কতবার পারমিশন নেব, যতবার পারমিশন ততবার চাঁদাবাজীর শিকার- ডা. জাফরউল্লাহ

Spread the love

দেশের রাজনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে আলোচনা-সমালোচনায় নানাভাবে উঠে আসেন মুক্তিযোদ্ধা ও গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। করোনাকালেও করোনাভাইরাসের অ্যান্টিবডি ও অ্যান্টিজেনের টেস্ট কিট উদ্ভাবন ও অনুমোদন প্রক্রিয়া ঘিরে তিনি আবার আলোচনার কেন্দ্রে। তাঁকে নিয়ে সবার মধ্যে ব্যাপক কৌতূহল। সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে কালের কণ্ঠ’র মুখোমুখি হয়েছেন তিনি। ফোনে সাক্ষাৎকার নিয়েছেন তৌফিক মারুফ। গুরুত্বপূর্ন এ সাক্ষাতকারটি ডেইলি নাগরিক এর পাঠকদের জন্য হুবুহু উপস্থাপন করা হলো

কালের কণ্ঠ : সাম্প্রতিক সময়ে অ্যান্টিবডি কিট, গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের নিবন্ধন নবায়ন না করা, অনুমোদন ছাড়া আরটি-পিসিআর টেস্ট চালু, অনুমোদন ছাড়া প্লাজমা থেরাপি সেন্টার চালুসহ একের পর এক বিষয় নিয়ে জটিলতা ও বিতর্কে জড়াচ্ছেন আপনি। এর কারণ কী?

ডা. জাফরুল্লাহ : কত পারমিশন নেব। হাসপাতাল করার সময় লাইসেন্স করেছি। প্রয়োজনীয় টাকা-পয়সা দিয়েছি। এখন যদি প্রতিটা ল্যাবের জন্য আলাদা পারমিশন নিতে হয়, যন্ত্র আনতে পারমিশন নিতে হয়, সেটা স্রেফ চাঁদাবাজি ছাড়া কিছু নয়। প্রতিটা বিষয়ের জন্য আলাদা লাইসেন্স নিতে হবে কেন? তাদের বরং এসে দেখা উচিত কাজটা ঠিকমতো হচ্ছে কি না, মেশিন ঠিক আছে কি না; কিন্তু সেটা তারা দেখছে না। তাদের উচিত দাম ঠিক করে দেওয়া। তারা সেটা করছে না। সরকারি হাসপাতালে কোনো জিনিসের ট্যাক্স লাগে না, আইসিডিডিআরবির লাগে না, বারডেমের লাগে না, আমার কেন ট্যাক্স লাগে! আমার তো বড় একটা ব্লাড ট্রান্সফিউশন সেন্টার। সেটা অনুমোদিত না। সম্ভবত এটাও একটা কারণ। কিন্তু আমি ২০ বছর ধরে বলছি এই জনবল তৈরি করার জন্য; কিন্তু সেটা করছে না।

কালের কণ্ঠ : আপনি কি মনে করছেন রাজনৈতিক কারণে আপনি হয়রানি হচ্ছেন?

ডা. জাফরুল্লাহ : প্রধানমন্ত্রী আমাকে হয়রানি করছেন বলে মনে করি না। তবে উনি জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হতে যাচ্ছেন। উনি অ্যান্টিবডির মতো এত বড় ঘটনাটা নিয়ে একবারও ডেকে জিজ্ঞেস করলেন না! অ্যান্টিবডি অনুমোদন দিলে বাংলাদেশের অনেক সুনাম হতো। বিশ্বের অনেক দেশ আগ্রহ দেখিয়েছিল এই অ্যান্টিবডি নেওয়ার। ব্যাংকগুলো ডেকেছিল টাকা দেওয়ার জন্য; কিন্তু এখন আর কেউ টাকা দিতে চায় না। আমার ১০ কোটি টাকার লোকসান হয়েছে। আমি ফতুর হয়ে গেছি। তারা মনে করে, আমি তো আর হাসপাতাল বন্ধ করে দেব না; দিতে হতেও পারে। আমরা টায়ার্ড হয়ে গেছি। তাদের কোনো ন্যায়নীতির কথা বোঝানো যায় না।

কালের কণ্ঠ : ড. বিজন কুমার শীল কেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকতে পারলেন না?

ডা. জাফরুল্লাহ : আমিই ভুল করেছি। আগে আমার এখানে তিনি ২০ বছর কাজ করেছেন। এবার আসার পরে আমি খেয়াল করিনি যে তাঁর সিঙ্গাপুরের পাসপোর্টে সিল মারা রয়েছে যে তিনি এখানে কোনো কাজ করতে পারবেন না। ফলে আমাদের দেশের মানুষই ক্ষতির শিকার হলো।

কালের কণ্ঠ : যারা আরটি-পিসিআর ল্যাবের জন্য অনুমোদন নিয়েছে, তারা কি ভুল করেছে? তাদেরও কি অনুমোদন নেওয়ার দরকার ছিল না?

ডা. জাফরুল্লাহ : প্রতিটা ক্ষেত্রে যদি পারমিশন নিতে হয়, তবে সেটা হলো হয়রানি। প্রতিটা ক্ষেত্রে ঘুষ দিতে হয়। এসব হলো আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া। আর এর জন্য ভুগছে জনসাধারণ। এসবের পেছনে যত টাকা যায় তা তো আমরা রোগীদের কাছ থেকে আদায় করে থাকি।

কালের কণ্ঠ : সবাই তো আপনাকে এখন বিএনপির লোক বলে জানে; কিন্তু আওয়ামী লীগের কাছ থেকে সব সময় সুবিধা নিচ্ছেন ও পাচ্ছেন।

ডা. জাফরুল্লাহ : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হত্যার আগের দিন ১৪ আগস্ট বঙ্গবন্ধু আমাকে ৩২ নম্বরে ডেকে নিয়েছিলেন। আমি সাভার থেকে এসে চার ঘণ্টা ৩২ নম্বরে গল্প করেছি। তিনি আমাকে দুইবার চা খাইয়েছিলেন তাঁর পছন্দের বিস্কুটসহ। আমি বাকশালের আপত্তি করেছিলাম। তিনি আমার যুক্তিগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনেছিলেন। আমি তাঁর প্রতি সব সময় সম্মান জানাই, জানাব। আমি এখনো বিএনপির নেতাদের বলি, বিএনপির সব কর্মীর মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অসমাপ্ত আত্মজীবনী বিতরণ করুন, যার ভেতর অনেক কিছু জানার আছে।

আওয়ামী লীগ সরকারের কাছ থেকে বেশি সাহায্য নিলেও তারা যদি মানুষ হত্যা করে, সেটা বলব না? বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটলে সেটার বিচার চাইব না? বিএনপির সময় ‘ক্লিনহার্ট অপারেশন’ বিএনপির ভুল ছিল, আমি তো সেটাও বলেছি। আমি আওয়ামী লীগের প্রতি অকৃতজ্ঞ হতে চাই না। যেমন বঙ্গবন্ধু আমাকে ৩১ একর ভূমির দখল বুঝিয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা ১৬ একর জমি (প্রায় ৫০ বিঘা) দিলেও এখনো দখল পাইনি। উনি ১০ বছরেও জায়গারটার দখল দেননি। ওই জমিতে ক্যান্সার হাসপাতালে তো আমার মা-বাবার চিকিৎসা হতো না, দেশবাসীরই চিকিৎসা হতো। উনার এখন কী বলার আছে। এসব কথা তো আমি বলি না। আমি কি এইটা বলতেও পারব না!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *