নাগরিক রিপোর্ট: সাগরে মাছ ধরার উপর ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা উঠে যাচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে। অক্টোবরের শুরু পর্যন্ত নির্বিগ্নে ইলিশ আহোরনের সুযোগ পাচ্ছে জেলেরা। সে হিসাবে আগামী আড়াই মাসের জন্য ইলিশের ভরপুর মৌসুম। এ সুযোগ কাজে লাগাতে উপকূলের জেলে পাড়ায় চলছে প্রস্তুতি। যদিও বৈরী আবহাওয়ায় ইলিশ শিকারে গভীর সাগরে যেতে চিন্তায় পড়েছেন জেলেরা। মৎস্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, বিভাগের প্রায় ৩ লাখ জেলে এ মৌসুম সাগর ও নদীতে মাছ ধরতে নামছে। নিষেধাজ্ঞা শেষে এবার অভ্যন্তরীন নদী ও সাগরের মোহনায় ব্যাপক রুপালী ইলিশ পাওয়ার এখনই সময় বলে বিশেষজ্ঞরা ধারনা করছেন।
প্রাণঘাতী করোনা সংকট মোকাবেলায় এবার প্রশাসন ব্যাস্ত থাকার সুযোগে নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে ইলিশ নিধনের অভিযোগ রয়েছে উপকূলের জেলেদের বিরুদ্ধে। উপকূলের বিভিন্ন সুত্র জানিয়েছে, সাগরে মাছ ধরায় ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা অনেকটাই ছিল অকার্যকর। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে অনৈতিক চুক্তির বিনিময়ে সাগরে গিয়ে ইলিশ শিকার করেছেন জেলেরা।
এ প্রসঙ্গে, মৎস্য অধিদপ্তরের বিভাগীয় উপ পরিচালক আজিজুল হক বলেন, গত ২০ মে থেকে শুরু হওয়া গভীর সমুদ্রে সব ধরনের মাছ আহরনে ৬৫ দিনের নিষেধাজ্ঞা বৃহস্পতিবার মধ্যরাত থেকে প্রত্যাহার হচ্ছে। এর আগে জাটকা নিধন রোধে নিষেধাজ্ঞা ও ৬টি অভয়াশ্রমে নিষেধাজ্ঞাও ছিল। চলতি জুলাই থেকে অক্টোবারের মধ্য ভাগ পর্যন্ত সাগর আর নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরায় আর কোন বাধা নেই। নিষেধাজ্ঞাকালে জেলেরা গভীর সমুদ্রে গেলেও ফিরে এসে জরিমানার সম্মুখীন হয়েছে। চলমান ভরা মৌসূমে প্রায় ৩ লাখ জেলে সাগর ও নদীতে ইলিশ শিষকারে নামতে যাচ্ছে বলে তিনি জানান।
মৎস্য অধিদপ্তরের বরিশালের মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) ড. বিমল চন্দ্র দাস বলেন, বর্ষা মৌসুমে নদীতে পানি বৃদ্ধি পেলে ইলিশ সাগর ছেড়ে নদীর দিকে ছুটে। তখনই জেলেদের জালে ধরা পড়ে রুপালী ইলিশ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বৃষ্টি কমে যাওয়ায় গত কয়েকবছর যাবত নদীতে ইলিশ এসেছে বিলম্বে। এবার ব্যতিক্রম হওয়ার আশাবাদী এ মৎস্য বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, গত সোমবার আমাবশ্যার প্রভাবে উপকূলের নদ-নদী পানিতে টইটুম্বুর। এবার বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকে পর্যাপ্ত বৃষ্টি হচ্ছে। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীন নদী ও সাগরের মোহনায় বেশী ইলিশ পাওয়ার এখনই উপযুক্ত সময়।
ইলিশের আহরন বৃদ্ধির প্রমানও মেলেছে মোকামে। নগরীর পোর্ট রোড মোকামের আড়তদার অ্যাসোশিয়েনের সভাপতি অজিত দাস জানান, এবার মৌসুমের শুরু থেকেই কমবেশী ইলিশ আসছে এ মোকামে। গত বুধবার সেখানে ৪০০ মন ইলিশের আমদানী হয়। গত ১ জুলাই থেকে প্রতিদিন প্রায় ২ থেকে ৩ মন ইলিশ আসছে বলে জানান অজিত দাস। তিনি বলেন, সাগরে নামতে না পাড়লে ইলিশের আমদানী ও দাম সহনীয় হবে না। যদিও তারা ইলিশ সংরক্ষনে বরফ সংগ্রহ শুরু করেছেন। দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম ইলিশ মোকাম বরগুনার পাথরঘাটা মৎস্য অবতরন কেন্দ্রের মার্কেটিং অফিসার আহমেদ উল্লাহ জানান, গত ১ জুলাই থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত ৯১ দশমিক ৭২৪ মেট্রিক টন ইলিশ বিক্রি হয়েছে।
এবার সাগরে নিষেধাজ্ঞার শুরু থেকেই অভিযোগ ছিল প্রভাবশালী মৎস্য আড়তদাররা স্থানীয় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গভীর সাগরে ইলিশ নিধন করছে। পটুয়াখালী কলাপাড়া উপজেলা ফিসিং ট্রলার মাঝি সমিতির সভাপতি নুরু মাঝি বলেন, নিষেধাজ্ঞাকালে সাগরে ইলিশ নিধন শেষে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অবস্থান করে। সেখানে নৌকায় পাইকারী বিক্রি পর দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয় ওই ইলিশ। তিনি জানান, এ সপ্তাহের শুরুতে বৈরী আবহাওয়া শুরু হওয়ায় বেশীরভাগ ট্রলার গভীর সাগর থেকে মোকামে ফিরে এসেছে। একই ধরনের তথ্য পাওয়া গেছে বরগুনার পাথরঘাটা ও তালতলী উপজেলা থেকে।
মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, বছরে ৮ মাস বিভিন্ন মেয়াদে নিষেধাজ্ঞর সুফলও পাওয়া গেছে। বিগত দুটি মৌসুমে লক্ষমাত্রা পুরন করে দেশে ৫ লাখ ২৬৭ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ আহোরিত হচ্ছে। গত কয়েকবছর যাবত জানুয়ারী-ফেব্রয়ারীতে অপ্রত্যাশিত ইলিশ ধরা পড়ায় শীত মৌসুমে দেশে আরেকটি ইলিশ মৌসুম হতে চলছে। অধিদপ্তরের বরিশাল বিভাগীয় উপ পরিচালক আজিজুল হক বলেন, দেশে মোট লক্ষমাত্রার ৬০ ভাগ ইলিশ আহোরিত হয় দক্ষিণাঞ্চলে।