই রুটে বড় লঞ্চের আসা যাওয়ার সময় প্রায়শই এরকম দূর্ঘটনা ঘটে। মৃত্যুও হয়ে থাকে অনেক।
প্রতিটি দূর্ঘটনার পরপরই একটি তদন্ত কমিটি দ্রুতই হয়। এত দ্রুত তদন্ত কমিটি আর কোন দেশে হয় কি না আমার জানা নেই। তবে তদন্ত কমিটির রিপোর্ট, তার বিপরীতে মামলার রায় ও এর কার্যকরে আমাদের কচ্ছপ গতি সর্বজনবিদিত। স্বাধীনতার এত বছর পরেও আমাদের সরকারগুলো নৌ,সড়ক পথ জনগনের জন্য নিরাপদ করতে পারেনি। ফিটনেসবিহীন আর অদক্ষ ড্রাইভার দিয়ে সড়ক আর নদীপথে অকাল মৃত্যুর দায়ভার কার? এগুলো যাদের দেখার কথা,টাকা পকেটে পুরে যে সব নীতি নির্ধারকরা ফিটনেসবিহীন থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট দেন,অথবা অদক্ষ চালকের নামের উপর দক্ষ চালকের তকমা লাগান,দায়ভার অনেকটাই তাদের উপর বর্তায়।
ঝড় যখন আসবে,তখন এসব নীতি নির্ধারকরাও বাঁচতে পারবেন বলে মনে হয়না। করোনাই তার বড় প্রমান। স্বাস্থ্য খাতের যে বেহাল অবস্থা,এখন দেশেই বাধ্য হয়েই চিকিৎসা নিতে হয় তথাকথিত উপর তলার মানুষদের। আজ অবৈধ অথবা বৈধ পথে যারা নিজের আখের ঘুচিয়েছেন,তারাও ইচ্ছে করলে সিঙ্গাপুর অথবা বিলেতে এসে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেননা। মুন্সিগঞ্জ থেকে যে স্বপ্নগুলো মর্নিং বার্ডে উঠেছিলো,তার সমাধি হয়তো সদর ঘাটের কাছে শ্যামবাজারেই এসে শেষ হলো,কিন্তু এর দীর্ঘশ্বাস পরে রইবে রাস্ট্রের প্রতিটি অলিগলিতে। যে শিশুটি মৃত্যুর আগে শেষ আশ্রয়স্থল বাবা,মার হাত ধরে বাঁচার আপ্রান চেস্টা করেছিলো,যে নব বিবাহিতা নারী তার স্বামীর হাতটি শক্ত করে চেপে ধরেছিলো জীবন সাজাতে,আজ নিয়মহীন নৌপথের সন্ত্রাসের কাছে পরাজয়ে তাদের দোষ কি? প্রভাবশালী লঞ্চ মালিকদের দাপটে আর কিছুদিন পর নতুন কোন ঘটনায় হয়তো অতীতের মত ধামাচাপা পরে যাবে এ ঘটনাটিও।
কিন্তু যে পরিবারগুলো হারালো তাদের প্রিয়জনদের, তাদের করুন চোখের জলে শূন্যতার যে ক্ষত সৃস্টি হয়েছে, তা কি আর শুকাবে! এ পৃথিবীতে তো তাদেরও বাঁচার অধিকার ছিল,জীবন দেয়ার ক্ষমতা যখন আমাদের হাতে নেই,মৃতের রাস্তা সহজে আমাদের সহায়তা করারও অধিকার নেই।
যে স্বপ্নগুলোর অকাল মৃত্যু হলো,সে স্বপ্নগুলো ছূঁয়ে দেখা যায়না সত্য- কিন্তু অনুভব করা যায় জাগ্রত বিবেক দিয়ে। কর্তা ব্যাক্তিদের বিবেককে যত দ্রুত জাগ্রত করবে,তত দ্রুতই সাধারনের মঙ্গল হবে। আমরা এক জাগ্রত বিবেক দেখার অপেক্ষায়।
২০২০-০৬-৩০