নাগরিক রিপোর্ট: ইলিশের খনি হিসেবে পরিচিত মেঘনায় অপতৎপরতা চালানো দুস্কৃতকারীদের তালিকা আইনশৃংখলাবাহিনী ও প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। তালিকা অনুযায়ী প্রভাবশালী মৎস্য ব্যবসায়ী, মৌসুমী ব্যবসায়ী এবং জনপ্রতিনিধিদের ধরতে কঠোর ব্যবস্থার পরিকল্পনা নিয়েছে সংশ্লিস্টরা। হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জ ঘেরা মেঘনার ‘ইলিশের ষষ্ঠ অভায়শ্রম’ নিরাপদ রাখতে গিয়ে শুরুতেই বাধার মুখে পরে আইনশৃংখলাবাহিনী। নিষেধাজ্ঞার অর্ধেক সময় পেড়িয়ে গেলেও মা ইলিশের জন্য মেঘনা সুরক্ষিত করা যায়নি। মৎস্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চলমান প্রজনন মৌসুমে মেঘনার এ অভয়াশ্রমে মা ইলিশ বিচরন ব্যাপক বেড়েছে।
জানতে চাইলে বরিশাল বিভাগীয় মৎস্য অধিদপ্তরের উপ পরিচালক আনিচুর রহমান তালুকদার বলেন, কিছু কিছু দুস্কৃতকারী মেঘনায় হামলা করছে। হামলা যেখানে, সেখানে মামলাও হচ্ছে। তিনি বলেন, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ এলাকার ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম সুরক্ষায় কঠোর হচ্ছে প্রশাসন। মৎস্য অধিদপ্তর প্রশাসনকে দুস্কৃতকারীদের তালিকাও দিয়েছে। হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বাউফলের মৌসুমী জেলেদের বিরুদ্ধে অচিরেই একশন দেখা যাবে বলে জানান উপ পরিচালক আনিচুর রহমান।
চাঁদপুর ইলিশ গবেষনা ইনষ্টিটিউটের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. আনিছুর রহমান বলেন, বাংলাদেশের জলসীমাকে মাতৃভূমির মতো বেছে নিয়েছে ইলিশ। যেকারনে মেঘনাসহ এ অঞ্চলের নদীনদীতে সবচেয়ে বেশী ইলিশ পাওয়া যায়। তিনি বলেন, ইলিশ সারা বছর ডিম দিলেও ৮০ ভাগ ইলিশের পেটে আসে আশ্বিন মাসে নিষেধাজ্ঞাকালে। এই বিশেষজ্ঞের তথ্যানুযায়ী ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রমে এবার ডিম ছাড়তে কি পরিমান মা ইলিশ প্রবেশ করেছে- এ প্রসঙ্গে মৎস্য কর্মকর্তা (হিলসা) ড: বিমল চন্দ্র দাস বলেন, এবারও মেঘনাসহ এ অঞ্চলের নদীগুলোতে প্রচুর ইলিশ ডিম ছাড়তে প্রবেশ করেছে।
কিন্তু সেই মেঘনা সুরক্ষা না হওয়ায় নিষেধাজ্ঞার পর থেকেই দেদাড়ছে চলছে মা ইলিশ নিধন। সর্বশেষ তথ্যমতে, জেলায় মোট ২৯৪জনকে কারাদন্ড দেয়া হয়েছে। কোনভাবেই থামানো যাচ্ছে না জেলেদের। ইতোমধ্যে হিজলায় ৩ বার এবং মেহেন্দীগঞ্জে ২ বার পুলিশ ও প্রশাসনের উপর হামলা করেছে মৌসুমী জেলেরা। এমনকি গুলিবর্ষন করেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। জানা গেছে, এদের আশ্রয়প্রশ্রয় দিচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী মৎস্যব্যবসায়ী এবং জনপ্রতিনিধিরা। স্থানীয় থানা পুলিশ ও কোস্ট গার্ডের গা ছাড়া ভাব এজন্য দায়ী বলে সংশ্লিস্টরা জানান।
মৎস্য অধিদপ্তরের দায়িত্বশীল সুত্রে জানা গেছে, ৬ষ্ঠ অভয়াশ্রম ঘিরে মৌসুমী জেলে এবং তাদের শেল্টার দাতাদের তালিকা ইতোমধ্যে প্রশাসনকে দেয়া হয়েছে। তালিকায় হিজলা ও মেহেন্দীগঞ্জের বেশ কয়েকজন চিহিৃত মৎস্য ব্যবসায়ী, চেয়ারম্যান এবং রাজনৈতিক নেতা রয়েছেন। আইনশৃংখলাবাহিনী এদের ধরতে গোপনে অভয়াশ্রম সংলগ্ন হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জে কাজ করছে।
এ প্রসঙ্গে মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, জনপ্রতিনিধিদের মা ইলিশ নিধনে শুরুতে হস্তক্ষেপ দেখা দিলেও এখন নেই। তাদের দলীয়ভাবেই বহিস্কারের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, বিশাল মেঘনা নিয়ন্ত্রন করা কঠিন। অপরদিকে হিজলা মৎস্য কর্মকর্তা আব্দুল হালিম বলেন, হামলাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। তাদের ধরতে মেঘনায় অভিযান কঠোর হচ্ছে।
এব্যপারে হিজলা নৌ পুলিশের ওসি বেল্লাল হোসেন বলেন, জনবল সংকটে ইলিশ নিধনের নিষেধাজ্ঞা শুরুর পর মেঘনায় পুরোপুরি কার্যকর করতে পারেননি। ইলিশ নিধনে বাঁধা দিতে গিয়ে পুলিশ বাহিনী জেলেদের হামলারও শিকার হয়েছে। মঙ্গলবারও মেঘনায় হামলা মোকাবেলায় নৌ পুলিশ ৪ রাউন্ড গুলি করেছে।