সব সঞ্চয় হারিয়ে নিজের ফ্লাট বিক্রি করেছিলেন এন্ড্রু কিশোর

Spread the love

নাগরিক ডেস্ক : বাংলা গানের বরপুত্র এন্ড্রু কিশোরের জীবনের শেষ দিনগুলো সুখকর ছিলো না। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে জীবনের সব সঞ্চয় যখন ফুরিয়ে গেছে, তখন এন্ড্রু কিশোরকে হারাতে হয় নীড়ের ঠিকানাও।

সুস্থ হয়ে গানের ভুবনে ফেরার আশায় রাজশাহীতে নিজের ফ্ল্যাট বিক্রি করেছিলেন বাংলা গানের প্লে-ব্যাক সম্রাট। সহকর্মী-পরিচিতজনদের থেকে আড়ালে অনেকটা নিঃসঙ্গ জীবনযাপন করছিলেন। পরিবারের সদস্য ছাড়া তেমন কারও সঙ্গে যোগাযোগও করতেন না।
রাজশাহী মহানগরীর পদ্মা আবাসিক এলাকায় ১ নম্বর সড়কের ৩২৬ নম্বর ভবনে মারস্যুপিয়াম অ্যাপার্টমেন্টের পূর্বাংশে দ্বিতীয় তলার ফ্ল্যাটটিই ছিল এন্ড্রু কিশোরের। ক্যান্সারের চিকিৎসায় প্রায় ৩ কোটি টাকা দরকার ছিল। জীবনের সব সঞ্চয় হারিয়ে শেষ পর্যন্ত চিকিৎসার খরচ যোগাতে নিজের শহর রাজশাহীতে কেনা সেই বাড়িটিও গত বছরের অক্টোবরে বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।

এন্ড্রু কিশোরের ঘনিষ্ঠজনরা বলছেন, চিকিৎসার জন্য কারো কাছে হাত পাততে চাননি তিনি। নিজের জমানো টাকা দিয়ে চিকিৎসা শুরু করেছিলেন। কিন্তু কুলিয়ে উঠতে না পেরে নিজের শখের ফ্ল্যাটটিও বিক্রি করে দেন। বাড়ি বিক্রি করে চিকিৎসার জন্য ৩০ লাখ টাকার মতো সংস্থান হয়। এরই মধ্যে এন্ড্রু কিশোরের চিকিৎসার জন্য তার পরিবার খরচ করে এক কোটি টাকারও বেশি।

এন্ড্রু কিশোরের বাল্যকালের বন্ধু অধ্যাপক ড. দীপকেন্দ্র নাথ গণমাধ্যমকে বলেন, ‘চিকিৎসার জন্য কারো কাছে হাত পাততে চায়নি সে। চিকিৎসায় প্রচুর টাকা খরচ হচ্ছিলো। এক পর্যায়ে যখন আর কিছু নেই, তখন বাড়ি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। আমরা ভাবলাম, সে যদি সুস্থ হয়ে আবার গান গাইতে পারে তাহলে আবার হয়তো একটি বাড়ি করতে পারবে। ফলে আমরা বাড়ি বিক্রির ব্যবস্থা করি।’

ড. দীপকেন্দ্র নাথ আরও বলেন, ‘অজানা অভিমানে জীবনের শেষ সময়গুলো সে কিছুটা আড়ালেই ছিলো। কারণ এন্ড্রু কিশোরের ভাবনায় ছিলো, আমি তো চলেই যাবো। বন্ধু-আত্মীয়স্বজনরা কষ্ট পাবে। অন্যদের কষ্ট দিয়ে কি লাভ। তাই বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিলেন কিংবদন্তি এন্ড্রু কিশোর।

আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারপ্রাপ্ত কিংবদন্তি শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের প্রায় নয় মাস চিকিৎসা চলে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালে। অসুস্থ অবস্থায় গত বছরের ৯ সেপ্টেম্বর দেশ ছেড়েছিলেন তিনি। সেখানে ভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর গত ১৮ সেপ্টেম্বর তার শরীরে ক্যান্সার ধরা পড়ে।

এর পর গত ১১ জুন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে দেশে ফেরেন। কিছুদিন রাজধানীর মিরপুরের ফ্ল্যাটে থাকার পর গত ২০ জুন রাজশাহী চলে আসেন। এরপর থেকে মহানগরের মহিষ বাথান এলাকায় বড় বোন ডা. শিখা বিশ্বাসের বাড়িতে ছিলেন। ওই বাড়ির একটি অংশে রয়েছে ক্লিনিক। সেখানেই জীবনের শেষ সময় পর্যন্ত সেবা সুশ্রুষা চলছিল তার। প্রয়াত শিল্পীর শেষ সম্বল হিসেবে রয়ে গেছে মিরপুরে একটি ফ্ল্যাট।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *